করোনা মহামারীর সময়েও মোদী বিরোধীরা রাজনৈতিক বাকবিতণ্ডায় ব্যস্ত : নাতাশা রাঠোর

নাতাশা রাঠোর বলিউডের সঙ্গে যুক্ত এবংশাহরুখ খানের জনপ্রিয় সিনেমা ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’র উপর নির্মিত ডকুমেন্টারির মাধ্যমে বহু আলোচিত ও জনপ্রিয় চরিত্র। লন্ডন ফিল্ম স্কুল থেকে ‘ফ্লিম মেকিং প্রাপ্তা নশা ইদানীংকালের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিচলিত হয়ে এই প্রথম রাজনৈতিক বিষয়ের উপর নিজের মতামত দিয়েছেন। করোনা সমস্যা এবং হাল আমলের ঘটিত রাজনৈতিক ঘটনাক্রম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে ঘৃণ্য প্রচার চালানো হচ্ছে সেই প্রেক্ষিতে তিনি এক এক করে ৬৯ টি টুইট করেছেন। এই টুইটগুলি যথেষ্ট গবেষণা ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা এবং একই সঙ্গে এক গভীর অনুভূতির উদ্রেককারী। এখানে সেইসব টুইট (https:/twutter.com/natashjarathore) একত্র করে একটি প্রতিবেদন রূপে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হলো। এই লেখাটি নিজ দায়িত্বে পড়বেন। এটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক এবং সম্ভবত ‘রাজনৈতিকভাবে অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন। আমি এই প্রথম নিজের রাজনৈতিক মতামত ব্যক্ত করছি। এর আগে আমি কখনও নিজের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করিনি। কিন্তু আজ জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে উঠছে এবং আমি মনে করি করছি যে এই সময়ে নিজের মতামত দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি আপনারা আমার সমস্ত লেখাটি পড়ার পরও আমার বক্তব্য বুঝতে ব্যর্থ হন, তাহলে অনুগ্রহ করে এখানে নিজেদের ঘৃণ্য প্রচার ও নেগেটিভমন্তব্য করবেন না। এইমুহুর্তে আমার সময় ও শক্তি কোনোটাই নেই এবং আপনাদের সঙ্গে কোনো বিতর্কে যাওয়ার মতো মনের অবস্থা ও ইচ্ছা নেই। আপনারা আমাকে এড়িয়েও যেতে পারেন।

জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত সংকটের সময়, এমন একটা সময় হয়ে থাকে যখন কোনো ব্যক্তির অভিসন্ধি এবং অভিলাষ ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠে। এটি এমন একটি সময় যে সময়েই আমাদের প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। আমার মতে এই যে, যখন একদিকে বৃহৎসংখ্যার বোধহীন বিদ্রপ(ট্রোল), গুন্ডা ও একইসঙ্গে অন্ধ ভক্তদল যারা যে-কোনো প্রকারে নিজেদের ধর্মীয় ও কট্টরপন্থাকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্ঠায় মত্ত, অন্যদিকে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী’ ও ‘জাগ্রত’ সম্প্রদায়রূপে পরিচিতের এক বড় অংশ মোদীর প্রতি ঘৃণাগ্রস্ত। সেক্ষেত্রে আপনি এরূপ দুই প্রান্তের চরম মতবাদীদের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে চলতে পারবেন? আপনি আসল পথটি কীভাবে ঠিক করবেন ? | জিন শার্প নামে এক আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী, যিনি একটি সরকারকে গদিচ্যুত কীভাবে করা যায় তার উপর বই লিখেছেন। এই বইতে তিনি অহিংসা ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে