ছ’দিন পর আবার পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নামছেন অভিনেত্রী তথা যুব তৃণমূল সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। গত শুক্রবারের পর আগামী বুধবার ফের তাঁকে জেরার জন্য তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার ঠিক একদিন আগে তাঁকে তৃণমূলের হয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে অংশ নিতে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা। মঙ্গলবার তৃণমূলের প্রচারকারীদের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে নাম রয়েছে এই অভিনেত্রীর। মঙ্গলবার তিনি প্রচার করবেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের করাজগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত ও সিংহী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। ঘটনাচক্রে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে পূর্ব বর্ধমান জেলারই মন্তেশ্বরের শেষ বার প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
শুক্রবার ইডির জেরার পর মাঝের কয়েকদিন সায়নীকে প্রচারকারীদের তালিকা থেকে বাদ রেখেছিল তৃণমূল। কিন্তু যেদিন সায়নীকে আবার ডেকেছে ইডি, তার আগের দিন তাঁকে প্রচারে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দল। তৃণমূলের অন্দরে যা নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। যে আলোচনার নির্যাস— তাঁকে প্রচারে পাঠিয়ে দলের শীর্ষনেতৃত্ব সায়নীকে এই বার্তাই দিতে চাইছেন যে, তাঁরা তাঁর পাশে আছেন। পাশাপাশিই অনেকের বক্তব্য, সায়নী নিজে নিশ্চিত যে, তাঁকে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে ফেলা যাবে না। তিনি দলকেও তা জানিয়েছেন। ইডির জেরার পরেও তাঁকে আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। ফলে তাঁকে প্রচারে না-পাঠানোর কোনও কারণ নেই। দলের অনেকে বলছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সায়নীকে ডেকে জেরা করে ইডি তথা কেন্দ্রীয় সরকার যে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ করছে, সেটা জনতাকে বোঝাতে হবে। অর্থাৎ, বিজেপির উপর ‘পাল্টা চাপ’ তৈরি করা।
দলের একাংশের বক্তব্য, বুধবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দেওয়ার আগে সায়নীকে আরও নথিপত্র জোগাড় করতে হচ্ছিল। তাই কয়েকদিন তাঁকে প্রচারে দেখা যায়নি। সেসব তথ্য এবং নথি জোগাড়ের কাজ শেষ হয়েছে সায়নীর। তার পর তাঁর সঙ্গে কথা বলেই আবার তাঁকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। এখন দেখার, মঙ্গলবার প্রচারে গিয়ে সায়নী কী বলেন।
গত মঙ্গলবার সায়নীকে হাজিরার নোটিস পাঠায় ইডি। ওই দিন তিনি পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মাঝেরগ্রামে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। ভোটের প্রচারে থাকাকালীনই ইডির নোটিসের প্রসঙ্গে জানতে পারেন সায়নী। ওই দিন রাতে সমাজমাধ্যমে নিজের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়ার ছবিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। পর দিন বুধবার তাঁর প্রচারসূচি ছিল পূর্ব বর্ধমানে জামালপুর বিধানসভা এলাকায়। কিন্তু বুধবার নোটিসের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সায়নীকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। পূর্ব বর্ধমানের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারেও যাননি তিনি। বৃহস্পতিবার ইদ উৎসবের কারণে তৃণমূলের তারকা প্রচারকরা প্রচারে নামেননি। তাই মঙ্গলবারের পর কার্যত বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন সায়নী। তার পর তাঁকে একেবারে দেখা গিয়েছিল শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে।
শুক্রবার অনেক রাত পর্যন্ত জেরার পর বেরিয়ে সায়নী জানিয়েছিলেন, তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করবেন তিনি। যতবার ডাকা হবে তদন্তের স্বার্থে ততবারই আসবেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়েছিলেন, বুধবার আবারও তাঁকে ডেকেছে ইডি। এর পর শনি, রবি এবং সোমবার তৃণমূলের প্রচারকারীদের যে নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে নাম ছিল না সায়নীর। তাই পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে সায়নীকে আবার দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার আবার সায়ানীকে প্রচারে পাঠানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আগামী শনিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। প্রচার শেষ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায়। বুধবার ইডির দফতরে গেলে সায়নী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। আবার তিনি প্রচারে যেতে পারবেন বৃহস্পতিবার। তৃণমূলের একটি অংশের মতে, বুধবারের আগের দিন সায়নীকে প্রচারে পাঠিয়ে জনসমক্ষে আরও একটি বার্তা দিতে চাইছে শাসকদল। যে, সায়নীকে ইডির জেরার বিষয়টি নিয়ে দল আদৌ চিন্তিত নয়।