১৮৬৯-এ শিয়ালদহ স্টেশন চালু হতেই শুরু হল প্যাসেঞ্জার আর মালগাড়ির হররা। প্যাসেঞ্জারদের জন্য না-হয় পালকি ছিল, ছ্যাকড়া গাড়ি ছিল। বখেড়া হল মালগাড়ির মাল নিয়ে। কারণ, গোডাউনগুলো তো সব সেই গঙ্গার ধারে, আর্মেনিয়ান ঘাটের আশেপাশে। সেখানে মাল নিয়ে যেতে ভরসা ছিল একমাত্র গরুর গাড়ি। কিন্তু স্টেশনের সমস্ত মাল বইতে পারে এত গরুর গাড়িই বা তখন কোথায়। উনিশ শতকের শুরুতেই ওয়ালশে অবশ্য ঘোড়ায় টানা মালবাহী ট্রাম চালিয়ে এমন সমস্যার সমাধান করেছে খোদ ইংরেজরাই। কাজেই এ-দেশে এক্ষেত্রেও তারা সে-জিনিস আমদানি করে বখেড়া মিটিয়ে ফেলতে চাইল।
সুতরাং, ১৮৭৩-এ লাখ দেড়েক টাকা খরচ করে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বউবাজার হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট অব্দি মিটারগেজ লাইন পাতা হয়ে গেল। ঘটা করে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এই রুটে ট্রামও চালু হয়ে গেল। ভালোই চলছিল। কিন্তু এসময় রেলের চিৎপুর ইয়ার্ড চালু হতেই গণ্ডগোল বাঁধল। মালগাড়িগুলো সব শিয়ালদহের লাইন ছেড়ে সেখানেই ঢুকতে লাগল। তখন মাল না-পেয়ে শুরু হল ট্রামের লোকসান। এবার মাল ছেড়ে তারা তুলতে লাগল প্যাসেঞ্জার। তবু এ-রুটে তাদের কিছুতেই ঘাটতি মিটল না। মাত্র ন’মাসের মাথায় ২০ নভেম্বর এই ট্রাম বন্ধ হয়ে গেল। পড়ে রইল ছ’বছর। তারপর আজকের ট্রাম কোম্পানির হাত ধরে ১৮৭৯ সালের ২ অক্টোবর প্যাসেঞ্জার-ট্রাম হিসেবে ফের তা চালু হল। সেই থেকে ধীরে ধীরে ঘোড়া ছেড়ে স্টিম, স্টিম ছেড়ে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনে ভর করে, ধিকিধিকি সে আজও চলছে।