শাসক দলের সরকারকে কীভাবে গদিচ্যুত বা নতিস্বীকার করানো যায় তার ১৯৮ রকমের পন্থার উপায় দেখিয়েছেন। তার মতেশাসকের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলনে শান্তি এবং একইসঙ্গে গণতন্ত্রের কথাও বলে যেতে হবে। এভাবে সরকারকে এমন পর্যায়ে নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে যাতে সমস্ত ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে যায়। অবশেষে সরকারকে শক্তিশালী রাখার সমস্ত ব্যবস্থাপনা অচল হয়ে যাবে, ফলে সরকার পড়ে যাবে। মিশরে তহরিরচকে এইরকম কিছু পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছিল। আবার ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধেও এইরকম কিছু করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতেই হংকঙে ৭৬ দিন ধরে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। এই পন্থাগুলির অর্ন্তগত কিছু কায়দাগুলি এইরূপ যেমন, পুলিস ও সুরক্ষাবাহিনীর উপর পাথর নিক্ষেপ, যাতায়াতের পথ কেটে দেওয়া, রাস্তায় ভিড় জমিয়ে রাখা যাতে দমকলের গাড়ির চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, অন্যস্থানে আগুন নেভাতে যেতে না পারে। বিক্ষেভ প্রদর্শনে সক্কলের আগে শিশু ও মহিলাদের দাঁড় করিয়ে রাখা, এছাড়া অ্যাসিড ছোঁড়া, পেট্রোল বোমা মারা, মিডিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত নেগেটিভ অভিযান চালানো, অসত্য খবরের ব্যাপক প্রচার করা, জনগণকে বিপথে চালনা করা এবং নিজ দলের সমর্থকদের দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ভড়কানোর ষড়যন্ত্র করে কারাবরণ করা ইত্যাদি এগুলির মধ্যে রয়েছে।

সম্প্রতি দিল্লিতে ঘটা দাঙ্গার আড়ালে যা কিছু হলো সেই প্রসঙ্গে যদি দেখা হয়। তবে স্পষ্ট বোঝা যায় যে সরকারকে বিচলিত করার এই রাজনৈতিক পন্থাগুলি ব্যবহার করা হয়েছে। আরও গভীরভাবে ভাবলে বুঝতে পারা যায় যে এগুলির পেছনে বা অন্তরালে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, শিক্ষিত এবং সচেতন’ লোকেদের হাত ছিল।

জিন শার্প সরকার ফেলে দেওয়ার যে পদ্ধতিগুলির তালিকা দিয়েছেন তার মধ্যে দিল্লির ঘটনায় কমপক্ষে সত্তর আশিটি এক্ষেত্রে সরাসরি প্রয়োগ করা হয়েছে। দিল্লিতে ইদানীং যা কিছু ঘটেছে, সিএএ-র সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই এবং বাস্তবে মুসলমানদের স্বার্থের সঙ্গেও জড়িত নয়। আমাদের এটা বোঝা দরকার যে, এই দেশের বিশাল আকার এবং জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মনিরপেক্ষতার উপর প্রশ্নতোলা অমূলক। ফ্রান্স, পর্তুগাল, ব্রিটিশ ও মুঘল শাসনকালের শেষেও ভারতবর্ষ শুধু তার অস্তিত্ব টিকিয়েই রাখেনি, অতিরিক্ত নিজ ধর্মনিরপেক্ষতার ধারাবাহিকতার নীতিকে স্পর্শ করতে দেয়নি। সুতরাং মুষ্টিমেয় ভণ্ড হিন্দু গুন্ডার ভয়ে ভীত হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে কি? |

