বিশ্বকাপে আরব্য রজনী, মেসির গোলেও জয় এল না, আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিরাট অঘটন সৌদির

পারলেন না লিয়োনেল মেসি। পারলেন না দলকে জেতাতে। তিনি নিজে গোল করলেও হেরে গেল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে গেলেন মেসিরা। সৌদির রক্ষণে বার বার আটকে গেলেন মেসি, দি মারিয়ারা। অনবদ্য সৌদির গোলরক্ষক আলওয়াইসি। গোলের নীচে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তাঁকে টপকাতে পারলেন না আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকাররা। নিজেদের সবটা নিংড়ে দিলেন সৌদির ফুটবলাররা। বুঝিয়ে দিলেন, নাম নয়, মাঠে নেমে খেলাটাই আসল।

ম্যাচের শুরুটা ভাল করে আর্জেন্টিনা। নিজেদের মধ্যে বল ধরে ছোট ছোট পাসে উঠছিলেন মেসিরা। তার ফলে সুযোগও তৈরি হয়। প্রথম ২ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। ডান প্রান্তে বল পেয়ে বক্সের কাছে এসে লাউতারো মার্তিনেজের দিকে বাড়ান দি মারিয়া। মার্তিনেজের ব্যাক হিল ধরে বাঁ পায়ের মাটি ঘেঁষা শটে গোল করার চেষ্টা করেন মেসি। কিন্তু গোড়ালির দিকে বল লাগায় ঠিক জায়গায় বল যায়নি। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন সৌদির গোলরক্ষক।

তাতে অবশ্য গোল পেতে সমস্যা হয়নি আর্জেন্টিনার। খেলা শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। পেনাল্টি থেকে গোল করেন তিনি। ভার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেন রেফারি। গোল করতে কোনও ভুল করেননি মেসি। প্রথমার্ধে আরও তিনটি গোল করতে পারত আর্জেন্টিনা। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হল সেগুলি। প্রথমে ২২ মিনিটের মাথায় সৌদি আরবের জালে বল জড়ান মেসি। কিন্তু লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা তোলেন। মেসির উদ্দেশে যখন বল বাড়ানো হয়েছিল, তখনই অল্পের জন্য অফসাইডের ফাঁদে ছিলেন তিনি। তাই গোল বাতিল করেন রেফারি।

পাঁচ মিনিট পরে আরও এক বার গোলে বল জড়ায় আর্জেন্টিনা। এ বার গোল করেন লাউতারো মার্তিনেজ। প্রথমে গোল দিয়ে দেন রেফারি। কিন্তু পরে ভার প্রযুক্তির সাহায্যে দেখা যায় অফসাইডে ছিলেন মার্তিনেজ। তাই গোল বাতিল হয়। একটু গা-জোয়ারি ফুটবল খেলছিল সৌদি আরব। মেসিকে জোনাল মার্কিংয়ে রাখার চেষ্টা করছিল তারা। তাই বার বার জায়গা বদল করে খেলছিলেন মেসি। ৩৪ মিনিটের মাথায় মেসির পাস থেকে আবার গোল করেন মার্তিনেজ। কিন্তু সেটিও অফসাইডের কারণে বাতিল করেন রেফারি। প্রথমার্ধেই অফসাইডের কারণে আর্জেন্টিনার তিনটি গোল বাতিল হয়।

দ্বিতীয়ার্ধে বদলে গেল খেলার ছবি। প্রথম ১০ মিনিটেই জোড়া গোল করে এগিয়ে যায় সৌদি আরব। আর্জেন্টিনার রক্ষণের ভুলে ৪৮ মিনিটের মাথায় গোল করেন সালে আলশেহরি। সমতা ফেরায় সৌদি আরব। গোল করার পরে খেলার ধরন পুরোপুরি বদলে গেল সৌদির। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে তারা। প্রথম গোল খাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় গোল খায় আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে বল পেয়ে ডান পায়ের দুরন্ত শটে গোল করেন সালেম আলদাওশারি। ১-২ গোলে পিছিয়ে পড়েন মেসিরা।

গোল শোধ করার অনেক চেষ্টা করছিল আর্জেন্টিনা। বার বার সৌদির অর্ধে উঠে আসছিল তারা। কিন্তু গোলের মুখ খুলছিল না। সোদির ফুটবলারদের সঙ্গে শারীরিক লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছিল আর্জেন্টিনা। গোলের নীচে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌদির গোলরক্ষক আলওয়াইসি। বেশ কয়েকটি ভাল শট বাঁচান তিনি। সময় যত এগোচ্ছিল, তত চাপ বাড়ছিল আর্জেন্টিনার উপর।

শেষ দিকে বক্সের মধ্যে ঢুকে কিছু সুযোগ তৈরি করলেও গোল আসেনি। পায়ে বেশি ক্ষণ বল রাখার খেসারত দিলেন মেসিরা। সেই সঙ্গে অজস্র অফসাইডের ফাঁদে আটকে পড়লেন মার্তিনেজরা। অতিরিক্ত সময়ে গোললাইন সেভ করেন সৌদির ফুটবলার। শেষ পর্যন্ত হেরে মাঠ ছাড়তে হয় মেসিদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.