আজও ছিল নুন ভাত, পরে জুড়ল ডিম-ডাল, তাতেও নাটক

আজও মেনু ছিল নুন আর ফ্যানাভাত। পরে সঙ্গে জোড়ে একটা করে ডিম সেদ্ধ। এবং ডালও। তবে এই ডিম নিয়েও যুযুধান দু’পক্ষের কাজিয়া চলল চুঁচুড়ার বাণীমন্দির স্কুলে।

মিডডে মিল নিয়ে সোমবারের গন্ডগোলের পরে আজ স্কুলে আসেন পরিচালন কমিটির সভাপতি গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁকে দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষিকারা। আজও ছাত্রীদের জন্য ফ্যানভাত আর নুনেরই বন্দোবস্ত হয়েছিল। হঠাৎই কেউ একজন নিয়ে আসে ডিম আর রান্নার মশলা। সভাপতি বলেন, পড়ুয়াদের ডিমের ঝোল করে দিতে। তাতেই আগুনে ঘি পড়ে। শিক্ষিকারা জানান, এত বেলায় রান্না শুরু করলে খেতে দেওয়া হবে কখন ? সভাপতি বলেন, রান্না তো শিক্ষিকারা করবেন না, করবে রাঁধুনি। তাঁদের জিজ্ঞাসা করতে। কিন্তু রাঁধুনিদেরও একই যুক্তি। ‘‘এত বেলায় রান্না শুরু হলে, দেড়টায় খেতে দেওয়া যাবে না।’’

বাধ্য হয়ে ঠিক হয় ফ্যানাভাত, নুন আর ডিম সেদ্ধ। পরে আবার ডাল চাপানো হয়।

শিক্ষিকারা বলতে শুরু করেন, ‘‘আজ প্রশাসনের কর্তারা আসবেন শুনেই নাটক করতে এসেছেন গৌরীকান্তবাবু। ছোটরা যে মিড ডে মিলে শুধু নুন ভাত খাচ্ছে, সে খবর বেশ ভালই জানতেন তিনি। তবুও এত দিন স্কুলে আসেননি।’’

গৌরীকান্তবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সাইনিং অথরিটি নেই বলে কোনও স্কুলে মিডডে মিল বন্ধ থাকে না। কারণ মিডডে মিলের সরঞ্জাম ধারে আসে। পরে পেমেন্ট হয়। স্কুলে যে ভাড়ার শূন্য, তা জানানো হয়নি আমাকে। কাল সব জানতে পেরে আজ ধারে কিনে এনেছি।’’ ডিমও ধারে আনা হয়েছে বলেই দাবি করেন তিনি। তবে শোনা যায় ছাত্রীরা নুন ভাত খাচ্ছে শুনে ডিম পাঠিয়েছেন পাশের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থবাবু।

ধারে আনার কথা শুনেই আরও তেতে ওঠেন শিক্ষিকারা। বলতে থাকেন, ‘‘উনি মহানাগরিক। ধার চাইলেই দোকানে ধার দেয়। আমাদের কে ধার দেবে? আর ধার শোধ কোথা থেকে হবে না জেনে ধার চাইতেই বা যাবে কে?’’

শিক্ষিকাদের সঙ্গে পরিচালন কমিটির এই সংঘাত চলাকালীনই স্কুলে আসেন চুঁচুড়া সদরের এসডিও অরিন্দম বিশ্বাস। শুরু হয় বৈঠক। পরে অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। খুব শীঘ্রই এই স্কুলে টিচার ইনচার্জ বা প্রধান শিক্ষিকা নিয়োগ করা হবে। যতদিন না তা হচ্ছে, ততদিন এখানকার মিডডে মিল দেখাশোনা করবে চুঁচুড়া পুরসভা। পুরসভার খাত থেকেই মিডডে মিলের খরচ বহন করা হবে।’’

গতকা‌লই চুঁচুড়া বালিকা বানীমন্দির স্কুলে মিড ডে মিলে নুন ভাত কাণ্ডে সাসপেন্ড করা হয় দুই শিক্ষিকাকে। স্কুলের প্রাক্তন টিচার ইনচার্জ শমিতা কুশারী আর বর্তমান টিচার ইনচার্জ পূর্বা মুখোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানান হুগলি জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। ঘটনার জেরে হুগলি জেলার সব স্কুলে মিডডে মিলের অবস্থা খতিয়ে দেখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মিডডে মিল কেমন চলছে দেখার জন্য চুঁচুড়া পুরসভা এলাকারএকশো স্কুলের রান্নাঘর আর খাওয়ার জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে । তিনশো অফিসার আগামী কাল থেকে জেলার এক হাজার স্কুলে মিড ডে মিলের অবস্থা ঘুরে দেখবেন বলে জানিয়েছেন হুগলির জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.