সবচেয়ে চিন্তার বিষয় এই যে এই দেশ শত শত বছর ধরে লুঠ হয়ে এসেছে। একে কয়েক দশক পর্যন্ত তৃতীয় দুনিয়ার দেশ করে রাখা হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে ভ্রষ্টাচার ও পরিবারতন্ত্রের রাজনীতির রমরমা হয়ে এসেছে। এর থেকে আরও চিন্তার বিষয় হলো যে শিক্ষিত, বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিজীবী লোকেরাও ভ্রান্ত প্রচারের শিকার হয়ে উঠছে। আমি এবিষয়ে একমত যে বিজেপি শাসন ক্ষমতায় আসার পর আর এস এসকে গুন্ডাবাহিনী হিসেবে বিদ্রুপ করার প্রবণতা বেড়ে গেছে, কিন্তু আপনারা ভেবে দেখুন যে মোদীকে নীচু দেখানোর যে রাজনৈতিক খেলা চলছে তা ভারতের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার বুনিয়াদের জন্য আরও ক্ষতিকর। | নেতৃত্বের বিষয়ে অল্প স্বল্প খবর রাখেন এমন কোনো ব্যক্তি এটা বোঝে যে একজন নেতা হওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনি কতটা নিজের দলের সকলকে নিয়ে চলতে পারেন, হতে পারে এরা দায়িত্বহীন অথবা অক্ষম, তবুও পরিশেষে এটা টিম ওয়ার্ক হিসাবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তি ভালো ‘টিম প্লেয়ার হওয়ার ব্যপারে যেটা বোঝে সেটা হলো নিজের পছন্দের কর্মসূচি যাই হোক না কেন, নিজের ভুলের জন্য আপন দলের সদস্যদের দোষারোপ করে না, বিপরীতে সে এই দুর্বলতাকে আড়াল করেই এগিয়ে চলে। কিন্তু তবুও মোদীর এতো বিদ্বেষী কেউ কেন হবে? ভারত কয়েকদশক ধরে ভ্রষ্টাচার এবং পরিবার তন্ত্রের রাজনীতির জালে ফেঁসে আছে। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে এর উদাহরণ আপনাদের জানাচ্ছি। আমার বাবা ১৯৯৮ সালে গ্যাসট্রোএনটেরোলজিস্ট হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য মুম্বাই চলে গিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম চিকিৎসক যিনি ভারতে প্রথম এন্ডোস্কোপিক আন্ট্রাসাউন্ড চিকিৎসার শুরু করেছিলেন। ১২ হাজার টাকা প্রতিমাসে রোজগার দিয়ে শুরু করা থেকে মুম্বই শহরের কেন্দ্রস্থলে গ্যাসট্রোএনটেরোলজি হাসপাতাল স্থাপন করত এক সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন। কিন্তু তার এই চলার পথ মসৃণ ছিল না। বহুবছর ধরে সমস্ত ডাক্তার এর বিরোধিতা করে এসেছেন, তাঁকে হত্যার ধমক এবং শারীরিক লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং আপনারা বিশ্বাস করবেন না তবুও জানাই একবারতো তার সাহায্যকারীদের খুন করতে কিছু গুন্ডাও পাঠানো হয়েছিল। জানতে চান কেন এমন করা হয়েছিল, কারণ ভারতের ক্ষেত্রে এটা ঘটনা যে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে এমন নেতা ছিলেন নাযিনি ভারতের নব্বই শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ইতিপূর্বে আমাদের কখনো এমন নেতা আসেননি যিনি চা-ওয়ালা ছিলেন, যিনি এমন সামাজিক-আর্থিক স্তর থেকে আগত যে সাধারণ ভারতবাসীর সমস্যা বোঝেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী বুঝতে পেরেছেন যে ভারতের পরিবর্তনের জন্য কোনো নতুন আইনের প্রয়োজন নেই, দরকার শুধু মানসিকতার। মোদীজী দেশে এখনও পর্যন্ত যে সকল বিষয়ের প্রচলন করেছেন এবং যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে সমস্ত কিছু বদলে যাচ্ছে। যেভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে তিনি মোকাবিলা করছেন এবং জনগণের সঙ্গে ব্যবহার করে চলেছেন সে সবই অত্যন্ত