উত্তর ভারতে ভয়াবহ বন্যায় মৃত অন্তত ৩০, সতর্কতা জারি দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে

উত্তর ভারতে বন্যা পরিস্থিতি দিনদিন খারাপ হচ্ছে। হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই বন্যায় অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। উত্তর ভারতের চার রাজ্য, দিল্লি, পঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সবথেকে খারাপ অবস্থা হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের। প্রবল বৃষ্টিতে একাধিক জায়গায় ধস নেমে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলে পাহাড়ি নদী থেকে একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালানো হয়। কিন্তু ড্যামে জল বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে সেই প্রকল্প বন্ধ করে অতিরিক্ত জল ছাড়তে হচ্ছে। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

রবিবার পর্যন্ত বন্যার কবলে পড়ে শুধুমাত্র হিমাচল প্রদেশেই ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে সিমলায়। এক পরিবারের চার জন গাড়িতে যাওয়ার সময় ধসের ফলে খাদে পড়ে মারা গিয়েছেন বলে খবর। উত্তরাখণ্ডে প্রাণ গিয়েছে চার জনের। পঞ্জাবে একটি বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ায় সেই পরিবারের সবাই মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দিল্লির কেজরিওয়াল সরকার সেখানে বন্যার সতর্কতা জারি করেছে। জানানো হয়েছে, যমুনার জল খব তাড়াতাড়ি বিপদ সীমার ( ২০৫.৩৩ মিটার ) উপর দিয়ে বইবে। ফলে দিল্লির নিচু এলাকায় থাকা মানুষদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাড়াতাড়ি ঘর ছেড়ে উঁচু এলাকায় চলে আসতে। হরিয়ানার হাথিনি কুণ্ড ব্যারেজ থেকে ৮ লক্ষ ২৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়ায় যমুনার এই অবস্থা বলেই জানিয়েছেন এক আধিকারিক।

ইন্ডিয়ান মিটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, হিমাচল প্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় যা বৃষ্টি হয়েছে তা গত ৭০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। রাজ্যের ৮৮৭ টি রাস্তা, ১৩টি জাতীয় সড়ক পুরোপুরি জলের তলায়। বেশ কিছু জায়গায় ধসের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই সিমলা-কুলু-মানালিতে আটকে পড়া পর্যটকদের ঘুরপথে বের করে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশি জেলায় ১৫টি বাড়ি ভেঙে পড়ায় অন্তত ১০জন নিখোঁজ বলে খবর। ইতিমধ্যেই ২০জনকে উদ্ধার করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। অনেক লোককে বন্যার কবল থেকে বের করে উঁচু জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরো এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

উত্তরপ্রদেশে গঙ্গা, যমুনা ও ঘর্ঘরা নদীর জল ফুঁসছে। ইতিমধ্যেই বদায়ুঁ, গড়মুক্তেশ্বর, নারাউরা ও ফারুখাবাদে গঙ্গার জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। যোগী আদিত্যনাথের সরকারের তরফেও রাজ্যে বন্যার সতর্কতা ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষকে উঁচু এলাকায় আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু করে দিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।

চলতি বছর এখনও পর্যন্ত বন্যায় ভারতে ১ হাজার ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এর এক-চতুর্থাংশ মানুষই মারা গিয়েছে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.