নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে মারছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন তাতে এত অস্বস্তি? আলিপুরদুয়েরর মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর৷ বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ‘এয়ারস্ট্রাইকে’কতজন জঙ্গি নিহত হয়েছে, মোদী সরকারকে জবাবদিহি করতে বলেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
মমতার বক্তব্য ফলাও করেছে প্রচার করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম৷ মমতা বিরোধীরা প্রচার করতে ছাড়েনি৷ প্রচারের পুরোভাগে ছিল বিজেপি নেতৃত্ব৷ আলিপুরদুয়ারের মঞ্চ থেকে মমতাকে ‘পাকিস্তান’অস্ত্রেই বিদ্ধ করতে চেয়েছেন৷
মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমিত বলেন, ‘‘মোদী পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে মারছেন, মমতা দিদির কেন উসখুস করছেন৷ আলিপুরদুয়ারের জনতা, আপনারা বলুন, পাকিস্তানে এয়ারস্ট্রাইক করা উচিত কী উচিত নয়? জঙ্গিদের মদতদাতা পাকিস্তানকে জবাব দেওয়া উচিত কী উচিত নয়? বন্ধুগণ, আপনাদের বলছি, সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা পাকিস্তানকে ছাড়বে না নরেন্দ্র মোদী৷’’ মহাকাশে অকেজো উপগ্রহ ধ্বংসকারী এ-স্যাট মিসাইলের সফল অভিযানের পর মমতার মন্তব্যকেও হাতিয়ার করেছে বিজেপি৷ মমতা বলেছিলেন, কৃতিত্ব ডিআরডিও-এর৷ কিন্তু কৃতিত্ব নিচ্ছেন মোদী৷’’পরে নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগও জানায় তৃণমূল৷
শুক্রবার মমতাকে জবাব দিতে এসে অমিত বলেন, ‘‘মমতা দিদি আপনাকে হারাতে আমাদের মিসাইল ছুঁড়তে হবে না৷ আপনার ‘টাইম’শেষ হয়ে গিয়েছে৷ জনতা আপনাকে ছুঁড়ে ফেলবে৷’’
বালাকোট বা পাকিস্তান বা সার্জিকাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ শেষ করেই পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশকারিদের বার্তা দিতে চেয়েছেন অমিত৷ তবে প্রচ্ছন্নে বার্তা দিয়েছেন মমতাকেই৷ অমিতের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ভোটব্যাংক রাজনীতি বিশ্বাস করে না৷ এক এক জন অনুপ্রবেশকারীকে বেছে বেছে তাড়াব বাংলা থেকে৷ মোদীজীর হাতে ২৩টা পদ্মফুল দিন৷ বাংলায় পরিবর্তন আনুন৷ অনুপ্রবেশকারিদের তাড়াব৷’’
এর আগে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে বোমা ফাটিয়েছেন অমিত৷ হিন্দু শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতেই হবে, সওয়াল করেছেন অমিত৷ অমিতের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেও আটকাতে পারবেন না৷ এর আগে মালদহে সভা করতে এসে অমিত শাহ বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের অ্যাজেন্ডা নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল৷ লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগেই মালদহের সভায় দাঁড়িয়ে এই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷
মালদহে বিজেপি সভাপতি যা বলেছেন, আলিপুরদুয়ারেও প্রায় একই কথাই আবার বলেছেন৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারীরা আজকাল বড় ভূমিকা পালন করে, তা বোঝাতে চেয়েছেন অমিত৷ বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিজেপি৷ কিন্তু তৃণমূল এনআরসি নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল যখন লোকসভায় পাশ হয়েছিল, তখন সদন থেকে ওয়াকআউট করে তারা৷
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী চায়, তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানতে চায় – দাবি অমিত শাহের৷ এরপর অবশ্য, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে বাংলার সব থেকে বড় অ্যাজেন্ডা নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল৷ মমতা দিদিকে এই বিষয়ে কথা বলতেই হবে৷’’
কী আছে এই নাগরিত্ব বিলে? প্রথমেই বলে রাখা ভালো ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিলের সঙ্গে সংশোধিত বিলের বিশেষ তফাত কিছুই নেই৷ বিলে যা আছে, তা যদি ব্যাখ্যা করা যায় তবে বলতে হবে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে আসা মুসলমানরা যেমন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী, অন্যদিকে ওই তিন দেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি, শিখ বা খ্রীস্টানদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা হলেন শরণার্থী৷ ভারতের সরকার, প্রতিবেশি দেশ থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেবে৷ কারণ, তাঁরা বিপদের মুখে নিজের দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন৷ অন্যদিকে মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো হবে, কারণ সীমান্তের ওপার থেকে রোজগার বা বাসস্থান খুঁজে পেতে, কিংবা কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই তাঁরা এদেশে এসেছে৷