প্রশংসনীয়। একমাত্র তিনি এখনও অর্থব্যবস্থার মন্দা কাটিয়ে উঠতে পানেননি। যদিও এরজন্য প্রয়োজনীয় দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যৎই বলবে সেগুলি বাস্তবে ফলপ্রসূ হয়েছে অথবা ব্যর্থ। এটা স্বীকার করতেই হবে যে বর্তমান দুনিয়াতে যদি কোনো অর্থনীতির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যাকোভিড’পরবর্তী সময়ে দ্রুতলয়ে বিকশিত হবে তাহলো ভারতীয় অর্থনীতি, তার একমাত্র কারণ ভারতীয় অর্থব্যবস্থার নব্বই শতাংশ আত্মনির্ভর। | কয়েকদিন হলো এমবিবিএস এবং এমডি চিকিৎসক এবং লেখক ডাঃ শরদ ঠাকরের গুজরাতিতে এক অডিয়ো ক্লিপ আমার হাতে এসেছে যেখানে কিছুদিন আগে তাঁর সঙ্গে মোদীজীর ‘প্রো-কোভিড’ আলোচনা হয়েছে। তিনি মোদীজীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, “ইদানীং কী রকম চলছে?” ডাঃ শরদ আরও জানাচ্ছেন যে এইরকম ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার রেওয়াজ যেমন, “সব ঠিক আছে’কিন্তু মোদীজী এক্ষেত্রে কিছুক্ষণ মৌন থেকে গম্ভীরভাবে উত্তর দেন যে, “সাধনা। ডাঃ শরদ পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন ‘কী রকমের সাধনা’? এর উত্তরে মোদীজী বলেন ‘ঘুমের উপর নিয়ন্ত্রণের সাধনা। তখন ডাঃ শরদ আবার প্রশ্ন করেন, “আমি শুনেছি যে আপনি আগের থেকে খুব কম সময়েই ঘুমোন, এর পরও আপনি আর কত ঘন্টা কমাতে চাইছেন?” মোদীজীর গম্ভীর উত্তর ছিল ‘আমি একেবারেই ঘুমতে চাই না। জনগণের সম্ভবত বিশ্বাস করা কঠিন হবে তবু তিনি আরও বললেন যে “আমি এটা বুঝতে পারি, কারণ আমি নিজে সাধনা করি এবং সাধনার দ্বারাই ঘুমের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব। বলা হয় বীর হনুমান। কখনো ঘুমাতো না”। ডাঃ শরদ তাকে আরও একটি প্রশ্ন করেন, “কিন্তু আপনি এমন কেন করতে চাইছেন?” মোদীজীর উত্তর ‘এই রাষ্ট্রের জন্য এবং গরিবদের জন্য। এটি এক মহান দেশ, কিন্তু আমাদের লুঠ করা হয়েছে। এবং এই দেশকে ঠিক করে তোলা আবশ্যক হয়ে পড়েছে, এরজন্য কুড়ি ঘণ্টা খুব কম সময়, আমার পুরো চব্বিশ ঘণ্টাই দরকার।” একথা বলার সময় মোদীজীর চোখে জল এসেছিল এবং এটা শুনতে শুনতে ডাঃ শরদের চোখেও জল এসে গিয়েছিল।

মোদীজী তার হিমালয়ে অতিবাহিত দিনগুলির কথা বললেন, তার দূরদৃষ্টির বিষয়েও বললেন। মোদীজী বলেছেন যে তিনি সন্ন্যাসী হওয়ার নির্দেশ পেয়েছিলেন এবং দেশের সেবা করার আদেশ পেয়েছিলন যার জন্য তাকে ফিরে আসতে হয়েছিল। ডাঃ শরদ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, “এখনতো বহুলোক আপনার পেছনে লেগে গেছে। আপনি হিট লিস্টে সবার ওপরে রয়েছেন, কিন্তু আপনার ভয় হয় না?” মোদীজীর উত্তর ছিল, “এটা আমার জীবনের উদ্দেশ্য যে এই রাষ্ট্রের সেবা করে যাবো, যতদিন না আমার উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে কেউ আমাকে হত্যা করতে পারবে না, আর একবার আমার উদ্দেশ্য ও অভিলাষ পূর্ণ হয়ে গেলে কেউ আমাকে বাঁচাতে পারবে না। আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। আমি এখানে নিজের উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্যই রয়েছি।”ডাঃ শরদ জানাচ্ছেন আমি চোখ বন্ধ করে কাউকে অনুসরণ করি না। যখন আমি মাটির ঘড়া কিনতে বাইরে যাই, তখন টোকা মেরে পরখ করে নিই যে সেটা কাচা আছে, না পাকা। ইনি মাটির ঘড়া নন, ইনি একজন ব্যক্তি যাকে বহুবার পরীক্ষা দিতে হয়েছে, পরখও করা হয়েছে। মোদীজীকে কোনো এক ব্যক্তির দ্বারা নয়, ১৩০ কোটি জনগণ পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তিনি আজও দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ইনি মাটির ঘড়া নন, ইনি অপরিণত ব্যক্তিও নন।

