বিপদ হতে পারে সেটা আগেই আঁচ করেছিলেন শতাব্দী রায়। সেই কারণেই জনসভায় যাওয়ার রাস্তা বদলে নেন। কিন্তু তাতেও রেহাই পেলেন না। বিক্ষোভকারীরা অনেক দূরের জনসভায় পৌঁছে গেলেন হেঁটে হেঁটে। আর তার পরেই নাটকীয় ঘটনা সিউড়িতে।
মঙ্গলবার বীরভূমের বিদায়ী সাংসদ তথা বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শতাব্দী রায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন সিউড়িতে। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে আঁচ করেই নেতা কর্মীদের নিয়ে ঘুরপথে জনসভায় বক্তব্য রাখতে যান। কিন্তু সিউড়ি পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বক্তৃতা শেষ করার আগেই বিক্ষোভাকারীরা সভাস্থলে চলে আসেন। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন মহিলা।
প্রার্থী তাঁদের সঙ্গে দেখা না করেই প্রচার সারতে চাইলেও তাঁরা যে ছাড়বার পাত্র নন, সেটা বুঝিয়ে দিলেন এলাকার মহিলারা। শেষে বক্তৃতা থামিয়ে বিক্ষোভাকারীদের কথা শুনতে হল শতাব্দী রায়কে।
জানা ছিল, ওই রাস্তা দিয়েই যাবেন শতাব্দী রায়। সেই মতো বিক্ষোভকারীরা পথে অপেক্ষা করছিলেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে তাঁরা বুঝতে পারেন এই পথে প্রার্থীর দেখা মিলবে না। এর পরেই প্রায় দু’কিলোমিটার পথ হেঁটে তাঁরা পৌঁছে যান সভাস্থলে। সেখানে গিয়ে শতাব্দীর বক্তব্য থামিয়ে মহিলারা আঙ্গুল উঁচিয়ে একের পর এক অভিযোগ ছুঁড়তে থাকেন। মহিলাদের অভিযোগ কখনও পানীয় জল নিয়ে তো কখনও গত পাঁচ বছরে সাংসদকে এলাকায় না দেখা যাওয়া নিয়ে।
আচমকা বিক্ষোভের মুখে পড়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যান বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শতাব্দী রায়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টাও করেন। বিক্ষোভকারী মহিলাদের সমস্যা জানতে চান। এর পরে আরও নাটকীয় চেহারা নেয় পরিস্থিতি। প্রশ্ন ওঠে, গত পাঁচ বছর আগে ভোটের প্রচারে এসে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো এলাকায় জল সমস্যা থেকে, রাস্তাঘাট, বাজার, আলোর সমস্যা মেটেনি কেন। কেউ কেউ বলেন, “আপনার প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রেখে আমরা আপনাকে ভোট দিয়েছিলাম, কিন্তু গত পাঁচ বছরে না কোনও পরিষেবা পেয়েছি, না আপনার দেখা পেয়েছি।”
এমনই সব অপ্রীতিকর প্রশ্ন সামাল দিতে নাজেহাল শতাব্দী রায় কোনও রকমে গাড়িতে উঠে এলাকা ছেড়ে চলে যান। স্থানীয় মহিলা সুপ্রিয়া ফুলমালি বলেন, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দিয়েছিলাম, দিদির উন্নয়নকে সমর্থন করেছিলাম, এখন দেখছি দিদির যে ভাইরা রয়েছেন, উন্নয়ন শুধু তাঁদেরই হচ্ছে আর সাধারণ মানুষের সমস্যা আরও বেড়েছে। যে সব মানুষের সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা তাঁরা বঞ্চিত আর যাঁদের পাওয়ার কথা নয় তাঁরা সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে। না পুর প্রতিনিধি, না বিধায়ক, না সাংসদ কাউকে বলেই সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আজকে বিক্ষোভ দেখিয়েছি।”
বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শতাব্দী রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “ওরা কেউ আমার মা, কেউ আমার ছোট বোন বা বন্ধুর মতো, কিছু সমস্যার কথা বলেছে। আমি বলেছি ভোটের পরে নিশ্চয়ই কাজগুলো হবে।”