দু’দিন আগেই দ্য ওয়াল-এ প্রথম লেখা হয়েছিল উত্তরবঙ্গের দুটি জেলা পরিষদ হাতছাড়া হতে পারে তৃণমূলের। বৃহস্পতিবার অন্য একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রাক্তন তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গোপন বৈঠক সেরেছেন। আর শুক্রবার থেকেই ‘নিরুদ্দেশ’ তিনি।
কোথায় গেলেন বিপ্লব?
তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রের খবর, বিপ্লববাবু এখন দিল্লিতে রয়েছেন। তিনি একা নন। তাঁর সঙ্গে রাজধানীতে রয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের ১৪ জন নির্বাচিত সদস্য। সূত্রের আরও খবর, দু’এক দিনের মধ্যেই দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিজেপি সদর দফতরে গিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে পারেন একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম বিশ্বস্ত সৈনিক।
১৮ আসনের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ বিরোধী শূন্য। এখন ১৪ জন যদি গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন, তাহলে জেলা পরিষদ দখল করবে বিজেপি। আর তা সত্যি হলে, এটাই হবে বাংলায় বিজেপি-র প্রথম জেলা পরিষদ দখল। বিজেপি নেতারা খোলাখুলি কিছু না বললেও ঘরোয়া আলোচনায় অনেকেই বলছেন, এরপর লাইন দিয়ে উত্তরবাংলার জেলা পরিষদে ভাঙন শুরু হবে।
তবে বিজেপি জেলা পরিষদের দখল নিতে পারলে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে তৃণমূল। লোকসভার একটাও আসন জিততে পারেনি। বিজেপি-র কৌশল স্পষ্ট। বিধানসভা ভোটের আগেই উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ পুরসভা-পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখল করে নিরঙ্কুশ হয়ে উঠতে চাইছে গেরুয়া শিবির। পর্যবেক্ষকদের মতে, জেলা পরিষদের দখল নিয়ে নেওয়া মানে, সংশ্লিষ্ট গ্রামাঞ্চলে সমস্ত প্ৰকল্প এ বার রূপায়িত হবে বিজেপি-র হাত ধরে।
এ বারের লোকসভা ভোটে বালুরঘাট আসনে বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ। এই পরাজয়ের পিছনে তৎকালীন তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের হাত ছিল বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। কেন না অর্পিতাকে প্রার্থী করা নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল বিপ্লব ও তার অনুগামীদের। ফলাফল খারাপ হতেই অর্পিতার পরাজয়ের দায়ভার বর্তায় বিপ্লব মিত্রর উপর। জেলা সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। পরাজিত প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ জেলায় দলের জেলা সভাপতি করেন। যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বিপ্লব মিত্র ঘনিষ্ঠ উত্তম ঘোষকে। সেখানকার দায়িত্বে আনা হয় অর্পিতা অনুগামী অম্বরীশ সরকারকে।
ইতিমধ্যেই ভাটপাড়া, কাঁচড়াপাড়া, হালিশহরের মতো পুরসভার দখল নিয়ে ফেলেছে গেরুয়া বাহিনী। নোয়াপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক সুনীল সঙ্গের বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন ১৭ আসনের গারুলিয়া পুরসভার ১৩জন কাউন্সিলর। বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস-সহ বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলরা লাইন দিয়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে। সূত্রের খবর, এ বার ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বারাসত ও কল্যাণী পুরসভাও। অন্যদিকে শুক্রবার কালচিনির তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্পামারিকে দেখা গিয়েছে দিল্লিতে মুকুল রায়ের বাড়িতে। তিনিও বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন বলে খবর।
উত্তরবঙ্গে এমনিতেই লোকসভায় শূন্য পেয়েছে তৃণমূল। পর্যবেক্ষকদের মতে, এ বার যদি জেলা পরিষদও চলে যায়, তাহলে একুশের আগে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে শাসক দলকে।
এ ব্যাপারে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “যাঁরা জিতেছিলেন তৃণমূলের টিকিটে, তঁরা যদি বিজেপি-তে যান, তাহলে মানুষই বুঝবে কারা বেইমান। ঠিক সময়ে তাঁরা জবাব দেবেন।” পাল্টা বিজেপি-র বক্তব্য, “মনে নেই কী ভাবে মুর্ষিদাবাদ জেলা পরীষদ জোর করে ভাঙিয়েছিল তৃণমূল? তখন এ সন জ্ঞানের বাণী কোথায় ছিল?”