ফি বছর বৈশাখে তীব্র গরম থাকে রাঢ়বঙ্গে। গত কয়েক দিন রাজ্য জুড়ে চলা তাপপ্রবাহে সেই উষ্ণতা আরও কিছুটা বাড়িয়েছে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়িয়ে তুলছে অস্বস্তি সূচক। এই অস্বস্তিকর আবহাওয়ার মধ্যে সেই শুক্রবার থেকে টানা মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে রয়েছে সিবিআই আধিকারিকদের একটি দল। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এসে এখন বিধায়কের ছুড়ে ফেলা দ্বিতীয় মোবাইল ফোনটি খুঁজছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। ক্ষণে ক্ষণে জিজ্ঞাসাবাদও চলছে। তার মাঝে শরীরটাকে তো ঠিক রাখতে হবে। শুক্রবার থেকে সকল এবং সন্ধ্যায় নিয়ম করে শসা খাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। স্থানীয় বাজার আসছে সেই শসা। তবে নুন কিন্তু জীবনকৃষ্ণেরই (বাড়ির)। সূত্রের খবর, সিবিআই আধিকারিকদের শসা খাওয়ার সময় দরকার মতো নুন আসছে জীবনের হেঁসেল থেকে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দু’টি দলের মোট ১২ জন তদন্তকারী আধিকারিক তৃণমূল বিধায়ককে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তল্লাশি চলছে জীবনকৃষ্ণের একাধিক ঘর এবং অফিসে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র। তৈরি হচ্ছে সিজ়ার লিস্ট। প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে চলা এই টানা অভিযানে সিবিআই আধিকারিকদের খাওয়া-দাওয়ায় একটু অনিয়ম হচ্ছে বৈকি।
শনিবার থেকে নিজেদের প্রাতঃরাশ এবং নৈশভোজের একটা ব্যবস্থা করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সেই খাবার আসছে বিধায়কের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরের একটি হোটেল থেকে। তবে সকালের চা-জলখাবার বা সন্ধ্যায় টুকিটাকি খাবারদাবার জীবনকৃষ্ণের বাড়ি থেকেই দেওয়া হচ্ছে বলে খবর। এ-ও জানা যাচ্ছে, ‘অতিথিদের’ প্রয়োজন মতো পানের জন্য ঠান্ডা জলও দিচ্ছেন জীবনের পরিবার। সিবিআই কর্তাদের কথায় নাকি একটি মাটির কলসিতে জল ভরে দেওয়া হয়েছে। সেটি আছে তদন্তকারীরা যে ঘরে অস্থায়ী ভাবে থাকছেন, সেখানে।
সূত্রের খবর, দু’জন ডায়াবেটিস আক্রান্ত কেন্দ্রীয় আধিকারিকের জন্য তেতো সুক্ত সম্বলিত ‘লো-কার্ব’ ডায়েটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন জীবন নিজেই। সিবিআই আধিকারিকরা যে ঘরটিতে থাকছেন সেখানে একটি বড় ‘স্ট্যান্ড ফ্যান’ বসিয়ে দিয়েছেন বিধায়ক।
সিবিআই সূত্রে খবর, প্রথম দিকে তদন্তে অসহযোগিতা করলেও শনিবার বিকেল থেকে তদন্তকারীদের পূর্ণ সহযোগিতা করছেন জীবনকৃষ্ণ। সারা রাত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। আবার তার মাঝেই আধিকারিকদের সঙ্গে উঠোনে বসে অন্য গল্পও করছেন বিধায়ক। রাতে খানিক বিশ্রামের পর সকালে বিধায়কের বাড়ির দেওয়া লিকার চা এবং বিস্কুট খেয়ে আবার শুরু হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ। রবিবার যেমন সকাল ৮টা নাগাদ বিধায়ককে পুকুরপাড়ে এনে খুঁজে পাওয়া মোবাইল শনাক্তকরণের পর মোবাইল ছুড়ে ফেলার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রে খবর, শনিবারের জীবনের চোখেমুখে যে উৎকণ্ঠার ভাব ছিল রবিবার তা কেটে গিয়েছে অনেকটা। রবিবার দুপুর পর্যন্ত চলছে জীবনের আরও একটি মোবাইল ফোনের খোঁজ।