১০ জন৷ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধান সেনাপতি অমিত শাহর বাহিনীতে ১০জন সেনাপতি রয়েছেন৷ নরেন্দ্র মোদীকে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর কুর্শিতে বসাতে অমিত শাহ সারা দেশে যে ‘নেটওয়ার্ক’ ছড়িয়েছেন তার কোণায় কোণায় রয়েছেন বাহিনীর প্রধান সদস্যরা৷ কারা এরা? কেন্দ্রীয় বিজেপি সূত্র বলছে – ভূপেন্দ্র যাদব, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরুণ সিং, রাম মাধব, মূরলীধর রাও, ধর্মেন্দ্র প্রধান, প্রকাশ জাভারেকর, জে পি নাড্ডা, অনীল জৈন৷ এই নয় জনই নির্বাচন যুদ্ধে অমিতের তুরুপের তাস৷ যদিও অমিত শাহের কোর টিমে ৩০ থেকে ৩৫ জন সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সম্পাদক, জাতীয় সাধারণ সম্পাদকরা রয়েছেন৷ তবে বিজেপি সূত্রের মতে ওই ১০ জনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে৷
ভূপেন্দ্র যাদব বিজেপির একজন অন্যতম সাধারণ সম্পাদক৷ পার্টি থেকে তিনি বিহারের দায়িত্বে আছেন৷ বিহারের জোট গঠনে অন্যতম ভূমিকা গ্রহণ করেছেন৷ লালু প্রসাদ-তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে বিহারে জোট সরকারে রয়েছে বিজেপি, জেডি-ইউ এবং লোকজনশক্তি পার্টি (এলজেপি)৷ ২০১০ সালে নীতিন গড়কড়ির হাত ধরে জাতীয় সম্পাদক হয়েছিলেন৷ এরপর – রাজস্থান ( ২০১৩), গুজরাট (২০১৭) এবং ঝাড়খন্ড (২০১৪) এবং উত্তর প্রদেশে (২০১৭) সালের বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে বিজেপির জয়লাভে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন৷ চোখে পড়ে যান অমিত শাহর৷ ভূপেন্দ্রকে বলা হয় ওয়াররুম স্ট্র্যাটেজিস্ট৷ তিনি ভৌগলিক অবস্থান এবং জনঘনত্বের বিচার করে ভোট বিশ্লেষণে পারদর্শী৷ বিজেপিতে বলা হয় – দলিতদের মন বুঝতে ‘পাক্কা’লোক ভূপেন্দ্র৷
কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের গুরুদায়িত্বে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ৷ বাংলায় বিজেপির ভাগ্যনির্ধারণ করবেন কৈলাস৷ কৈলাস নির্ভর করছেন তার প্রধান অস্ত্র মুকুল রায়ের উপর৷ মধ্যপ্রদেশের নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এক সময় ওই রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন৷ অমিত শাহ বাংলায় দাঁড়িয়ে বলে গিয়েছেন – বিজেপি ২২-২৩টি লোকসভা আসন জিতবে৷ কিন্তু বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির কথা যে শুধু কথার কথা নয় – তা প্রমাণ করে দেখাতে হবে কৈলাসকে৷ এর আগে হরিয়ানার দায়িত্ব নিয়ে নিজের ক্ষমতা প্রমাণ করেছেন কৈলাস৷
অরুণ সিং শাহ ঘনিষ্ঠ বিজেপির এক নেতা৷ বর্তমানে তিনি পরাটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক৷ পার্টির যুবমোর্চা থেকে উঠে এসে শাহর কোর টিমে জায়গা করে নিয়েছেন৷ পার্টির তরফে তিনি ওড়িশার দায়িত্বে রয়েছেন৷ নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়াই তার মূল লক্ষ্য৷ লোকসভা নির্বাচন খেকেই আক্রমণ শানাতে চান অরুণ৷
মূরলীধর রাও দক্ষিণী নেতা৷ তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি৷ দক্ষিণে বিজেপির অবস্থান তেমন মজবুত নয়৷ জোটসঙ্গী খুঁজছে বিজেপি৷ ইতিমধ্যেই এআইএডিএমকে-এর সঙগ্গে গাঁটছড়া বেধেছে বিজেপি৷ কিন্তু কর্ণাটক নির্বাচনে প্রার্থীত সাফল্য আসেনি৷ সঙ্ঘ পিরবার থেকে আসা রাও ২০০৯ সালে বিজেপিতে যোগদান করেন তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহের হাত ধরে৷ পরে নীতিন গড়কড়ি তাকে জাতীয় সম্পাদক করেন৷
অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অনীল জৈনের দায়িত্বে ছত্তিশগড়৷ শেষ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ওই রাজ্যের ক্ষমতা হারিয়েছে৷ কিন্তু ছত্তিশগড়ের ১১টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১০টি বিজেপির দখলে৷ কিন্তু ২৩ মে-এর পর কটি বিজেপির দখলে থাকবে – তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ সেক্ষেত্রে অনীল জৈনের কাজটা শক্ত বলেই মনে হচ্ছে৷ বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রামমাধব, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্রপ্রধান, মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা যিনি বিজেপির সংসদীয় দলের সেক্রেটারিও বটে – অমিত শাহের১০ সেনাপতির মধ্যে অন্যতম৷
এরপরেই আসছে উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যতম বিজেপি নেতা তথা নর্থ ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (নেডা) আহ্বায়ক ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মার নাম৷ প্রাক্তন কংগ্রেসী এখন বিজেপির তুরুপের তাস৷ তাঁর হাত ধরেই অসম সহ বাকি রাজ্যগুলিতে বিজেপি তার গেরুয়া পতাকা উড়িয়েছে৷ এমনকি ত্রিপুরার পট পরিবর্তনেও হিমন্ত বিশ্বশর্মা বিশেষ ভূমিকা নেন৷৷ জাতীয় নাগরিকপঞ্জি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মতো জ্বলন্ত ইস্যুতে উত্তর পূর্বে বিজেপি ব্যাকফুটে তা স্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ এই অবস্থায় অসমের মন্ত্রী হিমন্তের উপর বড় আশা বিজেপির৷