দিদি বলি, সম্মান করি, থাপ্পড়টা ঠিক জায়গায় পড়লে ভয় পেতে হত না: পুরুলিয়ায় মোদী

পুরুলিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে থাপ্পড় মারার কথা বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তোলাবাজি নিয়ে মোদী তৃণমূলের সমালোচনা করায় মমতা বলেছিলেন, “আমি ওঁকে গণতন্ত্রের থাপ্পড় মারতে চাই।”

বৃহস্পতিবার সেই পুরুলিয়াতে দাঁড়িয়েই মমতার থাপ্পড়ের জবাব দিতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, “আমাকে থাপ্পড় মারবেন বলছেন। কিন্তু আমি তো দিদি বলি, সম্মান করি। তবু আপনার থাপ্পড় মাথা পেতে নিচ্ছি। সঙ্গে এও বলছি, থাপ্পড়টা যদি তোলাবাজ, মাফিয়া, গুণ্ডাদের গালে মারতেন তা হলে আজ এত ভয় পেত হত না।”

গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়ায় বিপর্যয় হয়েছে তৃণমূলের। রুক্ষ মাটিতে সংগঠন অনেকটাই মজবুত করে ফেলেছে বিজেপি। এ দিন মোদীর সভায় উপচে পড়া ভিড় সম্ভবত তারই জানান দিচ্ছিল। তা দেখে প্রধানমন্ত্রীও উৎসাহী হন। বলেন, “পুরুলিয়ার এই সত্য দিল্লিতে বসে অনুমান করতে পারিনি।”

পুরুলিয়ায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্থানীয় ভাবে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা কম নয়। তার অন্যতম কারণ, নিচু তলার নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। সেই হোমওয়ার্ক প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত করেই এসেছিলেন। সেই সঙ্গে হয়তো এও জানেন, পুরুলিয়ায় শাসক দলের পর্যবেক্ষক হলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতাকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করে মোদী এ দিন বলেন, “দিদি এখন ভাইপোর কেরিয়ার বানাতে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে মাফিয়াতন্ত্রকে তৃণমূল সরকারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ করে ফেলেছে। ফলে তৃণমূলের মন্ত্রী আর বিধায়করা ঘোটালাবাজি করে বেড়াচ্ছেন। আর তৃণমূলের নেতারা লাগামছাড়া তোলাবাজি করছেন। ফলে পুরুলিয়ার আদিবাসী ও জনজাতিদের দিকে খেয়াল দেওয়ার সময় নেই তাদের।

পুরুলিয়ার কয়লা খনি থেকে বেআইনি খনন ও মাফিয়াশাহী নিয়েও এদিন তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, বাংলায় এ বার যে আসনগুলিতে বিজেপি অধিক নজর দিয়েছে তার মধ্যে জঙ্গলমহলের পাঁচটি আসন অন্যতম। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও মেদিনীপুর। মোদী ও অমিত শাহর সভাও তাই এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে এই আসনগুলিতে প্রভাব পড়ে। এর আগে গত ৬ মে ঝাড়গ্রামে সভা করেছেন মোদী। মেদিনীপুরের তমলুকেও সভা হয়েছে তাঁর। কাল শুক্রবার ফের জঙ্গলমহলে সভা করতে পারেন অমিত শাহ।

বিজেপি-র এই কৌশল আঁচ করতে পেরে মমতাও এখন জঙ্গলমহলের মাটি আঁকড়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁকুড়ায় সভা রয়েছে তাঁর। পুরুলিয়াতেও একটা সভা করার কথা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এ হেন পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে ভোট কাটাকাটির উপর বেশি ভরসা করছে তৃণমূল। পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন বিধায়ক নেপাল মাহাতো। বাঁকুড়ায় সিপিএমের প্রার্থী বলেন অমিয় পাত্র। তৃণমূল আশা করছে, এখানে কংগ্রেস ও সিপিএম ভোট কাটলে তাদের সুবিধা হবে। বিপরীতে বিজেপি অবশ্য মেরুকরণের পূর্ণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার উপাদান মূলত দুটি। এক, কট্টর হিন্দুত্ব। দুই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। আর তাই মোদী বারবার এই বার্তাই দিচ্ছেন, তিনি তথা বিজেপি-ই পারে তৃণমূলকে রুখে দিতে। আর কারও সেই শক্তি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.