সন্দেশখালিতে বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করার দাবি তুললেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়।
এ দিন বসিরহাট জেলা বিজেপি সভাপতি গণেশ ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে সন্দেশখালিতে নিহত বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডলের বাড়িতে যান মুকুলবাবু। নিহত বিজেপি কর্মীর পারলৌকিক কাজ করছিল তাঁর নাবালক ছেলে। সেখানে গিয়েই সাংবাদিকদের মুকুলবাবু বলেন, “খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উস্কানিতে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। আমি ওনাকে খুনি মুখ্যমন্ত্রী বলছি”।
ভাবা যায়! তৃণমূলে এক সময়ে সেকেন্ডম্যান ছিলেন মুকুলবাবু। মমতা-র সবথেকে আস্থাভাজন। এতটাই বিশ্বাসের সম্পর্ক ছিল দলের শীর্ষ সারির অনেকেই ইর্ষা করতেন। এখন রাজনীতি তাঁদের শুধু বিপরীত মেরুতে এনে ফেলেনি, একের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন অন্যজন। তৃণমূল-বিজেপি রাজনৈতিক লড়াইয়ের বৃহৎ ছবির মধ্যে দুই ব্যক্তির সংঘাতও এখানে নজর এড়ানোর মতো নয়। বরং এই দু’জনকেই যাঁরা কাছ থেকে চেনেন, তাঁদের মতে, দিদিকে আর তিষ্ঠতে দেবেন মুকুল দা। আর দিদিও বুঝতে পারছেন, সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে ধুন্ধুমার ফেলে দিতে বিজেপি-র আসল মাথা মুকুলবাবুই।
লোকসভা ভোটে এ বার উত্তর চব্বিশ পরগণায় তৃণমূলের পায়ের তলার জমি অনেকটাই সরে গিয়েছে। বসিরহাট লোকসভায় তৃণমূল জিতেছে ঠিকই। কিন্তু বুথের পর বুথের ফলাফলে দেখা গিয়েছে বিজেপি কী রকম প্রভাব বাড়িয়েছে। তার পর থেকেই অশান্তির সূত্রপাত। গত শনিবার সন্দেশখালি রাজনৈতিক হিংসায় প্রদীপ মণ্ডলের মৃত্যু হয়। বিজেপি-র অভিযোগ তাঁদের হিসাবে এখনও নিঁখোজ রয়েছেন তাঁদের আরও চার জন কর্মী।
সার্বিক এই পরিস্থিতিতে মুকুলবাবু এ দিন সন্দেশখালিতে যান। নিহত পরিবারের পরিজনের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁদের আশ্বাস দেন, আর কোনও হামলা তাঁদের উপর হবে না। পরে সাংবাদিকদের মুকুলবাবু বলেন, এলাকা দখলের লড়াই চালাচ্ছে তৃণমূল। ওদের পায়ের তলায় জমি সরছে। মমতার নির্দেশেই শেখ শাহাজান এখানে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে। বিজেপি কর্মীদের খুন করেছে।
বস্তুত সন্দেশখালির ঘটনার পর তিন দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। এ দিন সে প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন মুকুলবাবু। তিনি বলেন, মমতা হলেন পুলিশ মন্ত্রী। উনি নির্দেশ দেননি বলে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। এবং রাজ্যের এই পুলিশের উপর বিজেপি-র আস্থাও নেই।
তা হলে কী দাবি করছে বিজেপি?
মুকুলবাবু জানান, সন্দেশখালি নিয়ে সবিস্তার রিপোর্ট দেওয়া হবে বিজেপি সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে। ওনার কাছে কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি করা হবে। তার পর তিনি বিবেচনা করে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।
তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, সন্দেশখালি সহ গোটা উত্তর চব্বিশ পরগণায় অশান্তি ছড়াচ্ছে বিজেপি-ই। আর তার নেপথ্যে রয়েছেন মুকুলবাবুই। তাঁর নির্দেশ মতোই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল থেকে শুরু করে বনগাঁ-বসিরহাটে খুঁচিয়ে অশান্তি পাকাতে শুরু করেছে বিজেপি কর্মীরা। পুরনো বাম কর্মী সমর্থকরাও তাতে সামিল হয়েছে। বাংলায় অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে তার রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়াই ওদের লক্ষ্য। কিন্তু এই খেলা বেশিদিন চলবে না।
বিকেলে বিজেপি রাজ্য দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে মুকুল রায় বলেন, “নন্দীগ্রামের সময়ে যেমন বলা হত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাঞ্জাবিতে রক্তের দাগ, ঠিক তেমনই সন্দেশখালির পর বলছি, মুখ্যমন্ত্রীর শাড়িতে রক্তের দাগ।” এ দিন সন্দেশখালির ঘটনার সঙ্গে বারবার নন্দীগ্রামের তুলনা টানেন মুকুল।