দিদি দেখুন: আগের বর্ষায় ভেসে গেল সেতু, আর তো জুড়ল না

গত বছর দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল সেতুর একাংশ। বছর ঘুরে ফের এসেছে বর্ষা। কিন্তু সেতুর ভেঙে পড়া অংশটি একই রকম রয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে নহড়খাল পেরোতে গ্রামের মানুষ বাড়ি বাড়ি চাঁদা তুলে কোনও মতে বাঁশ দিয়ে জুড়েছেন খালের অপরপ্রান্তকে। বৃষ্টি পড়তেই খালে জলের ঘুর্ণি। একরকম প্রাণ হাতেই চলছে পারাপার। কারণ রুটিরুজির টানে পারাপার তো করতেই হবে।

ঝাড়গ্রামের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরগিডিহি গ্রাম। গ্রামের তিন দিক কৃষি জমিতে ঘেরা। একদিকে নহড়খাল। আর এই নহড়খালের উপর সেতুই যাতায়াতে একমাত্র ভরসা। সারাবছর তেমন জল না থাকলেও বর্ষাকাল এলেই ফুলে ফেঁপে ওঠে নহড়খাল। তখন সে যেন আস্ত নদী। গত বছরই জুলাই মাসে টানা দুদিনের বৃষ্টিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মুরগিডিহি গ্রাম ঢোকার একমাত্র পথ এই নহড়খালের সেতুর একাংশ।

তারপর থেকেই শুরু হয় মুরগিডিহি গ্রামের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগের দিন। পঞ্চায়েতকে বারবার আবেদন করেছিলেন বাসিন্দারা। সেতুটি সারিয়ে দেওয়ার জন্য। আশ্বাসও মেলে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই। বাধ্য হয়েই গ্রামবাসীরা বাড়ি বাড়ি চাঁদা তুলতে শুরু করেন। যাদের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁরা নিজের বাগানের বাঁশ দিয়ে নহড়খাল পেরোনোর অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করেন। ভেবেছিলেন ব্যবস্থা সাময়িক, কিন্তু বছর ঘুরলেও এখনও প্রতিদিন স্কুলে, হাসপাতালে বা কাজের সন্ধানে যেতে হলে এই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পেরিয়েই যেতে হয় সবাইকে।

মুরগিডিহি গ্রামে মোট ৪০ টি পরিবারের বাস। গ্রামে কেই চাকরি করেন না। মূলত দিনমজুর ও কৃষিজীবি সবাই। গ্রামে কোনও পাকা রাস্তা নেই। একটু বৃষ্টি হলেই এক হাঁটু কাদা। গ্রামের বাসিন্দা করুণা পাল বলেন , “আর কতদিন যে সরকারি আধিকারিকদের আশ্বাসের কথা শুনবো। এ বছরও মনে হয় আর সেতুটির সংস্কার হবে না। গ্রামে কোনও চারচাকা গাড়ি ঢোকে না, গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে কোলে করে বাঁশের সাঁকো পার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।”

পেটে সদ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে ৬৫ বছরের তরুবালা পালের। এক দিন আগেই বাড়ি ফিরেছেন। বলেন, “গাড়ি থেকে নেমে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে বাড়ি আসতে খুবই কষ্ট হল। সরকারের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, গ্রামের সেতুটি তৈরি করে দিলে আমরা এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব।”

গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী যুথিকা পাল বলে, “বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে স্কুল যেতে খুব ভয় করে। বেশি বৃষ্টি হলে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের গ্রামের কেউ স্কুল যেতে পারে না।”

দিদির কাছে পৌঁছে যাক তাঁদের এই যন্ত্রণার কথা, চাইছে গোটা মুরগিডিহি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.