দেড় বছর আগের ঘটনা। তৃণমূলের সেকেন্ডম্যান মুকুল রায় তখন সবে সবে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। তার পর তেরাত্তির পার না হতেই ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর রাজ্য পুলিশের বড় রদবদল ঘটিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) তৎকালীন অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল পদ থেকে রাজেশ কুমারকে সরিয়ে তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে। আপাত ভাবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও ক্ষমতার অলিন্দে কারও বুঝতে বাকি ছিল না যে এই সিদ্ধান্ত আঠারো আনা রাজনৈতিক।
কেন?
কারণ, রাজ্য প্রশাসনে রাজেশ কুমার মুকুল বাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। তা হওয়ারই কথা। কারণ, মুকুলবাবু যখন কেন্দ্রে রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন রাজেশ কুমার ছিলেন তাঁর ওএসডি। তাঁর সঙ্গে দলের তৎকালীন সেকেন্ড ম্যানের সম্পর্ক কেমন তা হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানতেন।
শুক্রবার রাতে সেই রাজেশ কুমারকেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এডিজি পদ থেকে তুলে এনে কলকাতা পুলিশের কমিশনার পদে বসিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য সচিব মলয় দে-কে ফ্যাক্স বার্তায় সেই নির্দেশ পাঠিয়ে কমিশনার জানিয়ে দিল রাজেশ কুমারই কলকাতার নতুন সিপি। প্রসঙ্গত, কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছিলেন অনুজ শর্মা। তাঁকে সেই পদ থেকে সরানোর পর কী দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা অবশ্য কমিশন জানায়নি। তা ঠিক করবে নবান্ন। তবে এটা ঠিক যে অনুজ শর্মাকে কোনওরকম ভোট সংক্রান্ত দায়িত্বে রাখা যাবে না।
অথচ ঘটনা হল, বদলির আগে পর্যন্ত সিআইডি-র প্রধান হিসাবে যে ঘটনাগুলির তদন্ত করছিলেন রাজেশ কুমার তাতে খুশি ছিল নবান্নও। দার্জিলিংয়ে গুরুং সমর্থকদের সঙ্গে এনকাউন্টারে পুলিশ সাব ইন্সপেক্টরের মৃত্যুর তদন্ত করছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে শিশু পাচার চক্রের ব্যাপারেও তদন্ত তিনিই শুরু করেছিলেন। যে দুই তদন্তের রাজনৈতিক ফায়দা শাসক দল নিয়েছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু অনেকের মতে, মুকুলবাবু দল ছাড়ার পর তাঁকে আর কোনও তদন্ত এজেন্সির মাথায় বসানোর ঝুঁকি নেননি মমতা। পরিবর্তে তাঁর আস্থাভাজন অফিসারকে নিয়ে এসেছিলেন সেই পদে।
অতীতে বিধানসভা ভোটের সময়েও কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে বদলির নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। পুলিশ কমিশনার পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে বসানো হয়েছিল সৌমেন মিত্রকে। কিন্তু কমিশনের তত্ত্বাবধানে সৌমেনবাবু যে রকম নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছিলেন, তাতে ঘোর অসন্তুষ্ট হয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোট মিটতেই ফের রাজীব কুমারকে পুলিশ কমিশনার পদে বহাল করেন মমতা। সেই সঙ্গে সৌমেন মিত্রকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে। অনেকের মতে, এ বারও হয়তো তার অন্যথা হবে না। তবে আপাতত দেখার কলকাতায় কতটা সুষ্ঠু ভাবে ভোট করাতে পারেন রাজেশ কুমার ও কমিশন।