আগ্রাসী শক্তির নারী-ধর্ষণ-উৎসব রবীন্দ্রনাথও সহ্য করেন নি

চিতোর প্রসাদে প্রবেশ করছেন আলাউদ্দিন (Alauddin)। বীরদর্পে যুদ্ধ করেও পরাজিত চিতোর রাজ। বিধর্মীদের দ্বারা অত্যাচারিত, ধর্ষিত না হবার জন্য প্রাসাদে তখন এক এক করে চিতায় আত্মাহুতি দিয়ে চলেছেন রাজপুত নারী। চিতোর আক্রমণের কাহিনী নিয়েই ১৮৭৫ সালে জ্যোতিদাদা (জ্যোতিরিন্দ্র নাথ ঠাকুর) লিখলেন ঐতিহাসিক নাটক ‘সরোজিনী‘।
জ্যোতিদাদা ছোটোভাই রবির পড়ার ঘরে বসেই নাটকের প্রুফ দেখতেন। আসতেন কবির গৃহশিক্ষক রামসর্বস্ব পন্ডিত। বালক রবির ভারী আগ্রহ নাটকটির পান্ডুলিপির প্রতি; তখন তাঁর বয়স মাত্র চোদ্দ। কোথায় কী করলে ভালো হয়, এ নিয়ে বালক রবির প্রবল উদ্দীপনা!


ঘটনার প্রেক্ষিতে নাট্যকার যে গদ্যধর্মী সংলাপ রচনা করলেন জ্যোতিরিন্দ্র (Jyotirindra) , তা পছন্দ হল না রবির। গদ্য সংলাপকে সঙ্গীতে তুলে ধরলো কবির বেদনার্ত মন। বালক বললেন, এখানে পদ্য রচনা ছাড়া কিছুতেঔ জোর বাঁধিতে পারে না। জ্যোতিদাদা ভাই-এর প্রস্তাব উপেক্ষা করতে পারলেন না। রবি সংলাপের বদলে রচনা করে দিলেন এই সঙ্গীত। গানের সেই কলিগুলি এমনতরো —
জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ
পরাণ সঁপিবে বিধবা বালা
জ্বলুক জ্বলুক চিতার আগুন
জুড়াবে এখনি প্রাণের জ্বালা।।
শোনরে যবন! শোনরে তোরা
যে জ্বালা হৃদয়ে জ্বালাবি সবে।
সাক্ষী রবেন দেবতা তার
এর প্রতিফল ভুগিতে হবে
।।”


পরের বছর এই নাটকটি কলকাতায় মঞ্চস্থ হল গ্রেট ন্যাশানাল থিয়েটারে; সরোজিনী (Sarojini) সাজলেন নটী বিনোদিনী, বিজয় সিংহের পাঠ করলেন বিখ্যাত নাট্য-ব্যক্তিত্ব অমৃতলাল বসু (Amritlal Basu)। সর্ব সাধারণের কাছে আদরনীয় হয়ে উঠলো বালক রবি-রচিত গানটিও।
কল্যাণ গৌতম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.