চীনের হুবেই প্রদেশে লকডাউনের সময় হিংসাত্মক বিক্ষোভ প্রদর্শনের ভিডিয়ো এবং টুইটগুলি চীনা সরকার দ্বারা সরিয়ে ফেলা হয়েছে, অন্যদিকে ভারতের হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমিকদের ভিডিয়ো এবং ভারত সরকারের সমালোচনার বহুসংখ্যক টুইট আজও ইন্টারনেটে বজায় রয়েছে। মোদী সরকার যদি সত্যিই ফ্যাসিবাদী, যেটা বিরোধীরা বলে থাকে, তবে কি এসব করার করার স্বাধীনতা এরা পেতো? মোদী সরকারের ছয় বছর হয়ে গেছে আর যদি তিনি সম্পূর্ণরূপে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাইতেন, যদি সত্যিই তাঁর এরকম মনস্কামনা থাকতো তবে এতেদিনে তা সম্পূর্ণ হয়ে যেতো। আমেরিকা থেকে আমার এক বন্ধু আজ সকালে আমাকে একটি ভয়েস নোট পাঠিয়েছেন। তিনি “নাতাশা আমি দেখতে পাচ্ছি যে সব জায়গার লোকেরা সরকারের সমালোচনা করছে, কিন্তু ভারতে কিছু লোক যেভাবে টুইট করে সরকার বিরোধিতায় উদ্যোগী হয়ে নীচতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে, সেটা আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না।” ভারতে টুইটারে প্রবলভাবে নেতিবাচক ঝোক দেখা যাচ্ছে। আজও এরা টুইটার ও পোস্টে আগের মতোই ট্রেন্ড করে চলেছে। আনুমানিক সাড়ে চার বিলিয়নের মতো লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যদি এদের এভাবে দিকভ্রষ্ট করতে থাকে এবং একপ্রকার ধারণার প্রচার চলতে থাকে, যেমন এই সরকার একেবারে অক্ষম, তবে জেনে রাখুন অর্ধেক কাজ হয়ে গেল।

জিন শার্পের মতে , কিছু নীতি থাকে যা কোনো সরকারকে মজবুত করে তোলে এবং তাকে দুর্বল করতে হলে আপনাকে মিডিয়ার ব্যবহার আবশ্যই করতে হবে। এতে কোনো আশ্চর্য নেই যে এই লোকেরা ধর্মগুরু এবং অন্য আধ্যাত্মিক সংগঠনগুলিকেও নিশানা বানাতে শুরু করে দিয়েছে। এই দাম্ভিকদের সঙ্গে আপনি তর্ক করতে এবং এদের কাজের জালিয়াতি ধরতে পারবেন না। যার ফলে এরা এক বিশেষ গোষ্ঠীর লোকেদের দিয়ে। তাদের বিরুদ্ধে সংকীর্ণ রাজনীতির প্রয়োগ করা শুরু করে দিয়েছে। আজকাল কিছু লোক নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একদিকে যখন বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করেছে, তখন অন্যদিকে ওই ধর্মগুরুরা এখনও বিশ্বনীতিগুলির সংস্কারের জন্য কিছু চমকপ্রদ কাজ করে চলেছেন।

