আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আজ তিনি আত্মবিশ্লেষণে মগ্ন হয়েছেন। কারণ তাঁর আঙিনায় ৪২টি ঘাসফুলের জায়গায় ১৮টি পদ্মফুল ফুটেছে যে! এখন আত্মসমীক্ষা করার উপযুক্ত সময় বটে! ম্যাডাম কি জানতেন না রাজ্যবাসীকে ঠকিয়ে কীভাবে আপনার দলটি লালু যাদবের দলের মতো বিত্তবান হয়েছে? আপনিই তো একদা বলেছিলেন, শুধু একাই খাবো, এমনটি হয় না। “দলকে ৭৫ শতাংশ দিয়ে, বাদবাকিটা তোমরা নিজেরা খাও”। মনে পড়ে, চন্দননগরের প্রশাসনিক সভায় আপনি নিজের বিধায়ককে এই নির্দেশই দিয়েছিলেন? আপনার ভাই কালীঘাটের একটা ছোট্ট কুঠরির হার্ডওয়ারের দোকান থেকে কীভাবে ফেঁপেফুলে উঠল সেকথা রাজ্যবাসী জানে। আপনিই শুধু জানেন না ! তিন ভাইয়ের বিপুল সম্পত্তির মালিকানার উৎস কোথায় ? নামে বেনামে কালীঘাটের ২১টি জমি ও বাড়ির মালিকানা কার কাছে আছে? কালীঘাটে ভাইপোর রাজপ্রাসাদের অর্থের উৎসটাই বা কী? সারা বাঙ্গলায় সাদা-নীল রঙের ডিলারশিপ কার ? ‘জেনেসিস’ বলে যে সংস্থাটি বিনা টেন্ডারে সমস্ত সরকারি অফিসের কাজ পায়, তার রহস্যটা কী? কার ঘরে ওই ‘ডিভিডেন্ড’ মানে লাভ্যাংশটা যায় ? পুরীর ‘রাজপ্রাসাদ হোটেলটার মালিক কে? ‘ফোর স্কোয়ার’ গ্রুপের আবাসনে কার কালোটাকা খাটে? উত্তর দিন, জমি মাফিয়া ‘নেওটিয়া’র আবাসন প্রকল্পে কার কালো টাকা খাটে? কার ইশারায় একের পর এক শিল্পের জমি হাত বদল হয়ে যায়? আত্মসমীক্ষা করুন আর তার সঙ্গে উপযুক্ত শুদ্ধিকরণও হোক! প্রথমে নিজের ঘর থেকে শুরু করুন— আত্মবিশ্লেষণের পালা! তবেই তো জনসাধারণ বিশ্বাস করবে যে, আপনি সত্যিই ফিরতে চান আপনার পুরানো সততার অবয়বে!
আগে নিজের ঘরের আত্মসমীক্ষা শেষ করুন। তা না হলে রোগ সারবে না। আজ সেই দুর্নীতি রোগ যে ছড়িয়ে পড়েছে পাড়ায় পাড়ায়, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আর প্রশাসনের কোণায় কোণায় ! দমদমে নিজের খরচে ৮ জন বাউন্সার রেখেছেন মাসিক ১৫ হাজার টাকা মাইনেতে। তারা নাকি জনপ্রতিনিধি। কোথা থেকে আসে এত টাকা? মনে পড়ে ম্যাডাম, ‘নবান্নে একদিন এক সাংবাদিক আপনাকে একথা বলেছিলেন। আর তাকে আপনি কী বলেছিলেন ছেলেটা বড় দুষ্টু হয়ে উঠেছে’! সামান্য পঞ্চায়েতের প্রধান, তাঁর নিজের নামে নয়, স্ত্রীর নামে এক কোটি টাকার ‘ফিক্সড ডিপোজিট করার সামর্থ্য কোথা থেকে পায় ? আপনার এই গুণধরটি চৌধুরী মোহন জটুয়ার জন্য ৯টি বুথ লুঠ করে বিরোধীশূন্য করে তাকে জিতিয়ে দিয়েছেন। আপনি তার জন্য অনেক করেছেন আর সেও আপনার কাজ উদ্ধার করে দিয়েছে। ম্যাডাম, এই সেই ‘ফ্রাঙ্কেন্সটাইন।
ভবিষ্যতে পারবেন তো তাকে সামলাতে? ২০০৯ সালে যখন আপনি রেলমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় ব্যবসায়ী মায়াঙ্ক জালান আপনার এক পোষা সাংবাদিকের সাহায্যে আপনার বাড়িতে এসেছিল। বন্ধ ঘরে একাকী দেড় ঘণ্টা ধরে তার সঙ্গে আপনি ‘ডিল’ করেছিলেন। রাজধানীসহ সমস্ত ট্রেনে তার কোম্পানি রেলে ঠাণ্ডা পানীয় সরবরাহের ঠেকা পেয়েছিল। সেই ‘জালান কোম্পানিকে ৪০০ কোটি টাকার মেট্রো ডেয়ারি মাত্র ৯০ কোটিতে রাজ্য সরকার বিক্রি করেছিল। আপনারই মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অসহায় ভাবে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, সেই ঘটনার কথা ‘দিদির ইচ্ছাই শেষ কথা’।
