‘স্পিকার বেআইনি কাজ করেছেন,’ শাসকদলের চাপ বাড়িয়ে PAC মামলায় জানাল হাইকোর্ট

মুকুল রায়ের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে (PAC) চেয়ারম্যান থাকার বিষয়টি বিধানসভার স্পিকারের উপরেই ছেড়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মুকুল রায়ের পিএসি চেয়ারম্যান থাকা নিয়ে মামলায় স্পিকারের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন আদালত। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, স্পিকার ‘বেআইনি’ কাজ করেছেন।

বুধবার পিএসি মামলায় আদালত জানায়, মুকুলের পিএসসি-র চেয়ারম্যান থাকার বিষয়টি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় নিতে পারেন। কারণ, বিধানসভার যাবতীয় কার্যকলাপ নিয়ম অনুসারে স্পিকারই পরিচালনা করে থাকেন। এই প্রেক্ষিতে আদালত স্পিকারকে ৭ অক্টোবরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় এদিন।

এদিন মামলার শুনানিতে মামলাকারীর বক্তব্য ছিল বিধানসভার বিরোধী নেতা ছাড়া কাউকে পিএসি চেয়ারম্যান করা যায় না। এই প্রেক্ষিতে আদালত জানায়, এর নির্ণায়ক হবেন একমাত্র বিধানসভার স্পিকার। তার পরেই আদালতের পর্যবেক্ষণ, “সত্যি হল যে, স্পিকার বেআইনি কাজ করেছেন। এমন একজনকে বেছে নেওয়া হয়েছে যিনি দল ছেড়েছেন (মুকুল রায়)। সত্যি যদি তাঁর পদ খারিজ হয়ে যায়, তাহলে তিনি বিধায়ক কীভাবে থাকবেন।” তাহলে পিএসি চেয়ারম্যানই মুকুল হবেন কীভাবে? প্রশ্ন আদালতের।

উল্লেখ্য, গত ১১ জুন মুকুল রায় বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফেরেন। তার পর দল ত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের আবেদন জানিয়ে বিধানসভার স্পিকার কে চিঠি দেন বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই আবেদন অধ্যক্ষের বিবেচনাধীন।

এদিকে আদালত এদিন জানিয়েছে, সময়ের মধ্যে আবেদনের নিষ্পত্তি করার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও, ‘স্পিকার সেই ফাইল চেপে বসেছিলেন! মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে দায়ের হওয়া মামলার সঙ্গে PAC চেয়ারম্যান পদে থাকার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বিধায়ক পদ খারিজের আবেদনটি তিন মাসের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। তার পরেও কেন পদক্ষেপ করলেন না বিধানসভার স্পিকার?’ প্রশ্ন আদালতের।

পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ই ঠিক করবেন কোন পথে হবে এই সমস্যার সমাধান। এ জন্য ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে তাঁকে। মুকুল রায়ের পিএসি পদ খারিজ নিয়ে কী ভাবছেন তা জানাতে হবে স্পিকারকে। আগামী ৭ তারিখের মধ্যে তিনি উত্তর না দিলে আদালত হস্তক্ষেপ করবে।

এদিন মামলাকারী বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়ের দায়ের করা মামলায় এক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আদালত এদিন জানায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বিধানসভা সংক্রান্ত কোনও মামলায় ৩ মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে হয়। তাই এই পিএসি মামলায় আর বেশি দেরি করা সম্ভব নয়। এর পরেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নিষ্পত্তি কোন পথে হবে তা খুঁজতে হবে বিধানসভার স্পিকারকেই। সাত অক্টোবরের শুনানিতে স্পিকারকে এই ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রতীকে এ বারই প্রথম বিধায়ক নির্বাচিত হন মুকুল রায়। তবে তার মাস দেড়েকের মধ্যেই তিনি ফিরে যান তৃণমূলে। তার পরেই তাঁর বিধায়ক-পদ খারিজের জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। পাশাপাশি তাঁকে পিএসি চেয়ারম্যান করা নিয়েও দায়ের হয় মামলা। কাগজে-কলমে তিনি বিরোধী দলনেতা। যোগ দিয়েছেন আবার তৃণমূলে। তা সত্ত্বেও বিধানসভার পিএসি চেয়ারম্যানের পদ মুকুল রায়ই পেয়েছেন। সেই নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বেশ কয়েকবার উত্তপ্ত হয়েছে কোর্টরুম।

এদিকে এদিনের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিধানসভার স্পিকার বলেন, “আমাদের কাছে আদালতের বক্তব্য এসে পৌঁছেছে। আমরা খতিয়ে দেখছি। তারপর সিদ্ধান্ত নেব। যা করার বিধানসভার নিয়ম ও আইন মেনে করব। বিধানসভার নিজস্ব আইন আছে। হাইকোর্টের আলাদা আইন আছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.