লোকসভা ভোটে প্রথম বার বাংলায় প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের গলায় ভূপতিনগর নিয়ে শাস্তির নিদান। বালুরঘাট এবং মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার, খগেন মুর্মুর সমর্থনে আয়োজিত সভায় বঙ্গবাসীকে আশ্বস্ত করে শাহ বললেন, ‘‘সবাইকে উল্টো করে টাঙিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে, আপনারা চিন্তা করবেন না।’’ শাহের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও।
২০২২ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। ২০২৩ সালের গোড়ায় হাই কোর্ট এনআইএকে বিস্ফোরণের তদন্ত করতে বলে। সেই মামলায় গত শনিবার ভূপতিনগরে দুই অভিযুক্তকে তুলে আনতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে এনআইএ। এনআইএর গাড়ির কাচ ভাঙা হয়। আহত হন এক এনআইএ আধিকারিক। তৃণমূলের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিজেপি এনআইএকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের ভোট সংগঠকদের গ্রেফতার করাচ্ছে। এ বিষয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদলের দাবি, আসানসোলের বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হওয়ার পর এনআইএর এসপি ধন রাম সিংহের নিউটাউনের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছিলেন। ঢোকার সময় জিতেন্দ্রের হাতে ছিল একটি সাদা প্যাকেট, বেরনোর সময় অবশ্য তাঁর হাতে ওই প্যাকেট দেখা যায়নি। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই প্যাকেটে ছিল অর্থ। কেন্দ্রীয় এজেন্সিটিকে তৃণমূলের ভোট সংগঠকদের তালিকা তুলে দিয়েছে বিজেপি। তার ভিত্তিতেই এনআইএ তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করছে। ঠিক যেমন ঘটল ভূপতিনগরে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও একাধিক নির্বাচনী সভা থেকে একই অভিযোগ করছেন। কমিশনে নালিশও জানিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জিতেন্দ্র সাত দিন সময় দিয়েছেন, বক্তব্য প্রত্যাহার করা না হলে মানহানির মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন শাহ। অভিযোগ করলেন, মমতা বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, যাঁরা দোষী তাঁদের উল্টো করে টাঙিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে। মোদীর ডেপুটি বলেন, ‘‘একটি বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল ২০২২ সালে ভূপতিনগরে। তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল। আমাকে বলুন ভাই, বোমা বিস্ফোরণ যাঁরা করিয়েছিলেন, তাঁদের জেলে ভরা উচিত কি না? এর তদন্তের ভার হাই কোর্ট এনআইএকে দিয়েছিল। মমতা দিদি, এনআইএর উপর মামলা করে বিস্ফোরণ যাঁরা করেছিল, তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। মমতা দিদি, লজ্জা করুন! আপনি বোমা বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের বাঁচাতে চান? বঙ্গবাসী চিন্তা করবেন না। হাই কোর্ট এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সবাইকে উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে, আপনারা চিন্তা করবেন না।’’
শাহের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল। মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, বাংলায় বিজেপি বলে কিছু নেই। তাই তৃণমূলকে লড়তে হচ্ছে ইডি, এনআইএ, সিবিআই— কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হওয়ার পরে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি প্যাকেট হাতে এনআইএ এসপি ধন রাম সিংহের বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর দিন অমিত শাহ। তৃণমূলের কাকে গ্রেফতার করতে হবে সেই তালিকা এনআইএকে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে আমাদের অভিযোগ। শুনেছি, ধন রাম সিংহকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁর জায়গায় অন্য কেউ দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু পদক্ষেপ চাই। এ সবে হবে না।’’
শাহ বুধবার সন্দেশখালি নিয়েও আক্রমণ করেছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনা নিয়েও আপনি রাজনীতি করছেন। আপনার নাকের ডগায় এত বছর ধরে এই কাজ চলে আসছে। হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পর অপরাধী আত্মসমর্পন করেছে।’’ এর পরে তিনি এমনটাও বলেন যে, ‘‘তৃণমূলকে জেতানোর মানে হল সন্দেশখালির মত ঘটনা হওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া। তাদের শাস্তি দেওয়ার ভোট। আপনারা এত জোরে বোতাম টিপবেন যাতে বালুরঘাটে বোতাম টিপলে কলকাতায় কারেন্টের শক লাগে মুখ্যমন্ত্রীর।’’