সিটিজেনশিপ আ্যমেন্ডমেন্ট বিল বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এই ইস্যুতে দক্ষিণবঙ্গে সবচেয়ে সোচ্চার ছিলেন বনগাঁ কেন্দ্রের নবনির্বাচিত সাংসদ। সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর প্রথমে পণ করে বসেছিলেন ঠাকুরবাড়ি থেকে রাজনীতি দূর করবেন, সেই কারণে নিজে ভোটে দাঁড়াতে চাননি, শেষে মোদিজী নিজে ওনাকে দিল্লী ডেকে পাঠান, এবং শান্তনুকেই বনগাঁ থেকে ভোটে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে লড়াই করতে বলেন।
![](http://ritambangla.com/wp-content/uploads/2019/05/matua-759-1.jpg)
শোনা কথা, তখনও শান্তনুবাবু সিটিজেনশিপ আ্যমেন্ডমেন্ট বিলকে আইনী বৈধতা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করেন। অসংখ্য হিন্দু বাঙালি উদ্বাস্তু যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন দেশভাগের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে, তাদের অনেকেই এখনো ভারতের বৈধ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাননি, নাগরিক সুযোগ সুবিধা পেতেও তাদের কঠোর সংগ্রাম করতে হয় ও হয়েছে। অথচ বছর খানেক আগে আগত রোহিঙ্গারা এখানে আসবার পরেপরেই সমস্তরকম সুবিধে পেয়ে যায় শাসকদলের তোষণনীতির বদান্যতায়।
হিন্দু উদ্বাস্তুদের প্রতি সীমাহীন অবহেলা ও মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের জামাই আদর করা হয়ে আসছে সেই বাম আমল থেকেই কারণ মুসলিমদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখতে স্বার্থান্বেষী ভন্ড রাজনৈতিকদের অভাব নেই পশ্চিমবঙ্গে। এমনকি বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগে সাংসদ থাকাকালীন অবস্থায় লোকসভাতে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ নিয়ে সবর হয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেই ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে উদ্দাম তোষণনীতির কারবার খুলে বসেন। এবং দীর্ঘকাল থেকে চলে আসা এই তোষণনীতির সবচেয়ে বড় শিকার নমঃশূদ্র মতুয়া সমাজ।
![](https://i1.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2019/05/IMG-20190323-WA0077.jpg?fit=1024%2C682)
শান্তনু ঠাকুর মতুয়া সমাজের এই দুঃখ ও ক্ষোভ উপলব্ধি করেন এবং সংকল্পবদ্ধ হন এই অবিচারকে দূর করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন বলে। তিনি রাজনীতির কারণে দ্বিধাবিভক্ত মতুয়া সমাজকে হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শে পুনরায় অনুপ্রাণিত করে একজোট করবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। এরজন্যে তিনি পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, আসাম, বিহার, ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় ও ওড়িশার অধিবাসী মতুয়া ও নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে আত্মিক বন্ধন স্থাপন করেন। হরিনামে আবার মুখরিত হয়ে ওঠে মতুয়া সমাজ।
এই কাজের জন্য শান্তনু ঠাকুরকে সহ্য করতে হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে অত্যাচার, ওনার নামে কুৎসা করা হয়েছে, মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করিয়ে হাজতবাসও করানো হয়েছে কারণ তিনি ক্ষমতালোভী রাজনৈতিকদের কায়েমী স্বার্থে আঘাত করেছিলেন, মতুয়াদের সঙ্ঘবদ্ধ করছিলেন বৃহত্তর মতুয়া ও নিম্নবর্গের নিপীড়িত মানুষের স্বার্থে। এমনকি ভোটের দুদিন আগে প্রশাসনের তরফ থেকে একটি গাড়ি শান্তনুবাবুর গাড়িতে এসে জোরে ধাক্কা মেরে গুরুতরভাবে আহত করে ওনাকে। তবুও আটকানো যায়নি, মানুষের ভালোবাসা ও শান্তনুবাবুর নিঃস্বার্থ কাজের জন্য উনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন।
![](https://i0.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2019/05/WhatsApp-Image-2019-04-14-at-12.05.36-PM-1024x768.jpeg?fit=1024%2C768)
তবে ওনার কাজের সু্ফল উত্তরবঙ্গে বিজেপির জেতা নিশ্চিত করেছে, কারণ পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রচুর। ভবিষ্যতে শান্তনু বাবু ওনার কাজ করে যেতে পারবেন এ নিশ্চিত, কারণ ওনার লক্ষ্য মতুয়া সমাজের উন্নতিসাধন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে শান্তনু বাবু যে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান করবেন ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে ভারতের মাটি থেকে তাদের বিতাড়নের ব্যবস্থা করবেন সেটা পশ্চিমবঙ্গবাসী আশা করতেই পারে।