জনরোষের ভয়ে প্রশাসনও এখন তৃণমূল নেতাদের ভরসা জোগাতে পারছে না

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরের দিন অর্থাৎ গত ২৪ মে বিজেপির বিপুল জয়ের খবরের সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের শুনশান পার্টি অফিসের ছবি একাধিক বাংলা সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে। এরপর থেকেই সংবাদপত্রের পাতা জুড়ে থাকছে। নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস ও বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে নানা খবর। এই সমস্ত খবরের মধ্যে কমপক্ষে দুটি খবর মানুষকে ভাবাচ্ছে। (১) দখল হওয়া পার্টি অফিস তৃণমূলের হাত থেকে উদ্ধার করে বিজেপি সিপিএমের হাতে তুলে দিচ্ছে। (২) তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা সংক্রান্ত খবর।বিজেপি সিপিএমের পার্টি অফিস উদ্ধার করে দিচ্ছে এরকম একটি খবরে এক ঝলকে এটা মনে হতে পারে পশ্চিমবঙ্গে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে পা রেখে যারা রাজনীতি করেন তাদের বক্তব্য, এই ধরনের উদারতা ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনৈতিক অপরিপক্কতা, দূরদর্শিতার অভাবকেই প্রতিফলিত করে।কারণ মতাদর্শগত দিক থেকে বিজেপি ও সিপিএমের অবস্থান পরস্পর বিপরীত মেরুতে। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বিজেপির প্রসঙ্গ এলে অসভ্য বর্বর ছাড়া কথা বলতেন না। আর মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর এস এস বিজেপির প্রসঙ্গ উঠলেই মাথা গুড়িয়ে দেব বলে হুংকার ছাড়তেন। এহেন সিপিএমের পার্টি অফিস বিজেপি উদ্ধার করে দিলে তা রাজনৈতিক আত্মহনন ছাড়া আর কী হতে পারে। বিজেপির হাত ধরে এ রাজ্যে ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন প্রত্যাশী মানুষকে এই ধরনের রাজনৈতিক আত্মহননের সমতুল্য খবর হতাশ করবে এটাই স্বাভাবিক।
এই ধরনের সংবাদের ময়না তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেল তৃণমূলের বর্তমান পার্টি অফিসগুলির সিংহভাগই এক সময় সিপিএমের পার্টি অফিস ছিল। কিন্তু লোকসভায় খারাপ ফলের পর তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের পার্টি অফিস খুলতে সাহস হচ্ছে না দেখে এবং এ ব্যাপারে বিজেপির কর্মীদের নীরবতার সুযোগে সিপিএমের লোকেরা গুটি গুটি পায়ে জনমানবহীন পার্টি অফিসগুলিতে ঝান্ডা লাগতে শুরু করে। এ বিষয়ে আরেকটি মত হলো বামের ভোট যেন রামে না যায় সেজন্য পরোক্ষ ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসই সিপিএমের পাটি অফিসগুলি খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এই ঘটনাকে সংবাদমাধ্যম একটু ফ্লেভার জুড়ে দিয়ে খবর করছে যে বিজেপি তৃণমূলের হাত থেকে সিপিএমের পার্টি অফিস উদ্ধার করে দিচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর উত্তরবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক নেতা-কর্মী এমনকী মন্ত্রী, এমএলএ-রাও জনরোষের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছেন । কোনো তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী আক্রান্ত হলে থানায় অভিযোগ জানানোর মতো কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। সাহসে ভর করে যারা বের হচ্ছেন তাদের সিংহভাগই জনরোষের মুখে পড়ছেন। দল বদল করে বিজেপিতে যোগদানের ফলে বিভিন্ন পুরসভা, গ্রামপঞ্চায়েতে ক্ষমতা হারিয়ে তৃণমূল ক্রমশই কোণঠাসা হচ্ছে। জনসমর্থন এতটাই তলানিতে নেমেছে যে প্রশাসন সক্রিয়। হয়েও তৃণমূলের ভাঙন রোধ করতে পারছে না। সেজন্য তৃণমূল নেতাদের ঘিরে এই ধরনের ভিড়, বিক্ষোভ যতটানা রাজনৈতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফুর্ত। বাম জমানার শেষের দিকে বামফ্রন্টের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে যে ধরনের জনরোষ দেখা যাচ্ছিল বর্তমানে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত কম সময় ক্ষমতায় থেকে তৃণমূল কেন এতটা জনরোষের মুখে পড়ছে?
