ফুল বদলের মরসুম চলছে রাজ্যে। ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুল হাতে তুলে নেওয়ার এক প্রকার হিড়িক পড়েছে। জোড়াফুল বাগানের অভিজ্ঞ মালি এখন পদ্মফুলের বাগিচায়। অন্য বাগানের গাছ তুলে এনে নিজের বাগানে বসিয়ে, তিনি এর আগেও তাঁর কেরামতি দেখিয়েছেন। এবারও দেখাচ্ছেন। পদ্মের বাগান ক্রমশ ভরে উঠছে।
তবে এবার মালির হাতের খেল একটু ভিন্নতর। এবং ভিন্ন বলেই ভয়ঙ্কর।
মুকুল রায় যাঁদের বিজেপিতে নিয়ে আসছেন তাঁরা তো মমতার মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে ঠিকই, তার চেয়েও বেদনার কারণ হয়ে উঠছে, যাঁদের এখনও তৃণমূলে রেখে দিয়েছেন। অচেনা খেলা মুকুলের। তৃণমূল থেকে বার করে এনে কাউকে দাঁড় করাচ্ছেন মমতার সঙ্গে সম্মুখ সমরে। কাউকে আবার আপাতত তৃণমূলেই রেখে দিয়ে বলছেন, দলটাকে ভেতর থেকে কুরে কুরে খেতে। যাঁরা বেরিয়ে আসছেন, তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁদের সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছে। যাঁরা রয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের ওপর সন্দেহ হলেও ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই।
এরই মধ্যে বিজেপির একটি সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা আলগোছে ঘুরছে রাজনীতির তপ্ত বাতাসে।
দমদম থেকে সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্তর নাম রয়েছে সেই প্রচারিত সম্ভাবনায়। পাশপাশি নাম রয়েছে শমীক ভট্টাচার্যেরও। দমদমে শমীক ভট্টাচার্য বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী। সুবক্তা, পরিচিত মুখ, শহুরে মানুষের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য, শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব।
শমীক দমদমে নিশ্চিত হলে বসিরহাটে মুকুল ঘনিষ্ঠ কাসেম আলি মন্টুর সম্ভাবনা আর একটু বৃদ্ধি পায়। কাসেম বসিরহাটের ভূমিপুত্র। সংসদীয় এলাকা হাতের তালুর মতো চেনা ও জানা। শোনা যাচ্ছে আভ্যন্তরীণ বৈঠকে কাসেমের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত দিলীপ ঘোষও সায় দিয়েছেন। বারাসাতেও যিনি প্রার্থী হতে চলেছেন বলে শেষ পাওয়া খবর, তিনিও ফুল বদল করেই প্রার্থী হবেন। বহুচর্চিত লুচি তরকারি শেষ পর্যন্ত মিষ্টি মুখেই শেষ হচ্ছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। তাই মিষ্টভাষী, নরম ব্যক্তিত্বের, মুকুলের ভ্রাতৃপ্রতীম, মাটির কাছাকাছি থাকা তৃণমূল নেতাই যে বারাসাতে বিজেপির প্রার্থী হবেন তা এক প্রকার ঠিক।
কলকাতা উত্তরে রাহুল সিংহের নাম সম্ভাবনার শীর্ষে রয়েছে স্বাভাবিক ভাবে। তবে রাজনীতিতে স্বাভাবিক আর অস্বাভাবিক বড় আপেক্ষিক। রাজ্যের শাসক দলের একজন প্রবীন মন্ত্রী মহোদয় কলকাতা উত্তরে পদ্মে প্রস্ফুটিত হতেই পারেন, যদি না তাঁর স্বাস্থ্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এবার শ্রীরামপুরের ভোটের শ্রীবৃদ্ধি করবে শ্বশুর জামাই দ্বৈরথ। কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদা জামাতা কবীর বসু প্রাক্তন শ্বশুরকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন এই খবর অনেকদিন ধরেই পাকা।
দার্জিলিং-এ চমক আলুওয়ালিয়ার জায়গায় সতপাল মহারাজ। দার্জিলিং-এ সাম্প্রতিক অশান্তিতে আলুওয়ালিয়ার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল বিস্তর। সেই জন্যে বদলের সিদ্ধান্ত হলেও হতে পারে। তবে সম্ভাবনার তালিকায় তাঁর নাম কোথাও নেই। উলুবেড়িয়ায় ইশরাত জাহানের নাম দীর্ঘ দিন ধরে ঠিক হয়ে আছে। আর দক্ষিণ মালদায় সুবক্তা, লড়াকু নেত্রী মাফুজা খাতুন।
পুরুলিয়ায় নরহরি মাহাত, বোলপুরে অনুপম হাজরা, বিষ্ণিপুরে সৌমিত্র খাঁ, এঁরা সম্ভাবনার পর্যায়ে নয়, বরং নিশ্চয়তার পর্যায়ে।
বাকি সম্ভাবনার তালিকাটি নিচে দেওয়া হল :
আসানসোল—বাবুল সুপ্রিয়
মেদিনীপুর—দিলীপ ঘোষ
বাঁকুড়া—সায়ন্তন বসু
কোচবিহার—দীপক বর্মন/ অশোক মণ্ডল
জলপাইগুড়ি—অমুল্য রাই
আলিপুরদুয়ার—বীরেন্দ্র চন্দ্র ওঁড়াও
মালদহ উত্তর—খগেন মুর্মু
কৃষ্ণনগর—জয়প্রকাশ মজুমদার/ জুলু মুখোপাধ্যায়
রানাঘাট—অর্চনা মজুমদার
বনগাঁ—মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের মেয়ে/ দুলাল বর
বর্ধমান পশ্চিম—গুরুপদ দাস।