টুইটারে বহুসংখ্যক এমন লোক রয়েছেন যারা যন্ত্রের মতো পোস্টগুলি পড়েই রিটুইট করে দেন, কারণ এরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন, আবার। কিছুলোক রিটুইট করার জন্য টাকাপয়সাও পেয়ে থাকেন, ওই রকম কিছু লোক অস্থিরতা সৃষ্টিকারী খবর প্রচার করার জন্য উদগ্রীব হয়েই আছেন। টুইটারে ২৫ জনের একটি দল কোনো একটি টুইটকে ট্রেন্ড করার জন্য যথেষ্ট। যখন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নেগেটিভ টুইট ট্রেন্ড করতে থাকে, ততক্ষণে পাশ্চাত্যের লোকেরা ঘুম থেকে জেগে উঠে যায় এবং তারাও এই বিষয় নিয়ে আদানপ্রদান শুরু করে দেয়। ফলে নেগেটিভ প্রচারগুলি আরও জোরদার হয়ে ওঠে।শিক্ষিত তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা এবং গভীররাত পর্যন্ত জেগে থাকা কলেজ পড়ুয়ারা এদের শিকারের লক্ষ্যস্থল। কেউ ফ্যাসিবাদ চায় না , চায় না কোনোপ্রকার ধর্মীয় উন্মাদনা বা কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক লড়াই। সমাজে রক্তপাত হোক কেউই কেউ চায় না।

আজ লাকডাউনের চতুর্থ দিন, ভারতে আজ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে হাজারেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক নিজের নিজের গ্রামে গ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য রাজপথে বেরিয়ে এসেছে, আবার কিছু লোকেদের ডিটিসির বাসে করে দিল্লির সীমান্তে এনে নিজেদের ভাগ্যের ভরসায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত যখন করোনার মতো মহামারীর সঙ্গে লড়াই করে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে চলেছে, সেখানে লেখাপড়া জানা অশিক্ষিত, সত্যিকারের অশিক্ষিত, হোয়াটসঅ্যাপে মিথ্যা খবরের প্রচার, বিদ্বেষপরায়ণ বুদ্ধিজীবী এবং শঠ নেতাদের জন্য দেশকে আরও বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গতসপ্তাহে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী হাতজোড় করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের এই গভীর সমস্যার সময় নিজ নিজ কর্মচারীদের বেতন দিয়ে যেতে এবং তাদের দেখাশোনা করার আবেদন জানিয়েছেন। তবুও কোরোনাভিলেনে (#Corona Villains)-এ এক মহিলার দুবার পোস্ট করা ভিডিয়োর মতো আরও ভিডিয়ো প্রকাশ করা হচ্ছে যেখানে বলা হয়েছে এই তিন সপ্তাহের জন্য আমার পরিচারিকার পারিশ্রমিক কে দেবে? আপনারা কি বেতন দিয়ে দিচ্ছেন? প্রধানমন্ত্রী কি ওর বেতন দিয়ে দেবেন? সে সুস্থই আছে, ওর কিছু হয়নি, সুতরাং সে কাজ করতে আসবে। দুর্ভাগ্য যে, অধিকাংশ ভারতীয় নিয়োগকর্তাদের এই একই মানসিকতা, যার ফলস্বরূপ বেশকিছু পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীজীর রাষ্ট্রীয় টিভি চানেলে হাত জোড় করে অনুরোধ করেছেন ‘দয়া করে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখুন এবং যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। নিজের গ্রামে ফিরে যেতে হবে না।এতৎসত্ত্বেও এখনও দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের সীমান্তে জনসমাগম দেখা গেল। এটা মেনে নিতেই হয় যে কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়নি তো? কিছু লোকের মন্তব্য যে সরকার দ্বারা লকডাউন ঘোষণার আগে তার ফলশ্রুতি নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। ঠিক আছে, আমরা এটা স্বীকার করে নিচ্ছি, কিন্তু আমাদের বোঝা উচিত যে হাতে সময় একেবারেই ছিল না এবং ওই মুহূর্তেই লকডাউন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। বাস্তবে করোনার মতো মহামারীর সঙ্গে