“এটা সবকা সাথ সব কা বিকাশের জয়।” টিভি ক্যামেরার সামনে কথাগুলি বলছিলেন খগেন মুর্মু। এখন পরিচয়– মালদহ উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপি সাংসদ। অতীত পরিচয়টা এখন আর বিশ্বাস করাই কঠিন। গত বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি হবিবপুর কেন্দ্র থেকে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন। কাস্তে-হাতুড়ি নিয়ে হয়েছেন বিধায়ক, পদ্ম হাতে সাংসদ। কিন্তু কৃতিত্ব কার?
খগেন মুর্মুর ইমেজ, বিজেপির সংগঠন, মোদী হাওয়া কৃতিত্বের দাবি করতে পারে অনেক কিছুই কিন্তু সবার আগে খগেন মুর্মুকে খুঁজে বের করা, বিজেপি নেতৃত্বকে টিকিট দিতে রাজি করানো এসবের কৃতিত্ব অবশ্যই একজনের। তিনি মুকুল রায়।
শুধু খগেন মুর্মু নন, ভোটের মুখে ভিন দল থেকে ভাঙিয়ে যাঁদের বিজেপির টিকিটে লড়িয়েছেন মুকুল রায় তাঁরা প্রায় সকলেই মুখ রেখেছেন। মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার বক্তব্য, “বাছাইটাই আসল। কোন আসনে কাকে প্রার্থী করা উচিত সেটা নিয়ে দাদার ভাবনা যে একশো ভাগ ঠিক সেটা প্রমাণ হয়ে গেল এই নির্বাচনে।”
এটা সকলেরই জানা যে, তৃণমূল কংগ্রেস থেকে অনুপম হাজরা, সৌমিত্র খান, নিশীথ প্রামাণিকদের বিজেপিতে আনা এবং লোকসভা নির্বাচনের টিকিট দেওয়ার নেপথ্য নায়ক ছিলেন মুকুল রায়। যাদবপুরে অনুপম ছাড়া বাকি দু’জনেই জিতেছেন। এক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখার যে নিশীথ বা সৌমিত্র নিজেদের পুরনো আসন থেকে জয় পেয়েছেন। কিন্তু একেবারেই ব্যতিক্রমী জয় খগেন মুর্মুর।
প্রথমে বামপন্থী খগেন মুর্মুকে চরম ডানপন্থী বিজেপিতে নিয়ে আসা। হবিবপুর বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী সিপিএম বিধায়ককে পদত্যাগ করিয়ে লোকসভার টিকিট দেওয়া পর্যন্ত সবটাই ছিল ঝুঁকির। তবু ঝুঁকি নিয়েছেন মুকুল রায়। বিজেপি নেতৃত্বকে রাজি করিয়েছেন। এটা ঠিক বিজেপি নেতৃত্বও মুকুলের উপরে ভরসা রেখেছে। আর এসব কিছুর জেরে মুকুল এখন রাজ্য বিজেপির কাছে ‘মিরাকল ম্যান’।
খগেন মুর্মুর সামনে মালদা উত্তরে কার্যত ছিটকে গিয়েছেন মৌসম নুর। ভোটের আগে এবং পরেও ভাবা হচ্ছিল, গনি খানের গড় হিসেবে পরিচিত এই আসনে মূল লড়াইটা হবে কংগ্রেসের সঙ্গে অন্য কোনও একটা দলের। বাস্তবে দেখা গেল, কোনও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই-ই হল না। ভাবা হচ্ছিল, সিপিএম প্রার্থী বিশ্বনাথ ঘোষের প্রাপ্ত ভোট অনুঘটকের কাজ করবে। বাস্তবে দেখা গেল, সিপিএম কোনও মতে তিন শতাংশ পার করল। গণনার সকালে, মৌসম ও খগেন সমানে সমানে টক্কর দিয়েছেন। আর বেলা বাড়তে না বাড়তেই মৌসম ক্রমে পিছিয়ে পড়তে থাকেন। একটা সময়ে গিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান খগেন। ভোটের মুখে দলবদল করা দুই প্রার্থীর লড়াই শেষে আসলে হাসলেন মুকুল রায়।
এমনটা যে হবে সেটা আগেই বলেছিলেন মুকুল রায়। বলেছিলেন, হবিবপুর বিধানসভা উপনির্বাচনেও জিতবে তাঁর নতুন দল। হলও তাই। গণনার শেষে জানা গিয়েছে, জোয়েল মুর্মু জিতেছেন ৫০ শতাংশের বেশি আসন পেয়ে। খগেন মুর্মু জিতেছেন ৮০ হাজারের বেশি ভোটে। সন্ধের সময়ে টিভির সামনে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন বাম-বিধায়ক থেকে রাম-সাংসদ হওয়া খগেন মুর্মু বললেন, ‘এটা সবকা সাথ সব কা বিকাশের জয়।’
এটাই তো পরিবর্তন! এটাই তো করে দেখালেন ‘মিরাকল ম্যান’ মুকুল রায়।