উপনয়নের পর, হিমালয় ভ্রমণের পূর্বের অবসরে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘ পৃথ্বীরাজের পরাজয় ‘ নামে একটি বীররসাত্মক কাব্য। যদিও সেই কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপি পরে আর পাওয়া যায় নি। কী ছিল সেই কাব্যে? কেন শিশু রবি পরাজিত হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজকে নিয়ে এমন কাব্য রচনা করতে গেলেন?
রবীন্দ্র জীবনীকার প্রশান্ত কুমার পাল (Prashant Kumar Pal) এ প্রসঙ্গে লিখছেন, “জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীর স্বাদেশিকতার আবহাওয়া এবং হিন্দুমেলার হিন্দু জাতীয়তা-বোধের আদর্শে পরিবর্ধিত রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজের বীরত্ব উজ্জ্বল ভাবে দেখা দেবে এবং তাঁর পরাজয়ে বেদনা অনুভব করবেন এটাই স্বাভাবিক।” তাঁর কিশোর মনে তুর্কী সম্রাট মহম্মদ ঘোরী কর্তৃক পৃথ্বীরাজের পরাজয় ছিল একটা গভীর-ঘন বেদনা, যা কোনোদিনই তিনি ভুলতে পারেন নি। আর এই কিশোর-বেদনাই রবীন্দ্রনাথের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে হিন্দু-ইতিহাস-চেতনায় এবং তা থেকেই ক্রমান্বয়ে জাগ্রত হয়েছিল কবির দেশপ্রেম। তাঁর নানান লেখার মধ্যে পরতে পরতে, থরে-বিথরে ছড়িয়ে আছে হিন্দু সনাতনী-সংস্কৃতির মেজাজ। সাহিত্যে যা যা চিত্রকল্প আঁকলেন তিনি, তা হিন্দু সমাজেরই নানান পরিব্যাপ্তি। বৌদ্ধ, শিখ, জৈন সম্প্রদায়কেও তিনি বৃহত্তর হিন্দু সমাজের সঙ্গেই গ্রহণ করেছেন, লালন করেছেন। একথা কেউই অস্বীকার করতে পারেন না।
কল্যাণ গৌতম (Kalyan Gautam)