দিদির যে মুখে কমিশনকে তুই-তোকারি, সেই মুখেই রবীন্দ্রনাথ-বিদ্যাসাগর

বিজেপি বাংলার সংস্কৃতিকে নষ্ট করছে বলে বরাবরের অভিযোগ দিদির। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পরে সেই দাবি আরও জোরালো হয়। রবিবার একুশের মঞ্চে সেই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে চেষ্টা করবেন তা প্রত্যাশিতই ছিল। করলেনও তাই। কিন্তু তা করতে গিয়ে যে ভাবে নাম না করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি-র উদ্দেশে তুই-তোকারি করলেন, তা নিয়েও পাল্টা প্রশ্ন উঠল। এই সংস্কৃতির কথাই বোঝাতে চাইছেন মমতা?

একুশের মঞ্চে দিদি গর্বের সঙ্গেই এ দিন বাংলার ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। বর্ণ পরিচয়, নবজাগরণ, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– এ সবই উঠে আসে তাঁর বক্তৃতায়। এমনকী এ-ও বলেন, “রবীন্দ্রনাথের গায়ে হাত দেবে না, বিদ্যাসাগরের গায়ে হাত দেবে না, বিরসা মুণ্ডার গায়ে হাত দেবে না… আমরা কিন্তু সব থেকে বিপজ্জনক, ডেঞ্জার লেভেল ক্রস করে যাব।”

তার পরেই বক্তৃতা প্রসঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কথায় চলে আসেন মমতা। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় দলের মর্যাদা কেন থাকবে তা নিয়ে কৈফিয়ত চেয়ে তাদের চিঠি দেবে কমিশন। কারণ, লোকসভায় বাইশটি আসন তৃণমূলের থাকলেও চার রাজ্যে ৬ শতাংশ করে ভোট তাদের নেই।

দিদি অবশ্য কমিশনের নাম মুখে আনেননি। কিন্তু দৃশ্যত উগ্র মেজাজে বলেন, “তোর ন্যাশনাল স্টেটাস আমার চাই না। আমি বাংলা থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টেটাস করে নেব।” আবার বক্তৃতার মধ্যেই এক সময়ে বিজেপি-র উদ্দেশে মমতা বলেন, “তোর যদি লোক না থাকে আমার কাছে ধার চা না। আমি দিয়ে দেব ধার। কখনও সিপিএমের থেকে, কংগ্রেসের থেকে ধার নিচ্ছে।”

রাজনৈতিক বক্তৃতায় তুই-তোকারি করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন নয়। লোকসভা ভোটের সময়েও করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-র বিরুদ্ধেও এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে ছাড়েননি।

কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরেই প্রশ্ন উঠেছে, কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের ভাষা মানায়?

এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে তৃণমূলের কেউ কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু তির্যক মন্তব্য করে বলেন, “তৃণমূলের সংস্কৃতি কী, সেটা মানুষের জানা হয়ে গিয়েছে। সেটা উদ্বেগের বিষয় নয়। বরং চিন্তার বিষয় হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশপাশে যে বিদ্বজনেরা ঘুরে বেড়ান তাঁদের বেশির ভাগই এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। তাঁদের হয়তো যুক্তিও থাকবে।”

সায়ন্তন জানান, বিজেপি-কে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের সর্বোচ্চ নেতাকেও তুই-তোকারি করাই যায়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কেও এ ধরনের ভাষা প্রয়োগ করা যায়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী কোনও শিষ্টাচার না মানলেও চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.