এই জনরোষের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে তৃণমূল নেতাদের ঘিরে মানুষের এই ক্ষোভের মধ্যে লুকিয়ে আছে বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রণা। সিপিএমের দীর্ঘ অপশাসনের অন্ধকার, স্বজন পোষণ, দলতন্ত্র, লাল ফেট্টি বাধা জল্লাদদের হাড়হিম করা সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যখন রাজ্যের মানুষ। ছটফট করছিলেন, সে সময় ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচার শেষ চেষ্টা চালায়, ঠিক তেমনি মমতা ব্যানার্জি তথা তৃণমূল কংগ্রেস নামক অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে রাজ্যবাসী পশ্চিমবঙ্গে বসবাসযোগ্য এক সভ্য সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুর করেছিলেন। ২০১১ সালে সিপিএমের কুশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার এই ভাবাবেগ একনিঃশব্দ ইভিএম বিপ্লবের মাধ্যমে বামেদের সরিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল।
মানুষ ধরে নিয়ে ছিল মমতা ব্যানার্জি মানুষের ভাবাবেগকে সম্মান জানিয়ে নতুন নতুন মুখ এনে নতুন করে দল গড়ে নতুন করে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দের বাঙ্গলাকে গড়ে তুলতে শুরু করবেন। গ্রামপঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলাপরিষদ, পৌরসভাগুলির ঘুঘুরবাসা ভাঙতে গণতান্ত্রিক উপায়ে নতুন করে নির্বাচন করিয়ে জনসেবার প্রতি দায়বদ্ধ মানুষদের বসিয়ে সোনার বাঙ্গলা গড়ে তুলবেন। এই গড়ার প্রক্রিয়ায় হয়তো বা ভুল ত্রুটি হতো, সময় লাগতো, তাতে মানুষের ধৈৰ্য্য চ্যুতি ঘটতো বলে মনে হয় না। কারণ পথ সঠিক থাকলে কোনো কিছু গড়তে যে সময় লাগে তা মানুষ বোঝে। কিন্তু মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব বেশি দিন সময় লাগলো না। মানুষ দেখলো জনরোষের মুখে পড়ে সিপিএম ও ফরোয়ার্ড ব্লকের যে সমস্ত নেতা-নেত্রীর ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ার কথা অর্থাৎ রাজনৈতিকমৃত্যু ঘটার কথা ‘বদলা নয় বদল চাই’ স্লোগান তুলে মমতা ব্যানার্জি সেই সমস্ত নেতা-নেত্রীর অধিকাংশকে সঞ্জীবনী প্রদান করে নিজের দলে টেনে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে বিরোধীশূন্য করার পথে হাঁটলেন। সেই সংকল্পকে বাস্তব রূপ দিতে কংগ্রেস, সিপিএম, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক প্রভৃতি বিরোধী দল থেকে একের পর এক জনপ্রতিনিধিভাঙাতে শুরু করলেন। সেই সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলাপরিষদ, পৌরসভা নামক সোনার খনি’গুলি তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে এনে দলীয় কর্মীদের হাতে তুলে দিয়ে তোলাবাজি ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থ লুটের খোলা অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।
স্বাভাবিকভাবেই তিনি শুরু করলেন ঠিক সেই জায়গা থেকে যেখানে সিপিএম শেষ করেছিল। ফলে দলতন্ত্র, স্বজনপোষণ, দম্ভ, অহংকার, সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজি, ঘুষখোরি হয়ে উঠলো মমতা ব্যানার্জির শাসন। ব্যবস্থার ভিত্তি। এক সময় দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড প্রবল প্রতাপশালী মুকুল রায়কেই তৃণমূলের সংগঠনের প্রাণ এবং রণকৌশলের নির্মাতা মনে করা হতো। যে সারদা মামলায় তৃণমূল দলটাই ডুবে গিয়েছে সেই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে মুকল রায়কে সিবিআই দপ্তরে হাজিরাও দিতে দেখা যায়। চিটফান্ড মামলায় অভিযুক্ত হয়েও দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর দলনেত্রী মমতার দম্ভ ও অহংকার এমন উচ্চতায় পৌছুল যে দল ছাড়তে বাধ্য হলেন সেই সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায়। নানা টানাপোড়েনের পর মুকুল রায় যোগ দিলেন বিজেপিতে। শুধু মুকুল নন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির অনেক নেতাই দল ছাড়লেন, বহিস্কৃত হলেন এবং মুকুল রায়ের পথ ধরে বিজেপিতে যোগ দিলেন। এদের কয়েক জন লোকসভার বিজেপির টিকিটে নির্বাচিতও হয়ে গেলেন। এখন জনরোষ এতটাই যে সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে সরকারি মেশিনারি ব্যবহার করে ছাপ্পা চালিয়েও তৃণমূল কংগ্রেস ২২টির বেশি আসন জিততে পারলো না এবং এক ধাক্কায় বিজেপির আসন ২ থেকে বেড়ে ১৮ হয়ে গেল। শুধু আসন নয়। বিজেপির ভোট শতাংশও অবিশ্বাস্য ভাবে ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০.২২ শতাংশ হয়ে গেল। বিধানসভা ভিত্তিক হিসেব বলছে বিজেপি ১৩০টি বিধান সভায় জয়ী এবং ৩০ আসনে খুব সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।
