নুসরত, জায়রিরা তুলে ধরলেন অসহিষ্ণু ভারতবর্ষের ছবিটা

প্রায় একই সময়ে দুটি ঘটনা সমাজে তোলপাড় ফেলেছে। একটি হলো, অভিনেত্রী তথা সদ্য-নির্বাচিত সাংসদনুসরত জাহান তার ‘অইসলামিক আচরণের জন্য দেওবন্দ সহ মুসলমান মৌলবিসমাজের চক্ষুশূল হয়েছেন; দ্বিতীয়ত, দঙ্গলখ্যাত অভিনেত্রী জায়রা ওয়াসিম তার সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী জীবনে ছেদ টেনে দিলেন, স্রেফ ‘ধর্মীয় কারণে। গোঁড়া মুসলমান সমাজের হাতে ভারতবর্ষের নারীরা স্বাধীনতার আগে থেকেই লাঞ্ছিত, নিগৃহীত হয়ে আসছেন। আজও সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে। তবুও নুসরত-জায়রার ঘটনা আবারও আমাদের সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে যে, বিশ্বের দরবারে ভারতবর্ষের কোন ধর্মীয় চরিত্র ফুটে উঠছে? জেহাদি সংস্রবে তাসখন্দের বুকে ভারতবর্ষে কর্মপ্রক্রিয়া চালানোর জন্য যে মতধারার দলের উৎপত্তি হয়েছিল, সেই দল আর পরবর্তীকালে তার থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা দলের সলিল সমাধি ঘটলেও, সেই দেশদ্রোহী মতবাদের জীবাশ্ম এখনও রয়ে গিয়েছে। বলা বাহুল্য, সেই কমিউনিস্ট মতবাদ বহু যুগ ধরে সারা বিশ্বের সামনে মার্কস- লেনিনীয় ঐতিহ্য মেনে ভারতবর্ষকে হেয় করতে বদ্ধপরিকর এবং তাদেরই সাম্প্রতিক অ্যাজেন্ডা হিন্দু মৌলবাদ’, ‘হিন্দু-ফ্যাসিজম’, ‘হিন্দু-সন্ত্রাসবাদ’ইত্যাদি শব্দ-বন্ধনী সৃষ্টিকরা এবং আর এস এস বিজেপি ভারতবর্ষকে কতটা ভয়ংকর’পথে নিয়ে যাচ্ছেতা প্রতিপন্ন করে বিদেশি শক্তির দালালরূপে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা।
নুসরত -জায়রার ঘটনা যদিও এর বিপরীত সত্যিটিকেই উন্মোচিত করে যে এখনও ভারতবর্ষে মুসলমান মৌলবাদের হাত কতটা প্রসারিত, যে মৌলবাদ ভারতবর্ষকে ধর্মের ভিত্তিতে ত্রিখণ্ডিতই করেনি, টুকরো গোষ্ঠীর সৌজন্যে ভারতবর্ষকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করার নেশায় এখন মশগুল। এই মৌলবাদকে কমিউনিস্টরা ভারতের খণ্ডিত স্বাধীনতার আগে থেকেই তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক সমর্থন জুগিয়েছে। এখনও সেই মৌলবাদকে একদিকে আড়াল ও অন্যদিকে প্ররোচিত করতে হিন্দু মৌলবাদ’বা প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি গল্প আমদানি করে। কারণ হিন্দুদের নিবীর্য করে ভারতবর্ষের পূর্ব-পশ্চিমপ্রান্তে দু’টি মুসলমান সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের জন্য তাদের অবদানই সবচেয়ে বেশি, আর দুইমুসলমানি রাষ্ট্রকে চীনের মদত দিয়ে ভারতবর্ষকে শত্রু পরিবেষ্টিত করে রেখে তার রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নেওয়া, নেহরুর প্রভাবে কমিউনিস্টরা তাদের ভারত-বিরোধী যাবতীয় ষড়যন্ত্র সফল করতে পেরেছিল।
