পশ্চিমবঙ্গের একাংশ মাদ্রাসা জঙ্গি কার্যকলাপের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে বলে দু’দিন আগে সংসদে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি। এ ব্যাপারে বাংলার দুই সাংসদের প্রশ্নের জবাবে সে কথা সংসদে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

কেন্দ্রের তরফে সেই মন্তব্য বিভ্রান্তিকর, অসত্য এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ বক্তব্য, মাদ্রাসা মানেই জঙ্গি শিবির তা বলা যায় না।

শুক্রবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, “এ বিষয়ে সংসদে প্রশ্ন উঠেছিল। গত ২৮ জুন তার জবাব কেন্দ্র আমাদের থেকে জানতে চেয়েছিল। আমরা জানিয়েছি, প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু আমাদের জবাব না দিয়ে কেন্দ্র নিজেদের মতো করে জবাব দিয়েছে”। মমতার কথায়, এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই হচ্ছে। আমাদের বক্তব্য জানিয়ে ওরা নিজেদের মতো করে যা ইচ্ছে বলছে। এটা ঠিক না।

যদিও রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে ঠিক কী জবাব দিয়েছিল তা এ দিন বিধানসভায় জানাতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি বলেন, “যারা সমাজ বিরোধ—তারা সমাজ বিরোধী, তাদের কোনও ধর্মের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা ঠিক নয়। মাদ্রাসা মানেই টেররিস্ট হাব তা বলা যায়না”। তাঁর কথায়, ধর্মের ভিত্তিতে একজন আরেক জনকে সন্ত্রাসবাদী বলছে, এটা এ ভাবে বলা যায় না। যদি কোথাও কোনও ঘটনা ঘটে তা হলে কেন্দ্র আমাদের জানাক। আইন সবার জন্য এক। কেউ দোষ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ধর্মের নামে ভেদাভেদ করা ঠিক না”।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-এর (জেএমবি) চার জনকে শিয়ালদহ থেকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। এদের তিন জনই বাংলাদেশের। কলকাতায় ধৃত জেএমবি সদস্যদের কাছ থেকে ইসলামিক স্টেট-এর মতাদর্শের কিছু প্রচার পুস্তিকা পাওয়া গিয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছিল। জানা গিয়েছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য হল বাংলাদেশে আরও প্রভাব বাড়ানো। কিন্তু সেখানে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হওয়ায় তারা পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে।

ওই ঘটনার পর পরই সংসদে মাদ্রাসা সম্পর্কে তথ্য জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী। বাংলার দুই বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও সুকান্ত মজুমদারের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তথ্য অনুযায়ী জেএমবি বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের কিছু মাদ্রাসাকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। মাদ্রাসাগুলি পড়ুয়া ভর্তি করে তাদের মগজধোলাই করে জেহাদের মন্ত্রে দীক্ষিত করার কাজ চলছে। রেড্ডি জানান, ‘‘ওই সব গোয়েন্দা তথ্য রাজ্যকে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী সংসদে ওই তথ্য জানানোর পর তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল। লোকসভায় তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, কোথা থেকে এ সব পাচ্ছে? এই সব তথ্য কি রাজ্য সরকারের সঙ্গে যাচাই করে নেওয়া হয়েছে? অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেছিলেন, “বাংলায় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। খাগড়াগড় কাণ্ডের পরে আমরা বলেছিলাম, কোনও একটা মাদ্রাসা থেকে হিংসা ছড়ানো হচ্ছে, তার একটা অন্তত উদাহরণ দিন। সরকার গিয়ে তাতে তালা লাগিয়ে দেবে। কিন্তু ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি একটিও উদাহরণ দিতে পারেনি।’’ এর পর শুক্রবার আবার বিধানসভায় এ বিষয়ে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তুন বসু বলেন, “শুধু মাত্র সংখ্যালঘু তোষণের জন্য বাস্তবকে অস্বীকার করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে মানুষের জীবন বিপন্ন হলেও ওনার কোনও আপত্তি নেই। কারণ, যেনতেন ভোটে জেতাই ওনার উদ্দেশ্য। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এর থেকে বিপজ্জনক আর কিছু হতে পারে না”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.