ঘোর বিতর্ক, প্রসেনজিৎ-অপর্ণা কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি থেকে বেরিয়ে গেলেন

এ যেন অনেকটা সিনেমার মতই।

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এ বার পঁচিশ বছর। কিন্তু সরকারি হস্তক্ষেপ ও এ ব্যাপারে রাজনীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ এতই তীব্র যে গোড়াতেই তুমুল বিতর্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল। চলচ্চিত্র উৎসবের উপদেষ্টা কমিটি থেকে সরে দাঁড়ালেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং চিত্র পরিচালক তথা অভিনেত্রী অর্পণা সেন।

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু তিনি আগাম আন্দাজ করছিলেন তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, নবান্নের অলিন্দে এমন খবর আগেই ছড়িয়ে পড়েছিল। আবার শাসক দলের অনেক নেতা বলতে শুরু করেছিলেন যে, যে হেতু প্রসেনজিৎ সম্প্রতি বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন, তাই কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।

হয়ও তাই। প্রসেনজিৎকে সরিয়ে চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। প্রসেনজিৎকে করে দেওয়া হয় কমিটির সদস্য। সেই সঙ্গে নতুন চমক বলতে কমিটির সদস্য হিসাবে রাখা হয় অপর্ণা সেনকে।

কিন্তু কমিটি সরকারি ভাবে ঘোষণা হওয়ার পরই বেঁকে বসেন অপর্ণা সেন। তিনি নবান্নের পদক্ষেপ নিয়েই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বলেন, তাঁর অনুমতি না নিয়েই তাঁকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এটা ঠিক নয়।

কিন্তু এখানেই বিতর্ক থামেনি। সোমবার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে জানান, “আমার অন্য কাজ রয়েছে। তাই গতকাল রবিবার আমি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকদের চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছি যে আমাকে অব্যহতি দেওয়া হোক”। যদিও প্রসেনজিৎ অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি কমিটিতে না থাকলেও সাধ্যমতো সাহায্যের চেষ্টা করবেন।

অন্যদিকে সংবাদসংস্থাকে অপর্ণা জানিয়েছেন, একে তো তাঁর অনুমতি নেওয়া হয়নি। তার উপর তাঁর যা সিনিয়রিটি তাতে তাঁর বা আরও সিনিয়র কাউকে উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান করা উচিত ছিল। অপর্ণা আরও জানান, “আমি নতুন ছবির কাজ শুরু করতে চলেছি। তা ছাড়া অস্কার নমিনেশনের জুরি মিটিংয়ে যেতে হবে আমাকে”।

অপর্ণার কথাতেই পরিষ্কার যে রাজ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কমিটির সদস্য হিসাবে থাকা তাঁর পক্ষে মর্যাদাকর নয় বলেই তিনি মনে করছেন। অস্কার নমিনেশনের প্রসঙ্গ উত্থাপনের মধ্যেও একটা স্পষ্ট বার্তা রয়েছে।

এই অবস্থায় চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির নতুন চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী যে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন সংশয় নেই। তবে তিনি বলেন, “আমি রীনাদি আর বুম্বাদার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলব। ওদের পরামর্শ নিয়েই চলচ্চিত্র উৎসবকে সফল করার চেষ্টা করব।” দ্য ওয়ালকে রাজ ফোনে আরও বলেন, “অপর্ণাদি যা বলেছেন, সে ব্যাপারে উনিই ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। আমার কিছু বলার নেই। ওনার পরিচালিত ও অভিনীত ছবি দেখে বড় হয়েছি। উনি আমার আইডল। এখন আমার একটাই লক্ষ্য, নতুন যে দায়িত্ব সরকার দিয়েছে তা ঠিক মতো করে পালন করা”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.