২৯ দিনের এসএসসি অনশন শেষ হওয়ার এখনও ২৪ ঘণ্টাও পেরোয়নি। তার আগেই অন্য এক হবু শিক্ষকদের সংগঠনের অনশনে পুলিশি মারধরের অভিযোগ উঠল শুক্রবার ভোরে। অনশনকারীদের দাবি, ভোর পাঁচটায় প্রায় ১৫০ অনশনকারীকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। চালানো হয় লাঠি, মারা হয় লাথি। তিন জন অনশনকারী জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের গ্রেফতারও করেছে পুলিশ এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যদিও পুলিশের দাবি, অনশনকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কেবল। কোনও মারধর হয়নি।

এসএসসি অনশনের ২৮তম দিনে, অর্থাৎ বুধবার, প্রেস ক্লাবের সামনেই অনশনে বসেন মাদ্রাসার ১৫০ জন হবু শিক্ষক। তাঁদের দাবি, তাঁরা মাদ্রাসা স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাশ করে বসে আছেন বছরের পর বছর। অনশনকারীদের প্রতিনিধি লিলুফা হক জানান, চার বছর ধরে ১৮৪ জন পাশ করা চাকরিপ্রার্থী আইনি লড়াই লড়ছেন।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের তরফে একটি অন্তর্বর্তী রায়ও দেওয়া হয়েছে, যাতে বলা হয় ২০১৩ সালে যত জন পরীক্ষার্থী মাদ্রাসা স্কুল সার্ভিস কমিশনে পাশ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকে প্যানেল মেনে ২৬০০ শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে মাদ্রাসাগুলিতে। সারা রাজ্যের মাদ্রাসা স্কুলে যত শিক্ষকের শূন্যপদ আছে, তা পূরণ করতে হবে।

অনশনকারীদের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও কোনও হেলদোল নেই মাদ্রাসা কমিশনের। কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুর রউফকে তাঁরা একাধিক বার সমস্যার কথা জানিয়েও সুরাহা পাননি। আবদুর রউফ অনশনের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন।

তিনি বলেন, “ওঁদের দাবিগুলি খুবই বিভ্রান্ত। মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”

লিলুফা হকের দাবি, এই মুহূর্তে পাশ করেও চাকরি না পাওয়া তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৬০০ জন। যেখানে ২৬০০ জনকে নিয়োগের আইনি নির্দেশ রয়েছে, সেখানে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। মাদ্রাসা স্কুলগুলিতেও শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায়, চাকরির দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছিলেন তাঁরা।

অনশনকারীদের অভিযোগ, আজ অনশনের তৃতীয় দিনে, ভোর পাঁচটায় আচমকা পুলিশ আসে। সঙ্গে সাদা পোশাকের বেশ কিছু মানুষ। তাঁরা এসেই অনশনকারীদের ফোন কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। এর পরেই এলোপাথাড়ি লাঠির বাড়ি পরে অনেকের গায়ে-মাথায়। ওই অনশন মঞ্চে মেয়েরাও ছিলেন। সকলেই শ্রান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছিলেন অত ভোরে। সেই সুযোগে ঘটে যাওয়া এই পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা করেন অনশনকারীরা।

তাঁদের দাবি, ২০-২৫ জন চাকরিপ্রার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পিজি হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করতে হয়েছে মনিরুল ইসলাম নামের এক তরুণকে। মিজানুর রহমান এবং মনোজ চক্রবর্তীও মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এই তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

যদিও ডিসি সাউথ মীরাজ খলিদকে এই হামলার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, “নির্দেশ অনুযায়ী অনশনকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও লাঠি চালানো হয়নি, কোনও মারধর করা হয়নি কাউকে।” তিন জনকে গ্রেফতার করার কথা অবশ্য মেনে নেন তিনি। তবে তাঁর কথায়, “সবটাই আইন মেনে হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.