নষ্ট প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে আগামী প্রজন্ম বাঁচানোর বার্তা প্রধান শিক্ষকের

বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক বর্জনের দাবি উঠছে। গ্রাম্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকও সেই কাজে লেগে পড়েছেন। শুধু দাবি নিয়ে কথায় নয়, কাজে করে।দেখাচ্ছেন তিনি। বানিয়ে ফেলেছেন ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন দিয়ে খাবার টেবিল।

কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলে সব হয়। যে বিদ্যালয় ছাত্রাভাবে উঠতে বসেছিল, সেই প্রতিষ্ঠান মাত্র দু’বছরে তাঁর হাত ধরে জেলার অন্যতম সেরা প্রাথমিক বিদ্যালয় রূপে নিজেদের মেলে ধরেছে। আমতা-১ ব্লকের সোনামুই হরিসভা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ খাঁ শিক্ষাঙ্গনকে শিশুদের কাছে মুক্তাঙ্গন করে তুলতে বিদ্যালয়ের ছাদে কিচেন গার্ডেন,বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের জন্মদিন পালন,স্মার্ট ক্লাস,বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মতো বিভিন্ন সৃজনশীল ভাবনার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন আগেই। তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত এই সমস্ত উদ্যোগ আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ও অনুসরণ করছে। ঠিক একইভাবে আবারও এক অভিনব ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটালেন এই উদ্যোমী তরুণ প্রধান শিক্ষক।

প্লাস্টিক ও পলিথিন নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে বিশ্বব্যাপী।বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন প্লাস্টিককে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব নয় যতক্ষণ না তার উৎপাদন বন্ধ করা হয়,তাই তার পুনর্ব্যবহারের উপরই বেশি গুরুত্ব আরোপ করার কথা তাঁরা বলছেন।আর সেই ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েই বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন দিয়ে আমতা-১ ব্লকের সোনামুই হরিসভা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ খাঁ বানিয়ে ফেললেন আস্ত চারটি খাবার টেবিল।

দীর্ঘ বেশ কয়েকমাস ধরে পড়ুয়ারা নিজেদের বাড়ি থেকে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন এনে জমা করত একটি নির্দিষ্ট জায়গায়। পুজোর ছুটিতে নিয়ম করে বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষক পলিথিনগুলিকে বোতলের ভিতর ভরার কাজ করেন। বোতলের মধ্যে বালির সাথে পলিথিন দিয়ে নিরেট করা হয়।তার উপর ভালো করে প্লাইবোর্ড পেস্ট করে বানানো হয়েছে টেবিলগুলি।একাধিকবার টেবিলে বিভিন্ন ওজনের বস্তু চাপিয়ে তার ক্ষমতাও পরীক্ষা করা হয়েছে।পড়ুয়ারা তার উপর খাবার থালা রেখে খাবার টেবিল হিসেবে সেগুলিকে ব্যবহার করছে।

অরুণ খাঁ বলেন, ‘প্রতিটি টেবিল তৈরি করতে ৪০০ টাকা করে খরচ হয়েছে।’ প্রাথমিক স্তরে ৪ টি টেবিল তৈরি করলেও এরপরে আরও বেশ কয়েকটি টেবিল তিনি নিজে হাতে তৈরি করবেন তিনি। এর মধ্যে দিয়ে সৃজনশীল ভাবনার বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষ বার্তাও সমাজের কাছে বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের কাছে তুলে ধরাই মূল লক্ষ্য বলে অরুণ বাবু জানিয়েছেন।

পুজোর ছুটিতে প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে এসে নিয়মিত কাজ করতে দেখে ভাস্কর,সৃজন,রূপম,সূর্যের মতো স্থানীয় খুদে পড়ুয়ারাও ভিড় জমাত স্কুলে।তারাও স্যারের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে বানিয়েছে এই অভিনব টেবিলগুলি। পড়ুয়া,অভিভাবকরা ছাড়াও জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রতিনিধিরা বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে এই অভিনব উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলে জানান অরুণবাবু।পাশাপাশি,এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সিরাজবাটি চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক দীপঙ্কর কোলে।বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী সৌরভ দোয়ারী তিনি বলেন,’প্লাস্টিকের পুর্নব্যবহার সম্পর্কে এইভাবে আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যতটা কম পলিথিন ব্যবহার করা যায়।আর তার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণীয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.