শিবলিঙ্গ আর দুধ অপচয় নিয়ে বোঝালাম আর তারপরেই ঐ শালা অতিবিজ্ঞানি আমাদের ওপরে মহাবিজ্ঞান প্রয়োগ করে দিলো

“তোমরা শিবের মাথায় ঢেলে নষ্ট করো দুধ
দেশের মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় খাচ্ছে পচা ক্ষুদ”

পার্টি অফিসে বসে তরুণ কমরেডদের বাড়ির মা মাসিদের ব্যবহার করা আলতা চুরি করে এনে তুলিতে ডুবিয়ে বিপ্লবী কাগজের ওপর বৈজ্ঞানিক কবিতা লেখা চলছে। তত্ত্বাবধানে স্বয়ং আমি।
শোন্ রে .. ঐ বিবু মানে বিবেকানন্দ বলেছিলো জীবে প্রেম করে যেই জন। সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।
এই লাইনে পোস্টার লিখতে হবে গোটা চল্লিশেক।

কিন্তু দাদু আমরা তো কয়েক মাস আগেই জেএনু তে বিবেকানন্দের মূর্তি ভাঙলাম। আর ঐ ফ্যাসিস্ট মোদি বেলুড়মঠে আসার পর যে পোস্ট নামালাম
” এক ধাক্কা অওর দো, বেলুড়মঠ তোড় দো” সেগুলো কী হবে?
শুনেই মাথা বিগড়ে গেল। আজকালকার ছেলে মেয়েগুলো বড্ড বেশী বেয়াড়া টাইপের।
দাঁত খিচিয়ে বললুম- ওসব পত্রপাঠ ডিলিট করে দে সবাই।
টুবলু আর বাবলু এই শোন একটা কথা বলছি। তোরা তো যুক্তিবাদী সমিতির মেম্বার। তো এইসব শিবের মাথায় দুধ ঘি ঢালা যে কতোটা অবৈজ্ঞানিক সেটা পাবলিককে বোঝানোর জন্য সকাল থেকেই প্রচার করতে হবে।
হ্যা দাদু।
গতকালের এইসব ঘটনা এখন মনে করছি আর এখন সন্ধ্যা বেলায় ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। যাইহোক আসল ঘটনা খুলে বলি আপনাদের।

আমার যুক্তিবাদী বিজ্ঞানবাদী সমিতির দুই মুত্রমনা দুঃখিত মুক্তমনা কমরেড টুবলু এবং কমরেড বাবলু আজকে আমার কথা মতো সকাল থেকেই মন্দিরের সামনে হাজির। পাথরের মাথায় দুধ ঘি ঢালা যে কতোটা অবৈজ্ঞানিক সেটা পাবলিককে বোঝানোর জন্য। সাথে আছে আমার লেখা ঐ কবিতা। আমি যথারীতি দুপুরে একটা জুতসই ভাতঘুম দিয়ে বিকেলে উঠে চা খাচ্ছি।
ঠিক তখনই হ্যা ঠিক তখনই হরেন ঘোষের মেজো ছেলে ভোলা এসে হাজির।
দাদু বিশাল নিউজ আছে।
কী নিউজ রে ভোলা?
দাদু নৃপেন ডাক্তারের বাড়িতে দু পিস মমি রাখা আছে দেখলাম। পাবলিক হেব্বি ভীড় জমিয়েছে দেখার জন্য। চলো তোমাকে দেখিয়ে আনি।
তাই নাকি? মমি? নৃপেন ডাক্তার আবার নৃবিজ্ঞানি হলো কবে থেকে? চল দেখি।
বেশ আমোদ করে মমি দেখতে গেছি। আমাকে দেখে পাবলিক একটু হাল্কা হলে আমি ঘরের ভেতর ঢুকেই দেখি সব্বনাশ কান্ড।
ঘরের দুই খাটিয়াতে আদ্যন্ত ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে টুবলু এবং বাবলু।
আমাকে দেখেই ভ্যা করে কেঁদে উঠলো দুজনে। আমি তো হতবাক। পেছনে ফিরে দেখি ঐ হরেন ঘোষের মেজো ছেলে ভোলা ততক্ষণে কাট মেরেচে।
এই তোদের এরকম ভাবে কে মারলো অ্যা? কী সব্বনাশ
অ্যাআআ দাদু আমরা দুজনে ঘোষ পাড়ার মন্দিরে গিয়ে শিবের মাথায় দুধ নিয়ে কুসংস্কার আর যুক্তি বিজ্ঞান বোঝাচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় হরেন ঘোষের মেজো ছেলে ভোলা আর ছোটো ছেলে ভোম্বল তাদের দলবল নিয়ে হাজির হলো। ভোম্বল বলল ওর নাকি বিজ্ঞানে ভীষণ রকম ইন্টারেস্ট। তো আমরা ওকে শিবলিঙ্গ আর দুধ অপচয় নিয়ে বোঝালাম আর তারপরেই ঐ শালা অতিবিজ্ঞানি আমাদের ওপরে মহাবিজ্ঞান প্রয়োগ করে দিলো।
অ্যাআআ দাদু সেকী বলবো অ্যাআআ।
ওরে থাম থাম। কাদিস না। কী হয়েছে খুলে বল দেখি।
অ্যাআআ দাদু। দাদু আমাদের বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদী বক্তব্য শেষ হবার পরেই ঐ ভোলা আর ভোম্বল তাদের দলবল নিয়ে আমাদের উদমা ক্যালানি দিতে শুরু করলো। আমরা প্রাণপণ চিৎকার করে কারণ জানতে চাইলে ওরা আমাদের ক্যালাতে ক্যালাতে বলছিলো যে বৈজ্ঞানিক মতে ভর এবং শক্তি হলো অবিনশ্বর। সমস্ত কিছুই অনু পরমাণুর সমষ্টি। তাই আমরাও নাকি অনু পরমাণুর সমষ্টি এবং ভর এবং শক্তির পুঞ্জীভূত রূপ বলে অবিনশ্বর। তাই আমাদের ক্যালালেও নাকি আমরা আসলে অবিনাশী। শুধু মাত্র অনু পরমাণুতে বিভাজিত হয়ে যাবো। তাই এটা নাকি ক্যালানি নয়। এটা নাকি নিত্যতা সূত্র সহযোগে অপেক্ষিকতাবাদের প্র্যাকটিকাল ক্লাস। অ্যাআআ দাদু। ওরা আমাদের কেলিয়ে শুয়োর পট্টির পেছনে কাঁচা নর্দমাতে ফেলে দিয়েছিল। তারপর কয়েকটা লোক তুলে এনে এখানে ডিপোজিট করে গেল দুপুরের দিকে। অ্যাআআআ

নাঃ আমার আর কিছুই বলার রইলো না। মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লুম।

✍ বিপ্লবী কমরেড বীতরাগ মিত্র

সেলুম✊

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.