কোভিডের ডেল্টা প্লাস (Delta Plus) ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে এ রাজ্যেও। একেই কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আসার সতর্কতা জারি হয়েছে, তার ওপরে করোনার সংক্রামক ডেল্টা প্লাস প্রজাতি বাংলার দুই জেলায় ডুকে পড়ায় চিন্তার ভাঁজ আরও চওড়া হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের। পুজোর আগে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিধিনিষেধ আরও জোরদার করা হচ্ছে। কলকাতা বিমানবন্দরে আগামীকাল থেকেই কড়া নজরদারি শুরু হবে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য নির্দেশিকাও জারি হয়েছে।
বাংলাদেশ, ব্রিটেনে কোভিডের ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়ান্টের বাড়বাড়ন্ত। পাশাপাশি, চিন, মরিশাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবোয়ে ও বতসোয়ানাতেও ডেল্টা প্রজাতি মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এইসব দেশ থেকে এখনই যে যাত্রীরা কলকাতা বিমানবন্দরে নামবেন তাঁদের জন্য নয়া নির্দেশিকা জারি হয়েছে। বাইরের দেশগুলি থেকে কোভিডের সংক্রামক প্রজাতি যাতে বাংলায় না ঢোকে সে জন্য কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাস্থ্য দফতরের বৈঠক হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেছেন, এই সাত দেশে ছাড়াও ডেল্টা প্লাস যে সব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সেইসব দেশ থেকে যাত্রীরা কলকাতা বিমানবন্দরে নামলে আরটি-পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক। যাত্রীদের নিজের খরচে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। তা না হলে যেতে হবে সিএনসিআইয়ের নিউটাউন ক্যাম্পাসে। কোভিড টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ হলে তবেই গন্তব্যে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। রিপোর্টে কোভিড পজিটিভ থাকলে সেফ হোমে কোযারেন্টাইনে পাঠানো হবে। সংক্রমণ বেশি থাকলে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক গত মাসে রিপোর্ট দিয়েছিল, দেশের ১১টি রাজ্যে ডেল্টা-প্লাস খুঁজে পাওয়া গেছে। অগস্ট মাসে খবর মিলেছিল, ডেল্টা-প্লাসের একটি উপপ্রজাতি বা সাব-লিনিয়েজ AY.3 খুঁজে পাওয়া গেছে বাংলায়। তবে কতজনের শরীরে এই উপপ্রজাতি ঢুকেছিল তার সঠিক তথ্য মেলেনি। তবে সম্প্রতি খবর মিলেছে, ডেল্টা-প্লাস ছড়িয়েছে দুই জেলায়। আক্রান্তদের থেকে আর কতজনের শরীরে ওই ভ্যারিয়ান্ট ঢুকেছে সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। সামনেই পুজো আসছে, কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাও রয়েছে। তার মধ্যেই ডেল্টা প্রজাতির ভ্যারিয়ান্টরা বাংলায় ঢুকে পড়লে চিন্তা আরও কয়েকগুণ বাড়বে।
ডেল্টা প্লাস ((AY.1)) হল এই ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টেরই আরও একটি শাখা। ডেল্টা প্লাসে K417N মিউটেশন হচ্ছে, অর্থাৎ k অ্যামাইনো অ্যাসিড তার ৪১৭ নম্বর জায়গায় বদলে গিয়ে N অ্যামাইনো অ্যাসিডে পরিবর্তিত হচ্ছে। এমন ১২ বার বদল হয়েছে, তাই এই প্রজাতিও সুপার-স্প্রেডার হয়ে উঠেছে। তবে ভয়ের কারণ কতটা সে নিয়ে এখনও নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। গবেষকরা বলছেন, আলফা প্রজাতি অতটা ছোঁয়াচে নয়, ডেল্টা প্রজাতি ৬০ গুণ বেশি সংক্রামক। এই ডেল্টা প্রজাতিই এখন ফের বদলে গিয়ে ডেল্টা প্লাস তৈরি করেছে। তবে এই প্রজাতি নিয়ে এতটা চিন্তার কারণ নেই বলেই আশ্বস্ত করেছেন গবেষকরা। তাঁদের দাবি, কোভিড ভ্যাকসিনে এই ডেল্টা প্লাসকে কাবু করা সম্ভব। তবে জনসাধারণ সতর্ক না থাকলে এই প্রজাতি বহু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ফের বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।