চোদ্দর লোকসভায় ৩৪টি আসন ছিল। উনিশে ৪২-এ ৪২ করার ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪২ তো হয়ই নি, উল্টে আরও আসন খুইয়ে তৃণমূল ২২-এ এসে দাঁড়িয়েছে। কী কারণে হলো এই বিপর্যয়? কে দায়ী? এই নিয়ে জবাবদিহির জন্য শনিবার বিকেল ৪টেয় দলের ৪২ প্রার্থী ও সব জেলা সভাপতিদের নিজের কালীঘাটের বাড়িতে ডেকে পাঠালেন মমতা।
বৃহস্পতিবার ভোট গণনা শুরু হতেই পরিষ্কার হতে থাকে ট্রেন্ড। দেখা যায় তৃণমূলকে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে বিজেপি। এমনকী কিছু জায়গায় তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতারাও পিছিয়ে আছেন। আর এই ট্রেন্ড সামনে আসতেই রাজ্যজুড়ে বিজেপি সমর্থকদের উচ্ছ্বাস সামনে আসতে থাকে। একটু বেলার দিক হলেই বোঝা যায়, তৃণমূলের বেশ কিছু আসন এ বার কেড়ে নিতে চলেছে বিজেপি।
তারপরেই টুইট করেন মমতা। টুইটে তিনি লেখেন, “সব পরাজিতরাই হেরো নয়।” সেই সঙ্গে তিনি এ-ও লিখেছেন, “পুরো গণনা শেষ হোক, ভিভি প্যাট মিলিয়ে দেখা হোক। তারপর পর্যালোচনা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব।” মাঝ দুপুরে এমন টুইট দেখে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই ভাবতে থাকেন, কী ইঙ্গিত করতে চাইলেন তৃণমূল নেত্রী? শেষ দফার ভোটের প্রচার থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন ইভিএম মেশিনে জালিয়াতি হতে পারে। সরাসরি বিজেপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, ওরা মেশিন বদলে দিতে পারে। দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন স্ট্রং পাহারা দিতে। কিন্তু তারপরেও এই ধরণের ফলে কি ফের ইভিএম মেশিনের দিকেই আঙুল তুললেন দিদি।
এই টুইট করার পর থেকে অবশ্য সারাদিন তৃণমূল সুপ্রিমোকে দেখা যায়নি। দেশে বিজেপির কাছে দুরমুশ হওয়ার পরেও সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন রাহুল। মোদীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের উৎসাহ দিয়েছেন। এমনকী এ রাজ্যে একটিও আসন না পাওয়ার পরেও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন বাম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। অন্যদিকে মমতা দুপুর সাড়ে ৩টের সময় সাংবাদিক সম্মেলন করবেন বলেও পরে তা করেননি। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হননি সারাদিন। এমনকী তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তা ছিল সুনসান। সন্ধ্যার দিকে দেখা যায়, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়িতে ঢুকছেন। এ ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি।
তবে শনিবার সব প্রার্থী ও জেলা সভাপতিদের জরুরি তলব করার পর থেকেই জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। তবে কি দলের অন্দরে বেশ কিছু পরিবর্তন করতে চাইছেন মমতা। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মমতা নির্বাচনী প্রচারে ৪২-এ ৪২ করার ডাক দিয়েছিলেন। নিশ্চয় জেলা স্তরে তাঁর কাছে এমনই ভরসা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফল বেরাতেই তিনি বুঝে গিয়েছেন তৃণমূল স্তরে দলের সংগঠন দুর্বল হয়েছে। আর তাই হয়তো সংগঠনে রদবদলের প্রয়োজন। এই কারণেই কি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার আগে এই জরুরি তলব মমতার? উত্তর মিলবে শিগগির।