দু’দিন বাদে বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ হবে। তার আগে সাংবাদিক বৈঠক করে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক। ভোটকে কেন্দ্র করে বাংলায় উপর্যুপরি হিংসার ঘটনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “পনেরো বছর আগে বিহারে যা অবস্থা ছিল, এখন সেই অবস্থা বাংলায়।”
শুধু তা নয়, রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। বিশেষ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক বলেন, “রাজ্যের পুলিশের উপর মানুষ আস্থা হারিয়েছে। আর সেই কারণেই প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য জোরালো দাবি উঠছে।”
বিশেষ পর্যবেক্ষকের মন্তব্যকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মত বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি। তবে এই অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসারের মন্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। কারণ, পর্যবেক্ষকদের অনেকের বক্তব্য, বিশেষ পর্যবেক্ষকের কাজ হল, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে কিনা তা সুনিশ্চিত করা। তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে বাংলায় বিরোধী দলগুলি তথা বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম, তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র করে নিতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা অবশ্য বলেন, বিশেষ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অজয় নায়েকের কথায় হয়তো অবধারিত কারণেই বিহারের উদাহরণ চলে এসেছে। কেন না, এর আগে উনি বিহারের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক পদে দীর্ঘদিন ছিলেন। ফলে বিহারে ভোট পরিচালনা করার ব্যাপারে তাঁর সম্যক ধারনা রয়েছে। হতে পারে সেই ধারনার সঙ্গেই তিনি বাংলার পরিস্থিতির তুলনা টেনেছেন।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে অজয় নায়েক আরও জানান, তৃতীয় দফায় অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল যে পাঁচটি লোকসভা আসনে ভোট গ্রহণ হবে, সেখানে ৯২ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখা হবে। ৮ শতাংশ বুথে রাজ্য পুলিশ থাকবে। তবে তাঁরা কেউই লাঠিধারী পুলিশ নন, সশস্ত্র পুলিশই নিয়োগ করা হবে ওই সব বুথে।তিনি আরও জানান, ভোট যত এগোবে ততই কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। কমিশন চেষ্টা করবে যাতে সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যায়।
কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রথম চার দফার মধ্যে বহু রাজ্যে ভোট মিটে যাবে। ফলে সেখান থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও কয়েক শ বাটালিয়নকে বাংলায় ভোটের দায়িত্বে আনা হবে। তা ছাড়া বাংলার পরিস্থিতির কথা আগাম আঁচ করেই শেষ দিকের দফা গুলিতে বেশি সংখ্যায় আসনে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৯ এপ্রিল বাংলায় চতুর্থ দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে আটটি আসনে, ৬ মে ভোট হবে সাতটি আসনে, ১২ মে আটটি আসনে এবং ১৯ মে তথা শেষ দফায় ৯ টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে বাংলায়।
বাস্তব হল, বাংলায় এ বার প্রথম দফার ভোট গ্রহণের আগে থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে বিভিন্ন মহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি উঠতে শুরু করেছে। কখনও ভোট কর্মীরা দাবি করেছেন, বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন বাধ্যতামূলক করা হোক, কখনও গ্রামবাসীরা সেই দাবি করেছেন। তারপর ক্রমশ তা এখন ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া এও দেখা যাচ্ছে, রাজ্য পুলিশ যে সব বুথে দায়িত্বে রয়েছে সেখানে মানুষ প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করছে, এমনকী বিক্ষিপ্ত ভাবে বুথে তালা লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সার্বিক এই পরিস্থিতি অনিবার্য ভাবেই নির্বাচন কমিশনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। কারণ, গোটা দেশের মধ্যে এ ধরনের হিংসা বা ভোট পরিস্থিতি আর কোথাও তৈরি হয়নি। এমনকী বিশেষ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এ দিন দৃশ্যত হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “মানুষ যদি বিহারের পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে, তা হলে বাংলায় কেন তা হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।”