সারা বাংলাতেই শ্রাবণ সংক্রান্তির দিন তাঁর আরাধনা হয়। কিন্তু পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের প্রান্তিক মানুষদের কাছে লোকদেবী মনসার বন্দনা অন্য মাত্রা পায় প্রতি বছরই। তাঁদের বিশ্বাস দেবীকে তুষ্ট রাখলে সর্পদংশনের ভয় কমে যায় অনেকখানি। আর তাই এ দিন প্রতিটি পরিবার দেবীকে নিবেদন করেন অন্তত একটি হাঁস। মনসা পুজোয় অঘোষিত বনধের চেহারা নেয় পুরুলিয়া।
পাহাড় জঙ্গলের পুরুলিয়ায় প্রতি বছরই বিভিন্ন বিষাক্ত সাপের ছোবলে মৃত্যু হয় বহু মানুষের। এই ভয়ে ভক্তির পরম্পরা চলে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। শুধু সর্প দংশন থেকে রক্ষা পেতেই নয়, ঐশ্বর্যলাভের আশাতেও শ্রাবন সংক্রান্তিতে মনসা দেবীর আরাধনা করে আসছেন এখানকার মানুষ। এবং তা যথেষ্ট জাঁকজমক সহকারেই। বিভিন্ন মন্দিরে তো বটেই, প্রায় প্রতি গৃহস্থের বাড়িতেই পুজো।
হাঁস বলি এ পুজোর অন্যতম অনুসঙ্গ। তাই আজ পুরুলিয়া শহরের মূল বাজারে উপচে পড়েছে হাঁস বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ভিড়। পুজোয় বলি দেওয়ার জন্য লক্ষাধিক হাঁসের যোগান দিতে মেদিনীপুর, বর্ধমানের খামার থেকে হাঁস আসে। বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। হাঁসের জমজমাট বাজার থাকে প্রায় এক সপ্তাহ।
মনসা পুজো সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে যায়। মন্দিরের প্রাঙ্গনে হয় জাত মঙ্গল গান। জাত মঙ্গলকে কোরাস গানও বলা যেতে পারে। মূলত মনসা মঙ্গলের কাহিনীকে গানের মাধ্যমে তুলে আনা হয় জাত মঙ্গলে। এখানে গানের মাতন চলে সারা রাত ধরে। প্রহরে প্রহরে মনসার পুজো হয়। নিবেদন করা হাঁসের মাংস দিয়ে পরদিন ভাত খান এখানকার মানুষ। এটাই রীতি। মনসার পুজোয় ব্রাহ্মণ পুরোহিত অবশ্যক নয়। তাই এটি সার্বজনীন উৎসব পুরুলিয়ায়।
আগের বছরের তুলনায় এ বছর হাঁসের চাহিদা বেড়েছে। তাই জেলার বিভিন্ন জায়গা তো বটেই পড়শি রাজ্য ঝাড়খন্ড থেকেও বহু হাঁস বিক্রেতা ও ক্রেতা ভিড় জমিয়েছেন শহরে। তাই হাঁস বিক্রি হচ্ছে ভালোই। শহরের আশপাশের গ্রামগুলিতে হাঁস পাওয়া যাচ্ছে না বললেই হয়। তাই শেষ মুহূর্তে হাঁস কেনার জন্য ভিড় উপচে পড়ছে শহরে।
মূলত হাঁসের বাজার ও পূজোর সামগ্রী কেনাকাটার কয়েকটি দোকান ছাড়া অন্য দোকানপাট সমস্তই প্রায় বন্ধ। প্রতি বছরের মতো এবারও জেলা জুড়ে জমজমাট হল মনসা পুজো।