মুসলমান চরিত্রের একটি বিশিষ্টতা রয়েছে। দেখবেন যেসব অমুসলমান দেশে তারা শক্তিশালী, অন্তত রাজনৈতিক শক্তির নিরিখে, সেইসব জায়গায় তারা আরবি ফতোয়া, শরিয়তী আইন এসব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, মূল লক্ষ্য অবিলম্বে দেশটিকে মুসলমান দেশে পরিণত করা। যেমন ভারত। অন্যদিকে দেখুন যেখানে মুসলমানরা রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল সেখানে তারা সেদেশেরই আইন-কানুন মেনে চলে, যেমন চীন বা অস্ট্রেলিয়া। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের অস্তিত্ব না থাকলে এতদিনে ভারতে নিশ্চিতভাবেইশরিয়তিবিধি লাগু হতো। স্বাধীন ভারতবর্ষ, মসনদে সুদীর্ঘকালের তমসা কাটিয়ে একটি জাতীয়তাবোধ সম্পন্ন রাজনৈতিক দলের একচ্ছত্র আধিপত্য তারপরেও এক মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত নায়িকাকে হিন্দু ছেলে বিয়ে করার অপরাধে’ ‘বন্দে মাতরম্’ স্লোগান দেওয়ার মতো মুসলমান সমাজের পক্ষে ‘গর্হিত কাজের দায়ে মৌলবাদীদের হুমকি শুনতে হচ্ছে, আর এক নায়িকা তো হালই ছেড়ে দিলেন, এমনই যে সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার ছেড়ে মৌলবাদের কাছে, মৌলবাদীদের কাছে তাকে আত্মসমর্পণ করতে হলো।
প্রথমজন অর্থাৎ নুসরত জাহান, ব্যক্তিগত ভাবে তার সম্পর্কে আমাদের বলার কিছুই নেই। পার্কস্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডে তার প্রেমিকাকে আড়াল করার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু মৌলবাদের মুখোশটা তিনি নির্মমভাবে খুলে দিয়েছেন, এটা মানতেই হবে। ভোটপর্বে তিন তালাকের বিরুদ্ধে কথা বলায় তার দলনেত্রী ও বাচ্চা মেয়ে বলে নুসরতের কথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিন তালাকের পক্ষে তার দল আগেও ছিল। এখন দেওবন্দের ফতোয়ার পাশাপাশি দলের তরফে ইদ্রিস আলি যেভাবে দলনেত্রীর পরোক্ষ মদতে নুসরতকে একুল-ওকুল দুই যাবে বলে হুমকি দিচ্ছেন তাতে স্পষ্ট বোঝা যায় এ রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস দল আর তাদের দলনেত্রীকে ‘মুসলমান তোষণকারী’ বললে বিষয়টা লঘু হয়ে যাবে, এদের ‘ইসলামিক মৌলবাদের মদতদাতা’ বললেই তা যথার্থ হবে।
এই দলে এখন কবীর সুমনের মতো ধর্মান্তরিত ধর্মান্ধ মৌলবাদী, বাঙ্গালি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রমরমা; এই ইসলামপন্থী দলটির হাতে আর কিছুদিন রাজ্যের ক্ষমতা থাকলে তা দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিশ্চতভাবেই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।নুসরত জাহান জৈন তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে জায়রি ওয়াসিম দু-আড়াই বছর আগে তাঁর বিখ্যাত দঙ্গল ছবিটিতে অভিনয় করা থেকে মৌলবাদীদের টার্গেট, পরে মেহবুবা মুফতির তাকে ‘কাশ্মীরি রোল মডেল’ ইত্যাদি বলা নিয়ে মৌলবাদীদের আরেক প্রস্থ হাঙ্গামা, শেষে সম্প্রতি তাঁর অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্তে বোঝা গেল মৌলবাদীদের চাপ আর তিনি নিতে পারলেন না। কমিউনিস্ট বন্ধুদের থেকে ভাষা ধার করে এবার সত্যি বলতে ইচ্ছে করছে নুসরত, জায়রিরা অসহিষ্ণু ভারতের ছবিটা চিনিয়ে দিয়ে গেলেন। সঙ্গে বামপন্থীদের মুখে তালা বিনামূল্যে পরিয়ে দিয়েও গেলেন। মুসলমান মৌলবাদের ব্যাপারে যাঁদের সহিষ্ণুতা এমন। অসহিষ্ণুতার বিশ্বে দুর্লভই বটে।
বিশ্বামিত্র-র কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.