জীবনে হাসিও আছে, কান্নাও আছে। খুশি বা দুখী কে যে কে কিসে হয়, তা ভগাই জানে! 
অথচ শুরুটা এমনি ছিল না মোটেই। শিশু ভোলানাথ। শৈশব বড়ই পবিত্র। প্রতিটি শিশুই দেবশিশু। ওপরআলার সাথে ওঁদের নাকি রোজকার আলাপসালাপ তত্ত্বতালাশ। মেকি হাসি, নাকি কান্নার বালাই নেই। একটি শিশু দিনে চারশো বার হাসে, চারশো বার কাঁদে। খিদে বাহ্যির মতই স্বতঃস্ফূর্ত, অনাবিল। 
আমরা বড়রা পারিনা। মাপা হাসি আর চাপা কান্না শিখতে শিখতেই এতগুলি বছর পার হল। হিসেবি হয়েছি। আজও হাসি বটে। কতকিছুতেই যে হাসি! ভাবলেই আশ্চর্য হতে হয়। শত্তুর দেশের সেনা মরলে উল্লাসের হাসি হাসি। নিজের দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারা গেলেও হাসি। ভিন্নমতাদর্শের লোক তিনি। হাসবোনা! ভুমিকম্পে, বন্যায় পাশের দেশের লোকে মরলেও হাসি। ওপরআলার গজব বলে কথা! 
না, সকলেই এমন নন। তবে, মানতেই হবে, আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত হাসি কান্না কমে আসছে ক্রমশ। আবেগের বেগ চেপে রাখাটাই সুরুচি, সুশিক্ষার নিদর্শন কিনা! হাসি পেলেই হাসা, কান্না পেলেই কাঁদা- বড় বলে কি আর মানবে লোকে! লুকোতে হয়। নিজের কাছে নিজেকেই। এমনটাই যে দস্তুর!
খুব হাসাতেন একজন, কাল মারা গেলেন। ঝকঝকে উজ্জ্বল দুটি চোখ। চেহারায় তো তালপাতার সেপাই! একমাথা চুল। ঘাড় ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে খানিক লাফিয়ে লাফিয়ে মুখ টিপে টিপে কথা কইতেন। ডায়লগ বলার ধরনেই হাসি চাপা যেত না। “মৌচাক”, “ধন্যি মেয়ে”, “চারমূর্তি”, “ওগো বধূ সুন্দরী”, “শ্রীমান পৃথ্বীরাজ”, “বসন্ত বিলাপ”- অজস্র চলচ্চিত্রে দর্শকদের হাসিয়েছেন চিন্ময় রায়। বাংলা চলচ্চিত্রের সে এক স্বর্ণযুগ! চলে গেলেন চিন্ময় রায়। হাসাতেন যিনি, তাঁর চলে যাওয়াতে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। চেপে আছি। বড় হয়ে গেছি কিনা!

সুপ্রীতি মাইতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.