দুধেল গোরুর খুরে রক্তাক্ত পশ্চিমবঙ্গ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবেন। এখন তিনি সেটাই করছেন। আর তার এই বুঝে নেওয়ার দোসর হয়েছে দুধেল গোরুরা। উপমাটি স্বয়ং মমতার। তাঁর বিরুদ্ধে মুসলমান তোষণের অভিযোগ নতুন নয়। এতকাল তিনি ওই অভিযোগ হয় এড়িয়ে গেছেন নয় তো অস্বীকার করেছেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় ফল করার পর আর কোনও রাখঢাক রাখেননি। স্পষ্টই বলেছেন, যে গোরু দুধ দেয় তার লাথি সহ্য করতে হয়। এখানে মমতার গোর মুসলমানেরা। তিরিশ বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের হুকুম পেলে তারা লাঠি-বন্দুক ধরেন। বোমা ছোঁড়েন। দু-চারটে লাশ ফেলে দেন। এই সন্ত্রাসই মমতার ভাষায় দুধ। মুসলমানের ভোটও দুধের সমগোত্রীয়। সুতরাং একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দুধেল গোরুরাই যে। তার প্রধান ভরসা সেটা মমতা বিলক্ষণ জানেন। তাই মুসলমানরা যতই লাথিঝাটা মারুন মমতা কিছু মনে করেন না। লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে গোরুদের দাপাদাপি। বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার হাতিয়ার গোরু অর্থাৎ মুসলমানেরা। বসিরহাটের ন্যাজাটে এই দায়িত্ব পালন করেছেন শাহজাহান শেখ। কে এই শাহজাহান শেখ? তার একটি পরিচয়। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা। কিন্তু ন্যাজাট থানার ভাঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, অনেক আগে থেকেই শাহজাহানের বিরুদ্ধে লুঠপাট, ডাকাতি আর তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এমনকী, ২০১৭ সালে বসিরহাটে হিন্দুদের ওপর যে হামলা হয়েছিল তার সঙ্গেও শাহজাহানের যোগ ছিল বলে অনেকে বলছেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাটে কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসু হারলেও ভালো ভোট পেয়েছেন। মুসলমানদের একটা অংশও যে তাকে ভোট দিয়েছেন সে খবরও আছে। সুতরাং বিজেপির ভোটারদের ভয় দেখাতে শাহজাহান শেখেদের মতো দাগি অপরাধীদের ব্যবহার করে বিজেপি নেতাদের খুন করানোটা মমতার মাস্টারপ্ল্যান। এতে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। হিন্দুদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। তারা বিজেপিকে ভোট দেবার কথা ভাববেন না। অন্যদিকে মমতা মুসলমানদের কাছে আরও একটু বিশ্বস্ত হয়ে উঠবেন।
তবে বিজেপি নেত্রী সরস্বতী দাসকে যেভাবে খুন করা হয়েছে তাতে সকলেই শিউরে উঠেছেন। সরস্বতীদেবীর মাথার ঘিলু বেরিয়ে আসার ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ন’টা গুলি করা হয়েছে তার মাথায়। বিজেপির দাবি তৃণমূলের গুন্ডারা সরস্বতীকে খুন করেছে। তৃণমূলের বক্তব্য, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে খুন হয়েছেন সরস্বতী। পুলিশও সেই লাইনেই তদন্ত শুরু করেছে।
বলা বাহুল্য, তৃণমূল এবং পুলিশের যুক্তি আদপেই ধোপে টেকে না। সরস্বতী একজন সাধারণ গৃহবধূ। থাকতেন হাসনাবাদের টাকিপুর গ্রামে। তার ব্যক্তিগত জীবনে এরকম কোনও ভয়ংকর শত্রুতা থাকার অবকাশ নেই বললেই চলে যা একদিন খুনোখুনিতে পরিণত হতে পারে। তাছাড়া, যেভাবে সরস্বতীকে খুন করা হয়েছে সেটা কোনও পেশাদার খুনির কাজ। যে ব্যক্তি খুন করেছেন তিনি পেশাদার ও বটে, প্রতিশোধপরায়ণও বটে। নয়তো কেউ মাথায় ন’টা গুলি করে না। সরস্বতীর মাথার ঘিলু বেরিয়ে আসার পরই খুনি ক্ষান্ত হয়। আগেই বলেছি এটা কোনও সাধারণ খুনির কাজ নয়। এমনকী, এই নিষ্ঠুরতা কোনও অ-মুসলমান ব্যক্তির পক্ষে দেখানো সম্ভব কিনা তাই নিয়েও তর্কের অবকাশ রয়েছে। হাসনাবাদ অঞ্চলে ইতিমধ্যেই সে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ তদন্তের নামে প্রহসন শুরু করেছে বটে কিন্তু আসল অপরাধীরা ধরা পড়বে না। এখানেও উঠে এসেছে সেই গোরু-তত্ত্ব। আসল অপরাধীরা সকলেই নাকি মুসলমান।
বস্তুত, রাজনীতির নামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার অসূয়ানীতি ছড়িয়ে দিয়েছেন দলের মধ্যে। যার নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছে চিকিৎসকদের সাম্প্রতিক ধর্মঘটে মমতার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি হুমকি দিয়েছেন চিকিৎসকদের। মুসলমানদের হিন্দুবিদ্বেষী আক্রমণের শিকার ডাঃ পরিবহমুখোপাধ্যায়কে একবার দেখতে যাবার আগ্রহ দেখাননি। এখনও পর্যন্ত সাড়ে সাতশো সরকারি চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। ভেঙে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবা। অথচ মমতা নির্বিকার। তিনি হিন্দু-মুসলমান বাঙ্গালি-অবাঙ্গালি মেরুকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রকাশ্য সভা থেকে বখাটে ছেলেদের চাকরি দেবার কথা ঘোষণা করছেন। এসব দেখে মনে হয় তৃণমূল দলটা আদৌ থাকবে তো? নাকি এক রাজনৈতিক উন্মাদের পাপের প্রায়শ্চিত্য করতে ভবিষ্যতে জেহাদি সংগঠনে পরিণত হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে। তবে একটা কথা এখনই বলা যায়। মমতা ছিলেন বাঙ্গালির চোখের মণি। এখন তিনি চোখের বালিতে পরিণত। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে চোখে ভালো করে জলের ঝাপটা না দিলে বাঙ্গালির চোখ কিন্তু জ্বলতে থাকবেই।
সন্দীপ চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.