ভোটের ভাবনা : ফিস ফ্রাইয়ের ঋণ! জোট ভেস্তে মমতার সুবিধা করে দিল বাম

কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেস্তে দিয়ে আখেরে কী তৃণমূলের সুবিধাই করে দিল সিপিএম? জোট পরিকল্পনা পুরোপুরি ভেস্তে যাওয়ার পর এমনই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। মঙ্গলবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে আরও ১৩ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়ে দেন, কংগ্রেসের জেতা চারটি আসনে তাঁরা প্রার্থী দিচ্ছেন না। যদি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনও ইতিবাচক বার্তা না মেলে, তবে তাঁরা ওই আসনগুলোতে প্রার্থী দেবেন। এমন ভাবনার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে মাত্র ২৪ ঘন্টা দিয়েছিলেন বিমান বসু । পাল্টা সবিনয়ে বিমান বসুর এমন প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে রাজ্যের ২৪ টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। ফলস্বরূপ, এবার রাজ্যের সবকটি লোকসভা আসন এই চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। রাজনৈতিক মহলের, ধারণা যার সুফল পেতেই পারে বাংলা শাসক দল। কারণ চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ফসল যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই পায়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট। ‌ সেবার নরেন্দ্র মোদীর প্রবল ঝড়েও রাজ্যে ৩৪ টি আসন জিততে সক্ষম হয়েছিল তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সৌজন্যে আবারও সেই মওকা পেতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম কংগ্রেস জোট না হলে তৃণমূল কংগ্রেস যে বাড়তি সুবিধা পেতে চলেছে তা মেনে নিয়েছেন আর এস পি সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী। ‌ তিনি বলেন, “জোট নিয়ে কংগ্রেস ও বাম কর্মী সমর্থকদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি এত দীর্ঘ টানা হয়েছে এবং তা শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। এমন ভোট বিভাজনের সুযোগে বাড়তি সুবিধা পেতেই পারে তৃণমূল কংগ্রেস। সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে পড়ে বাংলার নেতারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।” সমাবেশের পর ভোটারদের মধ্যে যে বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল জোট না হওয়ায়, সেই প্রক্রিয়াও জোর ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন এই প্রাক্তন মন্ত্রী। তবে এ কথা একেবারেই মানতে নারাজ সিপিআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কথায়, “বাম কংগ্রেস জোট না হলে তৃণমূল বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাবে আমার এমনটা মনে হয় না। কারণ ২০১৬ সালের ভোটের পর ফলাফল বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছিলাম বাম ভোটাররা কংগ্রেসকে ভোট দিলেও কংগ্রেস বা বামফ্রন্টের ভোটাররা আমাদের ভোট দেননি। হয় তারা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন নাহলে বিজেপিতে।” তবে এই জোট ভাঙার দায় প্রকাশ্যেই সিপিএম নেতাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। বিরোধী ‌দলনেতা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, জোটবদ্ধ কর্মসূচি তথা জোট শব্দ, সবেতেই আপত্তি ছিল সিপিএমের। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এমন কিছু নেতাদের সিপিএম কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় নামিয়েছিল যাদের জন্য ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে জোট প্রক্রিয়া অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছিল। তাই জোট ভাঙ্গার দায় সিপিএমকেই নিতে হবে। তাতে যদি কোনও রাজনৈতিক দল বাড়তি সুবিধা পায় তার দায়ও তাদেরই।”

নীল রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.