বামপন্থী প্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না

ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা জিনিস চাউর হয়েছে। ভারতবর্ষের দুটি মানচিত্র দেখানো হচ্ছে, ২০১৭-র শেষে দেখা যাচ্ছে সেই মানচিত্রের প্রায় শতকরা ৭০ ভাগের রং গেরুয়া, ২০১৯-এর শেষে এই ৭০ শতাংশ দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশে। রাজ্যের ক্ষমতা দখলের নিরিখে এই ধরনের মানচিত্রের নকশা পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটা ঠিক গত এক বছরে বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে বেশ কিছু রাজ্য যেমন মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, এখন ঝাড়খণ্ড ইত্যাদি। ফলে ২০১৭-র শেষে যে গেরুয়া মানচিত্র দেখা যাচ্ছিল, ২০১৯-এ তা অনেকটাই ফিকে। এই দুই মানচিত্র তুলে ধরে প্রতিপন্ন করতে চাওয়া হচ্ছে দেশের মানুষ মোদী-অমিত শাহকে চাইছে না, সিএবি-এনআরসি চাইছে না ইত্যাদি।
কিন্তু মুশকিল হলো, উট বালিতে মুখ গুঁজে থাকলেও প্রলয় থেমে থাকে না। বিরোধীরা যখন আত্মপ্রসাদে ভর করে স্থির করে নিয়েছিল রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে। মায়া-মুলায়ম-মমতা- চন্দ্রশেখর-ইয়েচুরিকেজরিওয়াল প্রমুখের এক ‘প্রধানমন্ত্রীমণ্ডলী’ দেশ শাসন করবে তখন জনগণ এঁদের সসম্মানে বিদায় নিয়ে নিশ্চিত ও নিশ্চিহ্ন দুই-ই করেছেন, এই ২০১৯-এই। দেশের মানচিত্রটাই পুরো গেরুয়া আকার ধারণ করেছিল। একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে সেখানে দীর্ঘদিন বিজেপির সরকার ছিল যেমন মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, কিংবা ঝাড়খণ্ড। ফলে শাসকদলের বিরোধী ভোটদানের প্রবণতা যাকে ‘অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর’ বলা হয়। তা এসব জায়গায় পূর্ণমাত্রায় ছিল। তারপরেও বিজেপি মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে কংগ্রেসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাবে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও, অনৈতিক জোট করে বিজেপিকে আটকানো হয়েছে। যেমন । মহারাষ্ট্রে, কিছুদিন আগে কর্ণাটকেও এই পরিস্থিতি ছিল।
এটা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, রাজ্যের ভোটে স্থানীয় ইস্যু যে গুরুত্ব পায়, দেশের সাধারণ নির্বাচনে তেমনি জাতীয় । ইস্যু একই গুরুত্ব পায়। সুতরাং সিএবি বা এনআরসি ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে ভেবে যে নিষ্কর্মা বামপন্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ার উল্লাস প্রকাশ করছেন, তারা নেহাত মুখের স্বর্গে বাস করছেন। আমাদের সমস্যা তা নিয়ে নয়। সমস্যা হলো দেশের জনমতকে সুকৌশলে প্রভাবিত করার চেষ্টাটা নিয়ে।
বিরোধীরা কোনওদিনই হার বলে। বস্তুটিকে মেনে নেয়নি। হারের আত্মসমীক্ষার মানসিকতা তাদের ছিল না। ইভিএমকে কাঠগড়ায় তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ছিল তাদের মান বাঁচানোর কৌশল।
আজ অ্যান্টি ইনক্যাম্বেন্সি ফ্যাক্টরের সুযোগ নিয়ে যখন জিতছে, তখন আর ইভিএমে কোনও গলদ নেই, ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ এখন দেশের নাগরিকত্ব ইস্যু। এই বিরোধীদের বকলমে বামপন্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখানোর চেষ্টা করছে দেশের মানুষ কীভাবে বিজেপির বিপক্ষে চলে গিয়েছে, তাদের হাতিয়ার ওই দুটি মানচিত্র, যেখানে বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতার ভিত্তিটুকু কেবল দেখানো হয়েছে। এই রাজ্যগুলির সিংহভাগেই প্রবল প্রতাপ এককভাবে বিরোধী আসনে বিজেপির অস্তিত্ব রয়েছে। এবং আগামী নির্বাচনেই প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা।
তাই এর সঙ্গে ‘নাগরিকত্ব’ ইস্যুর কোনও সম্পর্ক নেই। বিভিন্ন সমীক্ষায় স্পষ্ট হয়েছে দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আজও মোদীকেই চান, নাগরিকত্ব বিলের প্রতিও তাদের সিংহভাগের সমর্থন। এঁরাই বিজেপিকে লোকসভা-রাজ্যসভায় প্রয়োজনীয় সংখ্যা দিয়েছেন, তাই সাংবিধানিক গণ্ডীর মধ্যেই সবকিছু করা সম্ভব হচ্ছে, যা গত সত্তর বছরে সম্ভবপর ছিল না।
বিশ্বামিত্র-র কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.