বিজেপিতে যোগদানের পর মুকুল রায়ের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তৃণমূল ভাঙানোর কাজকেই তিনি নিজের রাজনৈতিক গুরুত্ব অর্জন ও বিজেপিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মুকুল রায়ের এই দল ভাঙানোর খেলা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নবান্ন দখলের পথকে যে সহজ ও সংক্ষিপ্ত করে দিচ্ছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত পথের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই তা স্পষ্ট হবে। এ রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে যে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তোলাবাজি, জুলুমবাজি, সরকারি অর্থ তছনছ করা, বিরোধী দলের লোকেদের ধমকানো, অসম্মান করা তাদের অধিকার বলে মনে করে। উত্তরবঙ্গে বিজেপির ভালো ফলের পর তৃণমূলি তোলাবাজ, বামপন্থী তোলাবাজরা বিজেপিতে জায়গা করে নেওয়ার প্রয়াস চালাবে এটাই স্বাভাবিক। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর নানা জায়গা থেকে তোলাবাজি ধমকানো চমকানোর যে সমস্ত খবর আসছে তাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে তৃমমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর তোলাবাজরা রাতারাতি স্বঘোষিত বিজেপি হয়ে গিয়ে এই সমস্ত অপকর্ম করছে তাতে সন্দেহ নেই। বিজেপি এই সমস্ত অপকর্ম রুখে দেওয়ার প্রয়াস চালালেও সাংগঠনিক ভাবে যেখানে দল দুর্বল সেই সমস্ত জায়গায় রুখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
মানুষ মনে করে এইসব রাজনৈতিক অশিষ্টাচার রুখে দিয়ে এই রাজ্যকে রাজনৈতিক বিকৃতি থেকে উদ্ধার করে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা বিজেপির দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। প্রয়োজনে প্রশাসন মিডিয়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের মতো দাগিদের দলে নেওয়ার পর মানুষ কিন্তু বিজেপির শ্যামাপ্রসাদের বাঙ্গলা গড়ার লক্ষ্য ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও তৃণমূলি লুম্পেনদের নিয়ে দল ভারী করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। যারা বিজেপিকে জানেন বোঝেন তারা এই দলবদলুদের নিয়ে দলভারী করার পদ্ধতি নিয়ে সংযত প্রতিক্রিয়া দিলেও আমজনতা কিন্তু বিষয়টি একেবারেই ভালো ভাবে নিচ্ছে না। কারণ যে দাগি নেতা-মন্ত্রীদের মানুষশাস্তি দিতে চায় তারা রংবদল করে আবার রাজনৈতিক পূনর্জীবন পাক এটা মানুষ একেবারেই চায় না। তৃণমূল কংগ্রেসে দলবদল করে আসা বামপন্থীদের দাপট দেখে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এই সমস্ত দলবদল রাজনৈতিক পেশাদাররা কুটকৌশলে এতটাই দক্ষ যে এদের সঙ্গে দলের পুরানো নেতা-কর্মীরা পেরে ওঠেন না। ফলে এক সময় ক্ষমতার রাস এই সমস্ত দলবদলুদের হাতেই চলে যায়।
মনে রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কিন্তু দলবদলুদের দেখে নয়, বিজেপিকে ভোট দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর মতো নেতাদের হাত ধরে এক নতুন ভোরের আলো দেখতে। সুতরাং মানুষের এই আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিতেই হবে। কারণ সিপিএমের দীর্ঘ শাসনে তিতিবিরক্ত পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে তৃণমূলের সস্তা চমকের রাজনীতিকে বেশি সময় দিতে রাজি নয় তা এবার লোকসভা নির্বাচনেই প্রমাণিত। গত পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদী সস্তা রাজনীতির ধারে কাছে না গিয়ে অনেকগুলি কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও মানুষ বিজেপিকে আরও বেশি ভোটে ক্ষমতায় ফিরিয়েছে। এতে প্রমাণ হয় জাতপাত, সংখ্যালঘু, কিংবা সস্তা পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে ক্লান্ত মানুষ এখন গুণাত্মক রাজনীতিই পছন্দ করছেন। মানুষের এই বার্তা যারা পড়তে পারছে না তারা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটেও এই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত প্রচুর।
সাধন কুমার পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.