মনে পড়ে, বাম জমানায় সঞ্জীব গোয়েঙ্কা যখন বিনা নোটিশে হঠাৎ করে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিলেন, প্রতিবাদে আপনি ফেটে পড়ে সি.ই.এস.সি-র অফিস ঘেরাও করেছিলেন? সঞ্জীববাবু আপনার পোষা সংবাদপত্রের মালিককে নিয়ে নিউ আলিপুরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গোপন আস্থানায় আপনার সাথে ডিল’ করেছিলেন। তারপর গত ১০ বছরে আপনি কি আর কখনও আকাশছোঁয়া বিদ্যুতের দামের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ করেছেন? পাশের রাজ্য বিহারে যেখানে বিদ্যুৎ এক ইউনিট ২.৩০ পয়সা, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ৬.৩০ পয়সা! জনগণ বোঝে না আপনার ‘সততার প্রতীকের রহস্যের কথা? আপনার ৮ বছরের রাজত্বে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। আপনার নীরবতার রহস্যটা কী বলবেন দয়া করে ? আগে নিজের ঘর পরিষ্কার করুন ম্যাডাম! এক অভিষেক ভাইপোর কারবারে আপনি নাজেহাল, পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে উঠেছে এরকম অসংখ্য ভাইপো আর ভাইয়েরা। তাদের সামলাবেন কী করে? আপনিই তো প্রতি ক্লাবে ২ লক্ষ টাকা করে দিয়ে সরকারি টাকায় আপনার বেসরকারি গুন্ডা পুষে রেখেছেন। বিনিময়ে তারা আপনাকে গণতন্ত্রের মোড়কে বিরোধীশূন্য করে ভোটে জিতিয়ে দিচ্ছে। জনগণ ঠিকই মনে রেখেছে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ ভোটারকে আপনি বুথেই আসতে দেননি, ভোট দেওয়া তো দুরের কথা !নারী নির্যাতন, বুথ দখল, রাজনৈতিক হত্যাকে (৫২ জন) আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছেন! প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছেন। কাউকে গাঁজা, বেআইনি অস্ত্র, মদ ইত্যাদি বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করছেন! ভোটে হেরে যাওয়ার পর, জল সরবরাহ বন্ধ করে, পাড়া থেকে সরকারি নলকূপ উপড়িয়ে ফেলে, রাস্তার ইট পর্যন্ত খুলে ফেলছেন। আপনার মতো স্বৈরাচারী রাজনৈতিক নেতা ভূভারতে কেন সারাবিশ্বেও খুঁজে পাওয়া যাবে না!
দশটি আঙুল-সহ পুরো হাতটাই হিরে জহরতে মোড়া, গলায় কুকুরের উপযোগী সোনার মোটা চেন লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রমোটার-কাম-তৃণমূলের নেতা! আহা! কী আপনার সততার স্বরূপ। আগে যারা বিড়ি মুখে সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াতো, এইসব দাপুটে নেতারা হঠাৎ কোথা থেকে বি.এম.ডব্লুউ গাড়ি পেল, বলুন তো? রাজারহাটে কোটি টাকার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, দীঘার মন্দারমণিতে হোটেল, লাটাগুড়িতে রিসর্ট কিনেছেন ভাইপো। সেইজন্যেশাহরুখ খান আপনার ব্র্যান্ড আম্বাসাডর। আর তাই আপনিই মোদীবিরোধী ব্রিগেডের প্রধান মুখ, তাই না? ১০০ দিনের ‘জব কার্ডে’ কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার টাকা। পেতে কমিশন, এমনকী বিধবা বা বার্ধক্য ভাতা পেতেও কমিশন! বাড়ি করলে লোহার রড-সিমেন্ট কিনতে আপনার সিন্ডিকেট রাজ’, সারা রাজ্যটাই চালাচ্ছেন কমিশনে! আজ পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ আর প্রশাসনকে করেছেন আপনার দলদাস। আই পি এস অফিসার বিনীত গোয়েলকে ডাকছেন এই বিনীত’ বলে, পচানন্দকে ডাকছেন ‘পচাদা বলে! সারদা চিটফান্ডের আসামি রাজীবকুমারের সমর্থনে মেট্রোর সামনে বসছেন ধরনায় ! এই রাজ্যে সরকারি উর্দিপরা পুলিশ ও সিভিকবাহিনী তৃণমূলের ক্রীতদাস! মানুষ বুঝতে শিখেছে। তাই ৪২ থেকে ২২ নেমে এসেছেন। চুরি, ডাকাতি, লুঠ এখন শিল্পের পর্যায়ে নেমে এসেছে। আপনার দৌলতে ! আপনার ভাই আর ভাইপোরা সেইসব শিল্পের রূপকার, তারাই আজ সফল শিল্পপতি! টাটা বিদায় নিয়েছেন