বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল তাঁকে প্রার্থী করার পর পরই একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিন তালাক প্রথার বিরোধিতা করেছিলেন অভিনেত্রী নুসরত জাহান। স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, তিন তালাক বন্ধে আইনকে তিনি সমর্থন করেন। তা নিয়ে নুসরতের তীব্র সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন মুসলিম সমাজের কট্টরপন্থীরা।
আট দিন বাদে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বসিরহাটে ভোট। তার আগে নুসরতকে পাশে নিয়ে ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিদি অবশ্য ‘তিন তালাক’ শব্দ দুটি মুখে আনেননি। শুধু বলেন, “আমি জানি নুসরতের একটা বক্তব্য নিয়ে কারও কারও দুঃখ আছে। কিছু মনে করবেন না। ছোট্ট মেয়ে। ও কি সব বোঝে? আমার পার্টির তো একটা স্ট্যান্ড আছে। পার্টির স্ট্যান্ড ছাড়া ও কখনও কিছু বলবে না। এটুকু মাথায় রাখবেন।” এর পরই মমতা জনতাকে আশ্বস্ত করতে চেয়ে আরও বলেন, “আমাদের দলের স্ট্যান্ডটা আপনারা জানেন তো! সুতরাং আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। নুসরত দলের আদর্শ মেনেই চলবে। ওকে কেউই একজন ইনসিস্ট করেছিল। ও বেচারা সাবজেক্টটাই জানে না। আর আমাদের দলের সিস্টেমটা হচ্ছে আমরা সাবজেক্টটা বলে দিই।” দিদির আশ্বাসবাণী শুনে সভায় হাততালি পড়ে।
মমতার এই কথাগুলোর মধ্যে কোথাও স্পষ্ট ভাবে তিন তালাক শব্দ দুটির উচ্চারিত না হলেও বসিরহাটের মানুষ জানেন, নুসরতের কোন কথায় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তাঁর মন্তব্যকে সামনে রেখে সমালোচনার তোপ দাগতে শুরু করেছিলেন মৌলবী ও পীরজাদাদের একাংশ। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে নুসরত বলেছিলেন, “তিনটে শব্দ বলে দিলে যে একটা সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়ে যেতে পারে বা একটা মেয়ে হেনস্থা হতে পারে, এটা কিন্তু ঠিক নয়। তিন তালাক প্রথা বন্ধ করতে নতুন আইনকে আমি সমর্থন করি”।
প্রসঙ্গত, তিন তালাক প্রথা বন্ধ করতে নরেন্দ্র মোদী সরকার যখন উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন তার বিরোধিতা করে ধর্মতলায় সভা করেছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের এক সংগঠন। সেই সভায় তৃণমূলের তরফে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সাংসদ ইদ্রিস আলি।
কিন্তু পরে সুপ্রিম কোর্ট এক মাইলফলক রায়ে জানিয়ে দেন, মুসলিম সমাজের তাৎক্ষণিক তিল তালাক প্রথা সংবিধান বিরোধী। তা নিষিদ্ধ করতে সরকারকে আইন প্রনয়ণ করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পরেও তিন তালাক নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান যে বদলায়নি তা স্পষ্ট। তবে এ দিন দেখা গেল, দলের চাপে অবস্থান বদলাতে বাধ্য হয়েছেন নুসরত জাহান। বসিরহাটের মঞ্চে মমতা যখন বলছেন, ও সাবজেক্টটাই বোঝে না, তখন দৃশ্যত অপ্রস্তুত মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন নুসরত।
বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী তথা দলের রাজ্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা ও তোষণের রাজনীতির এটা চূড়ান্ত নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য যা যা করার দরকার মমতা তা করছে”। অন্যদিকে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব থেকে দুর্ভাগ্যজনক হল, একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মহিলাদের সামাজিক ক্ষমতায়ণকে আটকে দিচ্ছেন। স্রেফ রাজনীতির জন্য দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন মুসলিম মহিলাদের। এই অপরাধের শাস্তি মেয়েরাই দেবেন ভোটে।”