বেতন কমিশন কি মূল বেতনের সঙ্গে ডিএ মিশিয়ে দেবে? কী বললেন অভিরূপ সরকার

মহার্ঘ ভাতা প্রশ্নে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল তথা স্যাট-এর নির্দেশের পর এ বার ষষ্ঠ বেতন কমিশন নিয়ে নবান্নের উপর চাপ বহুগুণে বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।

সেই সঙ্গে কর্মচারী মহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, নতুন হারে ডিএ কবে থেকে দেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার? তা কি ষষ্ঠ বেতন কমিশনে মূল বেতনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে? না কি বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আগেই ডিএ ঘোষণা করে দেবে নবান্ন? কর্মচারীদের বড় অংশের বক্তব্য, তাঁদের পে কমিশন দ্রুত লাগু করা তাঁদের বৃহত্তর দাবি।

এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার গঠিত ষষ্ঠ বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “স্যাট যা বলেছে তার সঙ্গে বেতন কমিশনের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে বছরে দু’বার মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর যে কথা ট্রাইবুনাল বলেছে সেটা বেতন কমিশনের সুপারিশে রাখা যায় কিনা সেটা ভেবে দেখা হবে”।

তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশে মূল বেতনের সঙ্গে কি বকেয়া ডিএ মিশিয়ে দেওয়া হবে?  জবাবে অভিরূপবাবু বলেন, “এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে।”

ষষ্ঠ বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কবে পেশ করা হবে জানতে চাইলে অভিরূপবাবু বলেন, “এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”

তবে নবান্ন সূত্রে খবর, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্ট ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে। বছরে দু’বার করে মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব ওই সুপারিশে রয়েছে। নবান্নই চাইছে না এখনই রিপোর্ট জমা পড়ুক। তাই বেতন কমিশনের সুপারিশ কবে নবান্নে পেশ হবে তা পুরোপুরি অভিরূপবাবুর হাতেও নেই। সরকার যে দিন তাঁকে সুপারিশ পেশ করতে বলবেন, সে দিনই তা পেশ করে দেবেন তিনি।

নবান্নের একটি সূত্রে এও খবর, বেতন কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করার ব্যাপারে সময় কেনার নেপথ্যে অন্য কৌশলও ছিল। সরকারও দেখে নিতে চাইছিল যে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল কী রায় দেয়! তা দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

বাংলায় যখন পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ মতে বেতন পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা, তখন কেন্দ্র ও অন্যান্য বহু রাজ্যে কর্মচারীরা সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন। ফলে কর্মচারীদের দ্বিবিধ ক্ষোভ রয়েছে। এক, কেন্দ্রের সমান হারে ডিএ পাচ্ছেন না। দুই, বেতন কাঠামোই দুর্বল এবং অনেকের থেকে অনেক কম। বেতন কাঠামো দুর্বল হলে, শুধু ডিএ বাড়লেই তাঁদের সুরাহা হবে না।

নবান্ন সূত্রের মতে, সরকার এই দুটি ক্ষোভই প্রশমিত করার লক্ষ্যে একটা মধ্যপথ বের করা হতে পারে। ষষ্ঠ বেতন কমিশনে মূলত বেতনের সঙ্গে ডিএ মিশিয়ে দেওয়া হলে এক ঢিলে দুই মাখি মারা যাবে বলেই প্রশাসনের অনেকের মত।

এ দিন প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের রায় ঘোষণার সময় মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য নবান্নে ছিলেন না। তিনি প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য মধ্যগ্রামে ছিলেন। সেখানে স্পষ্ট কিছু না বললেও, তাঁর একটি কথা থেকে অনেকে মনে করছেন যে দ্রুত ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। ওই বৈঠকে মমতা বলেছেন, “সরকারের আর্থিক অবস্থা ভাল না। এ বছর ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ করতে হবে, তার উপর আবার পে কমিশন রয়েছে।”

পিনাকপাণি ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.