সুপ্রিম কোর্ট বিমানবন্দরের সোনা কাণ্ডের রিপোর্ট তলব করায় ব্যাপক দুশ্চিন্তায় তৃণমূল!
শুক্রবার উচ্চ আদালতে সারধা মামলার শুনানিতে দমদম বিমানবন্দরের ঘটে যাওয়া বিতর্কিত সোনা কাণ্ডের প্রসঙ্গটি ওঠে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর এজলাসে অভিযোগ করা হয়, বাংলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তলানিতে এসে ঠেকেছে। কেন্দ্রীয় কোনও তদন্তকারী এজেন্সি আইন মেনে কাজ করতে গেলে রাজ্য পুলিশ তাতে বাধা দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রেফতারও করতে চাইছে। সঙ্গে সঙ্গেই সলিসিটর জেনারেল বিমানবন্দর কাণ্ডের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বিচারপতিদের বলেন, কলকাতা বিমানবন্দরের একটি সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যে ঘটনা থেকে আপনারা বুঝতে পারবেন, পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির কতটা অবনতি হয়েছে। সলিসিটর জেনারেল আদালতকে জানায়, গত ১৫ ও ১৬ মার্চের মাঝের রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের বিমানে দুই মহিলা এসে নামেন। এঁদের মধ্যে একজন হলেন পশ্চিমবঙ্গের এক প্রভাবশালী সাংসদের স্ত্রী। তাঁদের কাছে সাতটি বড় ব্যাগ ছিল। এক্স রে মেশিনে স্ক্যান করার সময় তাঁদের দুটি ব্যাগে সন্দেহজনক জিনিস দেখা যায়। তাঁদের ব্যাগ খুলতে বলেন বিমানবন্দরে দায়িত্বরত শুল্ক দফতরের কর্তারা। কিন্তু তাঁরা তা না করে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এসে শুল্ক দফতরের কর্তাদের কাজে বাধা দিতে শুরু করে। গভীর রাতে গোটা বিমানবন্দর ঘিরে ফেলে পুলিশবাহিনী।। এমনকী, পুলিশ এক সময়ে শুল্ক দফতরের অধিকারিকদের গ্রেফতার পর্যন্ত করতে যায়। পরে শুল্ক দফতরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়। গোটা ঘটনাই যে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা রয়েছে তা বার বার আদালতকে জানান সলিসিটর জেনারেল।
এদিন রাজ্যের আইনজীবী ছিলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্যের বিরুদ্ধে তিনি আপত্তি তোলেন। অভিষেক মনু সিঙভি বলেন, “চলতি মামলার সঙ্গে এ ঘটনার কোনও যোগ নেই, প্রাসঙ্গিকতা নেই।” কিন্তু প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে সলিসিটর জেনারেলকে ঘটনার একটি লিখিত রিপোর্ট পেশ করতে বলেন। আর উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশে তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছে। কারণ, বিমানবন্দরে সোনা কাণ্ড যে মুখ্যমন্ত্রীকে চরম বিড়ম্বনায় ফেলেছে তা প্রকাশ পেয়েছিল চলতি সপ্তাহে নবান্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর জবাবে। বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রীর উওর ছিল, “রোজ রোজ দয়া করে আমাকে এই প্রশ্ন করবেন না। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই।” আর তাঁর সাংসদ ভাইপো গত ২৪ মার্চ আমতলায় নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে হুঁশিয়ারি ছেড়েছিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, যেভাবে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে সোনা পাচারের অভিযোগ করা হচ্ছে। তাতে তাঁর পরিবারের ভাবমূর্তি কলুষিত হয়েছে। যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির দিকে আঙুল তুলে, তিনি পাল্টা অভিযোগ করেছিলেন, যদি বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
এমত অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের সলিসিটর জেনারেল প্রমাণের পক্ষে জোরালো সওয়াল করায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্বের। কারণ এমন ঘটনার ফুটেজ প্রকাশ্যে এলে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিতে দাগ লাগতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে, এরপর বিষয়টি নিয়ে যদি বিরোধীরা লোকসভা ভোটে সঠিক ভাবে প্রচার করতে পারে তাহলে ভোটব্যাঙ্কে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে তৃণমূল। যার সম্ভাবনা প্রবল!