রাহুলকে কাশ্মীরের রাজ্যপালের তোপ: প্লেন পাঠাচ্ছি এসে পরিস্থিতি দেখে যান

কাশ্মীরের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির প্রশ্ন নিয়ে রাহুল গান্ধীকে কড়া কথা শোনালেন সেখানকার রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক।

উপত্যকায় হিংসার ঘটনা ঘটছে বলে শনিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কংগ্রেসের সদ্য প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী। সোমবার জম্মুতে সেই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজ্যপাল বলেন, “আমি রাহুল গান্ধীকে কাশ্মীরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ওনার জন্য দিল্লিতে প্লেন পাঠাতেও রাজি। উনি কাশ্মীরে আসুন, এসে দেখে যান এখানকার পরিস্থিতি ঠিক কেমন!”

দৃশ্যত অসন্তুষ্ট রাজ্যপাল বলেন, “রাহুল গান্ধীকে একজন দায়িত্বশীল নেতা হিসাবেই জানি, ওনার এ ধরনের কথা বলা উচিত হচ্ছে না”।

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ ও রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়ার প্রশ্নে গোড়া থেকে আপত্তি জানাচ্ছে সাবেক জাতীয় দল কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, কাশ্মীরের মানুষের মত না নিয়ে এক তরফা এই পদক্ষেপ করেছে বিজেপি সরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে কাশ্মীরের মানুষের ভাবাবেগ দমন করা হচ্ছে। এমনকী লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, কাশ্মীরের অবস্থা এখন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতো।

এই সব অভিযোগের রাজনৈতিক মোকাবিলা করছে বিজেপি। এ বার রাজ্যপালও তাতে সামিল হলেন। ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রসঙ্গে এ দিন রাজ্যপাল বলেন, এই পদক্ষেপের নেপথ্যে কোনও ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক কারণ নেই। কাশ্মীর তথা গোটা ভারতের সব নাগরিকের স্বার্থেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। লেহ, কার্গিল, জম্মু, রাজৌরি, পুঞ্চ সহ উপত্যকার কোথাও সাম্প্রদায়িক ঘটনাও ঘটেনি”।

এখানেই থামেননি রাজ্যপাল। তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ কেউ অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে। উস্কানিও দিচ্ছে। এ ব্যাপারে এক শ্রেণির বিদেশি সংবাদমাধ্যমেরও সমালোচনা করেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, “বিদেশি সংবাদমাধ্যম কিছু চেষ্টা করছে দেখছি, তাদের সতর্ক করা হয়েছে। সব হাসপাতালের দরজা খোলা রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখুন, কেউ বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন কিনা। চার জনের গায়ে রবার বুলেট লেগেছে। তাও পায়ে লেগেছে। কোনও গুরুতর আঘাত লাগেনি কারও।”

প্রসঙ্গত, গত শনিবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক যখন চলছিল, তখন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কাশ্মীরের বর্ষীয়াণ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ একটি ভিডিও ফুটেজ সবাইকে দেখান। ওই ফুটেজ দেখানোর জন্য রাহুলকেও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। তার পর ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে কাশ্মীর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি।

এ দিন অধীর চৌধুরীর সমালোচনারও জবাব দেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, যাঁরা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের কথা বলছেন, তাঁরা তার মানেই জানেন না। আমি জানি। ৩০ বার জেলে গিয়েছি। ওঁরা ইমার্জেন্সির নামে মানুষকে দেড় বছর বিনা কারণে জেলে বন্দী রেখেছিল। তখনও কেউ কনসেনস্ট্রেশন ক্যাম্প বলেনি। সতর্কতামূলক গ্রেফতারকে এই তকমা দেওয়া যায় না”।

রাজ্যপালের এই সব মন্তব্য পুরোপুরি রাজনৈতিক বলে মনে করছেন অনেকেই। কারও কারও মতে, মোদী জমানায় রাজ্যপালের পদেরও পুরোদস্তুর রাজনীতিকরণ হয়েছে। তাঁরা রাজনৈতিক নেতার মতো কথা বলছেন, অথচ এটা রাজনীতির উর্ধ্বে সাংবিধানিক পদ। তবে এর পাল্টা যুক্তিও রয়েছে। গেরুয়া শিবিরের কথায়, রাজ্যপালের পদের গরিমা অনেক আগেই নষ্ট করেছে কংগ্রেস। ইউপিএ জমানায় বিহারের রাজ্যপাল বুটা সিংহের ভূমিকার কথা এত সহজে ভুলে গেলে চলবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.