নজরবন্দি কাঁকিনাড়ায় ফের বোমাবাজি, কেন ফিরছে না শান্তি

জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। বদল হয়েছে পুলিশ কমিশনার। তবুও কাঁকিনাড়া বদলাচ্ছে না। শুক্রবার সকালে ফের বোমাবাজির ঘটনা ঘটল কাঁকিনাড়া বাজারে। এমনিতেই বন্ধ দোকানপাট। বাড়ি থেকেও খুব দরকার না হলে বেরোচ্ছেন না স্থানীয়রা। শুনশান কাঁকিনাড়ার রাস্তা ফের কেঁপে উঠল মুহুর্মুহু বোমার শব্দে।

কাঁকিনাড়া, ভাটপাড়া-সহ গোটা রাজ্যের অশান্তি নিয়ে শুক্রবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। রাজ্যপাল এ দিন বলেন,  “যাতে শান্তি ফিরে আসে তা সকলের দেখা উচিত। প্রশাসন, রাজ্যের মানুষ সকলের।” বৃহস্পতিবার গুলি চালানোর ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু এবং সাত জন জখম হওয়ার পর নবান্নে জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উচ্চপর্যায়ের সেই বৈঠক শেষে মমতা নির্দেশ দেন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ওই এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু হল কই?

পর্যবেক্ষকদের মতে, যে জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া, জগদ্দল— এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা মুশকিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ধরনের ঘটনা হলে প্রশাসনিক কাজ এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সমান্তরাল ভাবে করতে হয়। তা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে তাঁদের ব্যাখ্যা, এখানে তৃণমূলকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। যে নেতৃত্বকে এই এলাকায় দায়িত্ব দিয়েছিল দল, তাঁরা ফেল করেছেন। বিজেপি-র দাপটের সামনে দিশেহারা শাসক। তেমনই তথৈবচ অবস্থা পুলিশের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাটপাড়ায় যে ঘটনা ঘটছে তা আর শুধু রাজনৈতিক পরিসরে আটকে নেই। একটি সূত্রের মতে, এই এলাকার একটি সম্প্রদায়ের মানুষ কার্যত উৎখাত হচ্ছে প্রতিদিন। বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন গঙ্গার ওপারে হুগলির বিভিন্ন জায়গায়।

গোটা ঘটনা প্রবাহ যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে প্রশ্ন উঠছেই, প্রশাসন কোথায়? বিরোধীদের অনেকেরই প্রশ্ন, যেখানে থানা উদ্বোধন করতে যাওয়ার পথে গণ্ডগোল শুনে রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তাকে কনভয় ঘুরিয়ে ফিরে আসতে হয়, সেখানে কি আদৌ প্রশাসন বলে কিছু আছে? যদিও শাসকের অভিযোগ, বিজেপি-র নেতৃত্বেই দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি চলছে। পাল্টা বিজেপি-র অভিযোগ, ভোটে হেরে দিশেহারা শাসকদল মানুষকে ভয় দেখাতে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আর পুলিশ ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে দেখছে।

দলীয় রাজনীতির ধারেপাশে না থাকা মানুষ আতঙ্কিত। জুটমিল মহল্লায় ‘লেবার লাইন’ ভয়ে কাঁপছে। অঘোষিত কার্ফু চলছে ওই এলাকায়। সকলেরই একটাই প্রশ্ন, কবে স্বাভাবিক হবে এই এলাকা? ঠিক কত দিন লাগবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.