তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। ডাক্তারিও পাশ করেছেন সেখান থেকেই। হালে স্মিতা বক্সীকে সরিয়ে তাঁকে অর্থাৎ রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী নির্মল মাজিকে এন আর এস মেডিকেল কলেজের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তিনিই একবার বলেছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। এ বার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দাঁড়িয়ে নির্মলবাবু দাবি করলেন, স্যর রোনাল্ড রস নাকি এমডি পাশ করেছেন এই কলেজ থেকেই।
সোমবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গনে ১২ ফুট উচ্চতার বিধানচন্দ্র রায়ের ব্রোঞ্জের মূর্তি উন্মোচন করেন মন্ত্রী। সেখানেও প্রথমে বিপত্তি বাধে। নির্মলবাবু মালা পরাতে গেলে সেটি ছিঁড়ে পড়ে যায়। পরে মালায় গিঁট বেঁধে মূর্তিতে পরান তিনি। মূর্তি উন্মোচনের পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ঐতিহ্য প্রসঙ্গে বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, স্য়র রোনাল্ড রস নাকি ডাক্তারিতে এমডি করেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকেই। মন্ত্রীর কথা শুনে স্বভাবতই হাসির রোল ওঠে দর্শকাসনে বসা ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতালের কর্মীদের মধ্য়ে। চরম বিড়ম্বনায় পড়েন অনুষ্ঠানের আয়োজকরাও।
আগেও বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন নির্মল মাজি। এর আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসে মন্ত্রী বলেছিলেন, এশিয়ার প্রথম মেডিক্যাল কলেজ তথা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তাঁর কথা শুনে চাপা হাসির রোল উঠলে, মন্ত্রী সামলে নিয়ে বলেন ডিরোজিও নন, কলকাতা মেডিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ডেভিড হেয়ার। আজকে স্যর রোনাল্ড রসের মন্তব্য প্রসঙ্গে জানার জন্য অনেকবারই নির্মলবাবুকে ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন তোলেননি।
মন্ত্রীর বক্তব্য শুনে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এ কে বসু বলেন, ‘‘এমন তথ্য জানা নেই। শুনিনি। এখানে কাজ করেছেন। সব পড়াশোনা লন্ডনে বলেই জানি।’’ অন্য এক অধ্যাপক বলেন, এমন তথ্য নির্মল দাকে কে দিলেন জানি না।
তাঁর লেখা বই রবীন্দ্র পুরস্কার পায়। এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে শঙ্করবাবু বলেন, “স্য়র রোনাল্ড রস-এর জন্ম ভারতের আলমোড়ায় ১৮৫৭ সালে। ছোটবেলাতেই পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। সেন্ট বার্থেলোমিউ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারিতে স্নাতক হন। পাবলিক হেল্থ-এর ওপর পড়াশোনা করে ভারতে ফিরে এসে, ইন্ডিয়ান মেডিকাল সার্ভিসে যোগ দেন ১৮৮১ সালে। অ্যানোফিলিস মশার কামড়েই যে ম্যালেরিয়া হয়, তা আবিষ্কার করেন স্যর রোনাল্ড রস।” শঙ্করবাবুর কথায়, “পিজি হাসপাতালে কাজ শুরু করেছিলেন স্য়র রোনাল্ড রস। ম্যালেরিয়া রোগের কারণ যে একটি মশা সেটা প্রথম আবিষ্কার করে স্য়র রোনাল্ড রস। কী ভাবে মশা বাহিত জীবানু পরজীবী মারফৎ এক রোগীর দেহ থেকে অন্য রোগীর দেহে স্থানান্তরিত হয় সেটাই বার করেছিলেন রোনাল্ড রস। এই কাজ অবশেষে তাঁকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয়। ১৯০২ সালে পান ফিজিয়োলজি ও মেডিসিন বিভাগে নোবেল প্রাইজ। ”