অত্যন্ত দুঃখের সাথে সমস্ত স্বয়ংসেবকদের কে জানাচ্ছি যে শেওড়াফুলি নগরের ভীষ্ম পিতামহ সম ও প্রাক্তন সহ-প্রান্ত কার্যবাহ মাননীয় শৈলেন্দ্র নাথ সিংহ মহাশয় গতকাল রাত্রি 12.30 টায় পরলোক গমন করেছেন।

ওনার জন্ম অভিবক্ত বঙ্গদেশের নবদ্বীপ ধাম এ 1926 সালে। স্বর্গীয় কালিদাস বসু যখন বিদ্যার্থী বিস্তারক হয়ে নবদ্বীপে যান, সেই সময় ওনার হাত ধরেই নবদ্বীপে প্রথম শাখার প্রতিষ্ঠা হয়, সেই শাখাতেই সঙ্ঘ প্রবেশ ঘটে শৈলেন দার। এরপর সঙ্ঘ কাজে সক্রিয় হওয়া, বেনারস এ প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষ সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গ সম্পন্ন করার পর  1945 সালে নাগপুরে তৃতীয় বর্ষ সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গ করেন। তৃতীয় বর্ষ থেকে ফেরার পর দীর্ঘ দিন প্রচারক হিসাবে সঙ্ঘের কাজ করেছেন। এমন কি অবিভক্ত বঙ্গদেশের ময়মনসিংহ জেলাতেও তিনি প্রচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে দেশ বিভাজনের পরে “বাস্তু হারা সহায়তা সমিতির” মাধম্যে উদ্বাস্তু হিন্দু বাঙালীদের আশ্রয় দান তথা সম্ভ্রম রক্ষার্তেও ওনার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। 

বাংলায় সঙ্ঘ কার্যের বৃদ্ধিতে ওনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অপরিসীম। পশ্চিমবঙ্গের(উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গ) প্রান্ত সম্পর্ক প্রমুখ, সহ-প্রান্ত কার্যবাহের দায়িত্ত্ব পালন করেছেন।

এতটাই সঙ্ঘ অন্তপ্রাণ কার্য্কর্তা ছিলেন যে, ওনার বিবাহের বধূ বরণের দিন সকালেও উনি প্রবাসে বের হন এবং ফেরেন অনুষ্ঠান শুরু হবার পর অনেক রাত করে। এই ভাবে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত নিজের শেষ বিন্দু দিয়েও সঙ্ঘ কাজ করে গেছেন। কিছুদিন আগে পর্যন্তও হাতে লাঠি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্রবীণ স্বয়ংসেবক দের সাথে সম্পর্ক, কেশব ভবনে গিয়ে বরিষ্ঠ প্রচারক দের সাথে দেখা করে আসতেন। এমনকি তাঁতিবেরিয়াতে সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গের সমারোপেও ওনাকে প্রায় প্রতি বছরই দেখা যেত।

প্রত্যেক স্বয়ংসেবক এর গুনবত্তা ও সংগঠন বিদ্যা বিকাশের দিকেও ওনার নজর থাকত এই বয়সেও, ওনার যখন 85 বছর বয়স, তখনও উনি শাখার মাঠে আমায় দন্ড শিখিয়েছেন, নিজের সংগৃহীত বহু দুর্লভ বই উনি স্বয়ংসেবকদের দিতেন পাঠ করার জন্য, এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই বিষয়ে তিনি সচেষ্ট ছিলেন।

লক ডাউন শুরুর পূর্বে উনি আর জ্যেঠিমা আসানসোলে ছোট ছেলের বাড়ি যান, পাঁচ দিন আগে ফুসফুসে infection, জ্বর ও জন্ডিস নিয়ে সেখানেই নার্সিং হোমে ভর্তি হন, অবশেষে কাল রাতে তাঁর জীবন প্রদীপ নিভে গেল। যদিও সেই প্রদীপ নিভে যাওয়ার পূর্বে তিনি অগণিত স্বয়ংসেবক এর হৃদয়ে সঙ্ঘ রূপী রাষ্ট্র কাজের প্রদীপ জ্বেলে গেছেন। তার জীবনের শেষ মুহূর্তের দর্শন পেলাম না, এই ক্ষেদ নিয়েই জীবনের বাকি দিন গুলো কাটাতে হবে।

আজ সত্যি একটি যুগের অবসান হলো। চলে যাওয়ার আগে তিনি তার স্ত্রী, দুই পুত্র, এক কন্যা ও নাতি, নাতনীদের রেখে গেলেন। 

পিতৃ সম জ্যেঠু আজ আর এই ভারত ভূমিতে নেই। তিনি তার চক্ষে প্রাতঃস্মরণীয় ডাক্তার জী ছাড়া সকল সর সংচালকের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন, আজ তার সেই ইচ্ছাও সম্পূর্ণ হলো। ঈশ্বরের নিকট ওনার পুণ্যআত্মার শান্তি ও সদগতির প্রার্থনা করি ও প্রার্থনা করি যেন এই ভারত ভূমিতে জন্ম গ্রহন করে পুনরায় স্বয়ংসেবক হয়ে ভারত মায়ের সেবায় রত হবেন।

Debangshu Kumar Pati

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.