আরকাইম (Arkaim) হল রাশিয়ার দক্ষিন উরাল স্তেপ অঞ্চলের আমুরস্কি গ্রামের নিকট অবস্থিত একটি প্রত্নকেন্দ্র।
আরকাইম মধ্য-ব্রোঞ্জ যুগের একটি সুরক্ষিত জনপদ নিয়ে গঠিত, যা ৩৮-৪০ হাজার বছর পূর্বে গড়ে উঠেছিল। আরকাইম ছিল একটি গোলাকার কেল্লাস্বরুপ যা পাকা ইঁট দিয়ে নির্মিত সমকেন্দ্রিক বুরুজ সহ ১৫০০ থেকে ২৫০০ মানুষের বসবাসের স্থান ছিল।
মনুষ্য বসতি পরিবেষ্ঠনকারী ২০০০০ বর্গ মিটারের বুরুজগুলিতে (bastions) অগ্নিকুন্ড, ভূগর্ভস্থ ভান্ডার, কূপ এবং এমনকি ধাতব চুল্লির চিহ্নও পাওয়া গেছে। প্রতিটি বাড়ি একটি কাষ্ঠ নির্মিত গোলাকার রাস্তায় উন্মুক্ত হত যা সমান্তরালভাবে বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য নর্দমার কূপগুলির সাথে নির্মিত হয়েছিল। পুরো বসতিটি ২৫ × ২৭ মিটার মাপের একটি উন্মুক্ত প্রাঙ্গনকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছিল যা উৎসব ও সন্মেলনের জন্য ব্যবহৃত হত


আরকাইম প্রত্নকেন্দ্রটিকে একটি প্রাচীন ‘প্রকল্পিত’ প্রায় ইন্দো-ইরানীয়দের সাথে সংযুক করা হয় যারা পরবর্তী খ্রিঃ পূঃ তৃতীয় সহস্রাব্দের সময়ে এখানে বসবাস করত বলে মনে করা হয় এবং এরা প্রায়শই ইউরেশিয়ান স্তেপীয় সিনটাস্থা (Sintastha) সংস্কৃতি ও প্রাচীন এ্যন্ড্রোনোভো (Andronovo) প্রত্নতাত্ত্বিক সীমারেখার সাথে সংযুক্ত ছিল বলে অনুমান করা হয়।
অনেক পন্ডিত ঝুঁকিপূর্ণভাবে মন্তব্য করেছেন যে জনপদের এই সমকেন্দ্রিক নকশা ছিল ‘মহাজগতের অনুকরন’ যা প্রাচীন আর্য/ইরানী আধ্যাত্মিক সাহিত্য, বেদ ও আবেস্তায় বর্ণিত হয়েছে এবং ঋকবেদে বর্নিত রাজা য়িম (Yima) (শাহনামা অনুযায়ী পিষদদিয়ান (Pishdadian) রাজবংশের চতুর্থ শাহ) –এর নগরকে প্রতিফলিত করে।
প্রাথমিকভাবে ১৯৫২ সালে বায়বীয় মানচিত্রকরদের তোলা চিত্রে আরকাইম জনপদকে দক্ষিন উরাল স্তেপ অঞ্চলে অসম গোলকসমূহ হিসেবে দেখা গিয়েছিল এবং আরকাইম ১৯৮৭ সালের Gennady Zdanovich এর নেতৃত্বে এক প্রত্নতাত্বিক দল আবিস্কার করেছিল এবং এই প্রত্নতাত্বিক দল একটি জলাধার নির্মানের জন্য বোলষায়া কারগাঙ্কা ও উত্যাগাঙ্কা নদীর সঙ্গমস্থলে উপত্যকার প্রত্নতাত্বিক মূল্য সমীক্ষার জন্য প্রেরন করা হয়েছিল; কারন এর ফলে এই অঞ্চলটি জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল ও এখানকার প্রত্নতাত্বিক নির্দশনসমূহকে নিমজ্জিত করেছিল।


এই প্রত্নতাত্বিক দল এই অঞ্চলের স্মৃতিসৌধ সংরক্ষনের আবেদন করেছিল ও এর জন্য জন সমর্থন গড়ে তুলেছিল। ১৯৯১ সালের এপ্রিলে মন্ত্রীপরিষদ সরকারিভাবে এই জলাধার নির্মান বাতিল ঘোষনা করেছিল (অংশত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের দরুন) এবং আরকাইমকে একটি ‘ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক জাদুঘর’ হিসেবে ঘোষনা করেছিল।
Lands of Town’ নামে পরিচিত দক্ষিন উরাল থেকে উত্তর কাজাকস্থান পর্যন্ত এক বৃহত্তর অঞ্চলে একই ধরনের কাঠামোয় অন্যান্য ২০টির বেশি জনপদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

অনুবাদ : অধ্যাপক শুভজিৎ আওন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.