মোকাবিলা করতে এই পদক্ষেপের ঘোষণা সঠিক সময়েই করা হয়েছে। যদি লকডাউন আরও কিছুদিন আগেই করা হতো তবে আমরা আরও সমস্যায় পড়তাম এবং হাঁফিয়ে উঠতাম। অন্যদিকে এই ঘোষণা আরও কিছুদিন পরে করা হলে তখন অবস্থা আমাদের হাতের বাইরে চলে যেত। | প্রশ্ন যে সরকার কি এই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য স্টেডিয়ামে ‘রেন বসেরা’ (অস্থায়ী বাসস্থান) তৈরি করে দিতে পারতো না? এটা সুনিশ্চিত যে সেটা একটা উত্তম পদক্ষেপ হতে পারতো, কিন্তু এটাতো সবাইকে স্বীকার করতে হবে যে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে ঘোষণা করার পরও কেউ এরূপ অব্যবস্থার চিন্তা করতে পারেনি। প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা ভেবে কেন্দ্রীয় সরকারের আহ্বানে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা থেকে চিকিৎসা পরিষেবা এবং আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করা থেকে দৈনন্দিন সামগ্রীর জোগানের ব্যবস্থা করা, আইন কানুনের নিয়ন্ত্রণ করা পর্যন্ত কোনো বিষয়েই সরকার কোনো ত্রুটি রাখছে না। হাজার শয্যার হাসপাতালের নির্মাণে চীনের দশদিন লেগেছে, যেখানে ভারতে ভারতীয় রেল রাতারাতি ছ’হাজার শয্যার সুবিধা বিশিষ্ট আইসোলেশন ওয়ার্ডে পরিবর্তিত করে দিয়েছে। ভারতের মতো দেশে এই মহামারীর সঙ্গে মোকাবিলা করতে যে ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যোজনা নেওয়া হয়েছে তা এক অভূতপূর্ব এবং ঐতিহাসিক।

প্রকৃতপক্ষে পরিযাযী শ্রমিকরা মিথ্যা প্রচার এবং ফেক নিউজের বলি হয়েছে। কিছু শ্রমিক জানিয়েছে যে তাদের ডিটিসি বাসের ভুল নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে আনন্দ বিহার থেকে নিজেদের গন্তব্যস্থলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এই সবই যেন ‘জিন শার্প ১০১’-এর পদ্ধতি অনুসারে করা হয়েছে। বিভ্রান্তিকর প্রচার করাহয়েছে এবং অরাজকতা সৃষ্টিকরার জন্য আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই মহামারীর ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের আয়তন, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং জনগণের বোধবুদ্ধির খেয়াল মাথায় রেখে যা কিছু করা যেতে পারে সে সবকিছুই করতে সচেষ্ট হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, বেশি করে যা চর্চা হচ্ছে সেগুলি একেবারেই অসত্য। দিল্লির ঘটনা এটা আবার প্রমাণ করলো যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একাধিক শক্তি রয়েছে, যারা মোদী সরকারকে বিফল হওয়া দেখতে পচ্ছন্দ করে, তার জন্য যদি নাগরিক ও দেশকে মূল্য দিতে হয় তাহলেও তাদের কিছু যায় আসে না। | ভারতীয় রাজনীতিতে আজ যা কিছু ঘটছে তা রাজনীতির জন্য এক ট্রাজেডি, আর সবচেয়ে মর্মান্তিক যে মানবতার জন্যও এক ট্রাজেডি। ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবা যথেষ্ট ভালো নয়, পরীক্ষার জন্য কম ‘কিট’, দারিদ্র্য, অনুশাসনহীনতা, অব্যবস্থা এবং অবৈজ্ঞানিক চিন্তার জনসংখ্যা ইত্যাদির মতো সমস্ত রকমের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মোদীজী একসপ্তাহের মধ্যে দেশে যা করে দেখিয়েছেন তা কল্পনাতীত, অবিশ্বাস্য ও অভূতপূর্ব। পরিবেশব সংক্রান্ত কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উন্নত দেশের শক্তিশালী নেতাদের সামনে মোদীজী সুস্পষ্ঠভাবে পরিবেশ রক্ষায় ভারতের মতামত দিয়েছেন। তিনি পরিবেশ নিয়ে ছেলেখেলায় মত্ত কয়েকটি উন্নত দেশকে এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে “মানুষের জীবনের মূল্য অর্থনীতির থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ।”এই সিদ্ধান্তকে মূলমন্ত্র মেনে নিয়ে কর্মসুচি তৈরি করার পরও টুইটারে #Modi Made Diaster ট্রেন্ড করা হচ্ছে এবং প্রচার করা হচ্ছে যে মোদী একাই ভারতকে #COVID19-এর তৃতীয় স্টেজে ঠেলে দিচ্ছেন।

ভারতে আজ যে সমস্ত কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে যে বিরোধীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এটাও তথ্যনির্ভর সত্য যে বিরোধীরা মোদীজীর সফলতাকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছে। এরা মোদীজীর ভাবমুর্তিকে ধুলিসাত করার জন্য যে-কোনো পর্যায়ের চেষ্টা করে যেতে পারে, হোক না সেগুলি মানুষের জীবনের বিনিময়ে। এটা এমন একসময় যখন লোক মরছে, জীবন ও মৃত্যুর মাঝে ঝুলে রয়েছে। এই সময় দেশের পাশে দাঁড়াবার সময়, কিন্তু এই সময়েও বিরোধীরা মোদীকে নীচু করে দেখাতে দেশের সবচেয়ে দুর্বল অংশকে হাতিয়াররূপে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকছে না। এরা সেই শ্রেণীর রাক্ষস যাদের দেশের মানুষ ভোট দিয়েছেন।

আজ আমি আনন্দিত যে অমিত শাহ নির্বাচন নিজের পরিকল্পনায়। জিতেছেন। যদি এটা মেনে নিতে হয় যে নির্বাচনে অনিয়ম করা হয়েছে। তা হলেও। যদি আমি তার জায়গায় থাকতাম তবে এটাই করতাম, কেননা আর কিছু না হোক অন্তত এই রাক্ষসদের দেশের ওপর প্রভুত্ব করতে দিতে পারতাম না। আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলছেন, বাস্তবে আমরা এর যোগ্যই নই। আমাদের এক এমন নেতার দরকার যিনি সমস্ত কিছু সরাসরি চালু করতে পারেন এবং প্রয়োগ করতে পারেন। এখন অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝতে পারছি যে রাষ্ট্রবাদী হওয়ার অর্থ কী। আজ বুঝতে পারছি প্রকৃত রাষ্ট্রবিরোধী কারা ! আজ আমার নিজ নেতার প্রতি গর্ব হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংযম, সাহস, ধৈর্য বজায় রাখা। এবং বিজয়ী হওয়া বিরল শ্রেণীর লোকেদের দ্বারাই সম্ভবপর। আজ আমি মোদীজীর সমস্তরকম পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞ যে তিনি এই মহামারীর সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং সমস্ত ভারতীয়দের সুরক্ষার জন্য সমস্ত রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সেই সঙ্গে আমি লজ্জিত যে মোদীজীকে এই সকল অনুধাবন করে আগেই কেন সমর্থন করতে পারনি আমার লেফ্ট-লিবারেল বন্ধুরা কিছু মনে করতে পারে সেই ভেবে। কিন্তু আজ আমি প্রকাশ্যে মোদী সরকারকে সমর্থন করছি। আজ আমাকে তার ভক্ত বলতে পারেন, এরজন্য যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে ব্রাত্য হতে হয় আমি তার পরোয়া করি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.