জটিলতর পরিস্থিতি। পিতার মৃত্যুর প্রমাণ বা পারলৌকিক সংক্রান্ত কাজের নথিপত্র না মেলায় কৃষকবন্ধু প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার লক্ষাধিক কৃষক। এই প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বাড়ছে ক্ষোভ। পূর্ব বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত নথিভুক্ত কৃষকের সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ ৫৫ হাজার। কিন্তু এখনও কৃষকদের কৃষক বন্ধুর অধীনে আনতে না পারার কারণ হিসেবে প্রশাসনিক জটিলতাকেই দায়ী করেছেন প জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল।
তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের জন্য একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। ৫ একর পর্যন্ত জমি থাকা কৃষকদের সরকার যে টাকা ধার্য করেছেন কিংবা তার নীচে যাঁদের জমি রয়েছে সেই সমস্ত কৃষকরাও এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কেবলমাত্র মিউটেশনের বা জমির মালিকানা বদল সংক্রান্ত জটিলতার কারণে। কৃষি কর্মাধ্যক্ষ জানান, পূর্ব বর্ধমান জেলায় কৃষকদের প্রকৃতিই হল পিতৃপুরুষের জমি তাঁরা চাষ করে আসছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জমির মিউটেশন বা নাম বদল হয়নি। কিন্তু এই বদল না হলে বিশেষত, নিজের নামে জমি না থাকলে সরকারী এই সুবিধা পাবেন না। ফলে সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা।
মন্তেশ্বর ব্লকের এক চাষি জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ১৯৭০ সাল নাগাদ মারা যান। কিন্তু জমি ভাইদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে যাননি। তাঁরা ভাইয়েরা মিলে জমি চাষ করে আসছেন। কিন্তু এখন সরকারী এই সুবিধা পেতে গেলে তাঁদের এমন এমন কাগজপত্র দেখাতে বলা হচ্ছে যে, তাঁরা তাতে নাজেহাল হয়ে পড়ছেন। যেমন তাঁকেই বলা হয়েছে, বাবার মৃত্যুর পর শেষকৃত্যের কাগজপত্র নিয়ে আসতে। অর্থাৎ যে ঘাটে তাঁর বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া করা হয়েছে সেখানকার কাগজপত্র নিয়ে আসতে। ওই চাষি জানিয়েছেন, প্রায় ৫০ বছর আগের সেই কাগজ এখন তাঁরা কোথায় পাবেন।
অভিযোগ, মিউটেশনের জন্য এই ধরণের কাগজপত্র চাওয়াও কতটা ন্যায়সঙ্গত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে, এই জটিলতা নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই কৃষক বন্ধুর কাজে অগ্রগতি বাধা পেয়েছে বলে মনে করেছেন জেলা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল। তিনি জানিয়েছেন, গোটা জেলায় এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ১৮ হাজার কৃষকদের অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে চেক দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার কৃষককে। ফলে এই প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে তাঁরা রীতিমত দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
উল্লেখ্য, কৃষকবন্ধু এই প্রকল্পে ৫ একর পর্যন্ত সর্বাধিক একজন চাষি চাষের ভর্তুকি হিসাবে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। তার নিচে যাঁদের জমি রয়েছে তাঁরা সর্বাধিক আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। কার্যত, সরকারের এই প্রকল্প ঘোষণার পর থেকেই এই সুবিধা পেতে চাষিরা ভিড় জমাচ্ছেন বিএলআরও দপ্তরে। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার জন্য জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিক করতে গিয়েই রীতিমত নাজেহাল হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মিউটেশনের জন্য এই জটিলতা কাটাতে আগামী অগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহেই জেলার প্রতিটি ব্লকে ব্লকে প্রচারাভিযান শুরু হচ্ছে। এরপর প্রতিটি ব্লকে এবং পঞ্চায়েত ভিত্তিক তাঁরা ১৫ দিনের একটানা ক্যাম্প করে এই সমস্যা দূর করার জন্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) শশী কুমার চৌধুরীর সঙ্গে। আগামী আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে দুদিন ধরে এব্যাপারে প্রচার চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে প্রতিটি ব্লকে। এরপরেই কোথায় কোথায় ক্যাম্প করা হবে সে ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হবে। মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, তাঁরা চাইছেন, সরকারের এই সুফল সমস্ত চাষিই যাতে পেতে পারেন। মিউটেশনের জন্য এই দুর্ভোগ কমাতেই এই ক্যাম্প করা হচ্ছে।