সিঙ্গুর থেকে, আপনি এনছেন চপ তেলেভাজার শিল্প! আপনি মুসলমানদের তোষণ করবেন, হিন্দুদের দুর্গাপূজা, সরস্বতীপূজা বন্ধ করবেন, ১০,০০০ মাদ্রাসাকে সরকারি অনুদানের আওতায় আনবেন, হাইকোর্টের আইন অমান্য করে মুসলমানদের আজানের জন্য ‘মুয়াজ্জিন ভাতা’ দেবেন, উস্তী বাজার, কালিয়াচক, বাদুরিয়া, ক্যানিং আর বসিরহাটে দাঙ্গা লাগিয়ে, ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আউড়াবেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য রেশনকার্ড প্রদান করবেন, আর হিন্দুরা আপনাকে ফুলচন্দন দিয়ে পূজা করবে? ইভিএমে জিতে, গুন্ডামি করে বুথ দখল করে ২২টা আসন পেলেন, এখন সেই ইভিএমে দোষ দেখছেন। চাইছেন ব্যালটে ভোট। মানে আরও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ভোট চুরি আর ছাপ্পা ভোট যা ছিল সিপিএমের অনন্য আবিষ্কার, সেটায় ফিরে যেতে ! অর্থাৎ আপনিও ৩৪ বছর সেই একই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখল করে থাকবেন। কান পাতলে শুনতে পারবেন অত্যাচারিত জনগণ বলছে, আপনি সিপিএমের চেয়েও সাংঘাতিক অত্যাচারী—এই তৃণমূল আর না, আর না। ভাবুন ম্যাডাম, আপনার ওই গোঁয়ার খুনি গুন্ডা ভাইপোগুলোর কী হবে আপনি চলে গেলে? তারা যে অকালে মারা যাবে না খেতে পেয়ে! রামের নামে আপনার এত আপত্তি কিন্তু আপামর হিন্দুরা সমস্ত বিপদ ওই রাম নামেই খণ্ডন করে এসেছে এতদিন।
তাই সমস্ত হিন্দুদের কাছে, যারা তৃণমূল, কংগ্রেস অথবা সিপিএম করছেন, একটা সবিনয় অনুরোধ থাকল! একবার ভেবে দেখবেন, পশ্চিমবঙ্গের করুণ অবস্থাটার কথা! দেখুন লাভ, ল্যান্ড এবং ড্রাগ-জিহাদ আর নিরন্তর একমুখী ধর্মান্তরকরণ মানে শুধুই হিন্দু থেকে মুসলমান অথবা খ্রিস্টান হওয়া ! শুধু হিন্দু মেয়েদেরকেই টার্গেট করা আর হিন্দু যুবকদেরই মেরে ফেলা হয় কেন! মন্দিরের তুলনায় কটা মসজিদ আছে। আপনার আশেপাশে? অপরাধী বা হত্যাকারী মুসলমান আর অত্যাচারিত বা মৃত হিন্দুর সংখ্যার অনুপাত কত? কখনও শুনেছেন কোনো মৌলবি জেলে গেছে? জানেন, হজের সাবসিডি আপনি দিচ্ছেন? প্রতিটি মোড়ে মসজিদ! দিনে পাঁচবার আজানের সাবধান বাণী ! জানবেন, আপনি মূর্তিপূজক মুসরিক বা কাফের! সুতরাং আপনি একজন মুসলমান খুনির থেকেও জঘন্য! আপনার জন্য দোঝখের আগুন অপেক্ষা করছে! হিন্দু মানেই বিজেপি। তাই দ্বিখণ্ডিত ভারতেও আপনার ভোট দেবার অধিকার নেই। উদাহরণ ডায়মন্ড হারবার লাভপুর। আপনার জেহাদি ভাইয়েরা ডাক্তার পেটাচ্ছে। হাসপাতালে ভাঙছে। আর দেরি নয়, সমস্ত হিন্দুসমাজের সংগঠিত হওয়া জররি। আমাদের প্রধানশত্র হিন্দুনামধারী অথচ কট্টর হিন্দুবিদ্বেষী ভ্রষ্ট ও লোভী রাজনেতারা। ২১টি বিরোধীদল সংখ্যালঘু ভোটের ভিখারি। তারা মুসলমানদের ‘আল তাকিয়ার কথা জানেন না। তারা সাময়িক সুখের আর সম্পদের কথা চিন্তা করে, সনাতন হিন্দু ধর্মকে, মাতৃভূমিকে। আর হাজার বছরে সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে, ঊষর মরুভূমির দেশ আরবের পদদলিত ক্রীতদাস হতে চাইছেন। তাই তারা হিন্দুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে চলছে বছরের পর বছর ধরে। বর্তমানে যে ভাবে মুসলমানদের জন্মহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, অচিরেই নিজ দেশেই হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। আজ আর গান্ধী-নেহরু কেউ নেই কিন্তু তাদের কুকীর্তির দায়ভার আমাদেরকেই আজ বহন করতে হচ্ছে। আপোশ করে, তোষণ করে সমস্যার সমাধান হবে না।
ডাঃ আর এন দাস
2019-06-24