পাঁচ বছরে রাজ্য ছেড়েছে ২২২৭ সংস্থা! সরকারি তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই শুরু বিতর্ক

রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে বহু দিন থেকেই প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল। আইন-শৃঙ্খলার পরিবেশ-সহ কিছু বিষয় রয়েছে তাদের আতসকাচের তলায়। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী হর্ষ মালহোত্র সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে গত পাঁচ বছরে বাংলা থেকে ২২২৭ সংস্থা দফতর সরিয়ে নিয়েছে বলে জানাতেই, তা নতুন করে উস্কে দিল বিতর্ক। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সরে যাওয়া সংস্থাগুলির মধ্যে ৩৯টি শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত।

এই প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। একাংশ মনে করছেন, কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য বিস্তারিত না জেনে মন্তব্য করা ঠিক নয়। অন্য অংশের অবশ্য দাবি, রাজ্যের পরিস্থিতি যে নেতিবাচক তা ফের স্পষ্ট হল। যেমন, শিল্প বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদ সুপর্ণ মৈত্র বলেন, ‘‘৩৪ বছরের বাম শাসন এবং ১৩ বছরের তৃণমূল শাসনে রাজ্যে একটিমাত্র বিষয় তৈরি হয়েছে। তা হল, শিল্প সংস্থাগুলির চলে যাওয়া। সেটাই আবার প্রমাণ হল। যে রাজ্য বেশি সুবিধা দেয়, শিল্প সংস্থা সেখানে চলে যায় এবং থাকে। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই। এর থেকে স্পষ্ট হচ্ছে এ রাজ্যে তাদের সুবিধা মেলার ছবিটা।’’ তাঁর মতে, যদি রাজ্য থেকে বড় সংস্থা চলে যায়, তা হলে তার পরিপূরক পাওয়া খুব শক্ত। এই ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রতি সংস্থার আনুগত্যের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে
করেন তিনি।

অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরীর অবশ্য বক্তব্য, গত পাঁচ বছরে সরে যাওয়া ওই সংস্থাগুলি কত লগ্নি করেছিল, কোন ক্ষেত্রে তারা কাজ করত ইত্যাদি না জেনে মন্তব্য করা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘যদি ওই সংস্থাগুলি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয় তা হলে বলব, এই সরে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কারণ, এই রকমই হয়ে থাকে। পাশাপাশি, এই পাঁচ বছরের তুলনায় তার আগের পাঁচ বছরের তথ্যের তুলনা না টানলেও কোনও সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল।’’ অজিতাভের কথায়, ‘‘অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী এমন হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। এই তথ্য দেখে রাজ্যের শিল্পায়ন নিয়ে কিছু বলা যায় না।’’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পপতির দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য রাজ্যের বর্তমান শিল্প পরিস্থিতিকেই চিহ্নিত করছে। তিনি বলেন, ‘‘নতুন শিল্প আসার ক্ষেত্রে অবস্থা করুণ। ফলে পুরনো সংস্থার এসেও চলে যাওয়া সত্যিই হতাশাজনক।’’ এক শিল্পকর্তার আক্ষেপ, ‘‘বড় জমি পাওয়া নিয়ে একটা সংশয় ছিলই। এ বার ফের নানা প্রশ্ন তৈরি হল রাজ্যের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে। যা ভবিষ্যতকেও অনিশ্চিত করতে পারে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.