#ঈশ্বর_ঈশাই_ধর্ম_ও_উপনিবেশ_দাসত্ব

আমি একজন মিশনারী ছিলাম। আমি প্রায়ই পূর্ব ইউরোপ বা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মিশনারী ভ্রমণে যেতাম। আমাদের সেই ভ্রমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ” যীশুর জন্য নিজের আত্মাকে উৎসর্গ করা”। আমরা যে সকল মানুষকে বাঁচিয়েছিলাম তাদের তাঁদের একটি পরিসংখ্যান আমরা রাখতাম। আমরা যীশুর স্বেচ্ছা সেবকরা যীশুর প্রতি প্রেম প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কিছু নাটক করেছিলাম।তারপরে তাদের সাথে প্রার্থনা করার পরে এবং তাদের আত্মাকে তালিকার সাথে যুক্ত করার পরে আমরা তাদের আর কখনও দেখতে পেতাম না।


আমি ভাবতাম আমি ঈশ্বরের কাজ করছি। কিন্তু আমি যদি সৎ হতাম তাহলে আমার কাজ আমাকে শুভ অনুভূতি প্রদান করত। আমি অনাথালায় সেচ্ছাসেবীর কাজ করেছি অথবা কোনো আবাস গৃহ পরিষ্কার করার কাজ, শেখাতাম যে তাদের কি করতে হবে….এসব অর্থাৎ ঈশ্বর ভজন তাদেরকে তাদের পরিবার বা কাজের থেকে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যেত। তবুও আমি তখনও বিশ্বাস করতাম যে আমি ঈশ্বরের কাজ করছি। 

আচ্ছা! আমাকে জিজ্ঞাসা করুন তাদের কি নাম ছিল ? আমি তো হাজার লোকের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি কি তাদের নাম বা তাদের কে মনে রেখেছি? আমি কি তাদের সঙ্গে সমান ভাবে সংযোগ রেখেছি বা ধর্মপ্রচারের সময়ের মত সমান ভাবে যত্ন নি? না ….কখনোই নয়।

আমি তাদের গৃহে গিয়ে গিয়ে প্রার্থনা করতাম, উপাসনা করতাম। তাদের নিজের যে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস তার প্রতি প্রশ্ন তুলে তাদের বিশ্বাসকে হত্যা করতাম। তাদের মধ্যে পাপ করছে, মুক্তি, নরক ভয় , স্বর্গ এসব বোধকে নাড়া দিয়ে তাদের অনুতপ্ত করতাম। আমি তখনও এটাই মানতাম যে আমি যা বা যাকে বিশ্বাস করি সেটাই সত্য, অন্য সব মিথ্যা। আমি কেন এটা ভাবতাম যে আমার উপস্থিতি এতই মূল্যবান ছিল যা তাদের জীবন তাদের হৃদয়কে পরিবর্তন করে দেবে? আমি কেন ধরে নিলাম যে তারা হারিয়ে গেছে, তাদের সুন্দর সামগ্রীটি যেখানে রয়েছে সেখানেই তারা বেঁচে আছে?  আমি কেন তাদের জীবন পরিবর্তন করলাম? 


সাদা চামড়ার আধিপত্য। সাদা চামড়ার উপনিবেশ। সাদা মানুষজন বিদেশি ভূমিতে অনুপ্রবেশ করে যীশুর নাম নিয়ে নিজেকে ঈশ্বরে পরিনত করা। যীশুর নাম নিয়ে, ধর্মের রঙ ঢঙে ছড়ানো শ্বেত ঔপনিবেশিকতাবাদের নতুন নাম হল #মিশন_যাত্রা।


মিশনারীরা আদিবাসী অঞ্চলে গিয়ে অত্যাচারিত বা হত্যা হয়েছে এমন মিথ্যা একে বারেই প্রচার করবেন না।আদিবাসী হলে তারা তাদের মত করে সভ্য। আদিবাসীদের একদমই তাই অসভ্য, রাক্ষস, দানব ইত্যাদি বলে দাগাবেন না। তাঁরা কেবল নিজেদের উত্তরসূরীদের রক্ষা করার প্রয়াস করেন রোগ , হিংসা ও মৃত্যুর হাত থেকে। তাঁদের ধর্ম, তাঁদের ঈশ্বর, তাঁদের নিয়ম, তাঁদের বিশ্বাস ,তাঁদের কানুনকে অপমান করার কোনো অধিকার আপনার নেই।যদিও মিশনারীরা নির্লজ্জ্ব। তাদের ওসব নীতি কথায় কিছু যায় আসে না। মিশনারীরা কেবলমাত্র তাদের ক্রশের সাহায্যে নব নব উপনিবেশ গঠন করতে চায়।

 
 যদি আপনি , হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাকে বলছি….আপনি যদি আগে মিশন যাত্রায় গিয়ে থাকেন আর যদি আপনার এটি একটি হামলার মতো মনে হয়েছে তো একটু সমু ,অন্তত একটু সময় সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন। মানুষের উপকার করা বা মানুষকে সাহায্য করা ভালো? হ্যাঁ। ভালো অবশ্যই। কিন্তু আপনার নিজের ধারণার আধারে অন্য কারুর জীবনকে পরিচালনা করা সঠিক কি? নিজেকেই সব থেকে মহত্বপূর্ন ব্যক্তি হিসাবে প্রতিপন্ন করা ঠিক কি? না। একদমই ঠিক নয়। আমাদের নিজেদের ধারণাকে শুদ্ধ করে প্রতিবিম্বিত করার সময় এসে গেছে।


ধর্মের নামে ঔপনিবেশিকতাবাদ বন্ধ হোক।


#দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10100184759767623&id=88201237

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.